ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
ভোলায় ক্রেতারা বলছেন ‘সিন্ডিকেটের কারসাজি’, বিক্রেতারা বলছেন ‘চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম’

নিত্যপণ্যের দামে জনভোগান্তি

Daily Inqilab মো. জহিরুল হক, ভোলা থেকে

১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ভোলায় বিক্রেতাদের নানান বাহানায় প্রতিদিনই বাড়ছে আলু, সবজি, মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজি। বিক্রেতারা বলছেন চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম।

বাজারে নতুন শাক সবজির আগমন ঘটলেও নিত্যপন্যনের দাম তেমন একটা কমে নাই। গত ১ সপ্তাহের ব্যাবধানে ভোলার বিভিন্ন বাজারের নিত্যপণ্যের দাম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভোলার বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। তবে নিম্নগামী পেঁপের দাম। লাগামহীন কাঁচামরিচ, আলু, পেয়াজের দাম। বেড়েছে চাল, আলুসহ ভোজ্যতেলের দাম।

বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ৮০/৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাচাঁমরিচ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় বরবটিতে বেড়েছে ৩০ টাকা আর কাচাঁমরিচে বেড়েছে প্রায় ১০০ টাকা। নতুন শাক সবজির বাজারে আসলে দাম তেমন একটা কমে নাই।

পটল, মুলা, করলা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার ভেতর। তবে টমেটো ও গাঁজর বিক্রি হচ্ছে ১৫০ ও ১৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ টাকা। ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আলু দাম। আলুর দাম আকাশ চুম্বি প্রতি কেজি ৬০/৬৫ টাকা।

রসুনের দাম স্থিতিশীল। পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। বেড়েছে চায়না আদার দাম, বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৩৫০ টাকায়। যা সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৭০ টাকা।

একই চিত্র চাল ও মাছের বাজারে। প্রকারভেদে প্রতিকেজি মোটা চাল ৫৭ থেকে ৬০ টাকা ও মাঝারি চাল (আটাশ) বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৪ টাকায়।

খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রতিকেজিতে ৬ থেকে ৮ টাকা। কোয়ালিটি খুচরা ১৬৫ টাকা ও সুপার সয়াবিন বিক্রি করা হচ্ছে ১৭৩ থেকে ১৭৫ টাকায়। ২২ দিন নিষেধাজ্ঞার পর ইলিশ ধরা শুরু করলেও কাঙ্খিত মাছ না পাওয়ায় সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। বেড়েছে সব প্রকার নদী ও সামুদ্রিক মাছের দাম। বাড়েনি পুকুরে চাষ করা মাছসহ গরু ও খাসির মাংসের দাম।

সাধারণ মানুষ অভিযোগের সুরে বলেন, পতিত সরকারের সময় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে জানতাম, কিন্তু বর্তমান সরকার কি করছে যার কারণে নিত্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না। নাকি সব সরষের ভেতরেই ভুত কাজ করছে। বাজারের নিত্যপণ্যের দাম মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাচাঁবাজারসহ দিন দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে, ক্রয় করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।

ক্রেতারা আরও জানান, ভোলার নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করতো তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতো বলেও জানান ক্রেতারা।

সবজি বিক্রেতা কামাল, আলমগীর, বাহাদুর বলেনÑ সব মালের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও টমেটো, গাজর ও কাঁচামরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে বাইরে। বাজারে মালের সরবরাহ কম, চাহিদা বেশির কারণে দাম বাড়ে। অনেক সময় আড়ৎ থেকে যে দামে কিনে আনি সে দামেও বিক্রি করি, তারপরও কাস্টমারের সঙ্গে আমাদের মনোমালিন্য হয়। তবে আমরা খুচরা বিক্রেতারা কোনো সিন্ডিকেট করি না। আড়ৎ থেকে কেনা দামের ওপর নির্ভর করে খুচরা বাজারে বিক্রি করি। সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়ে আড়তদাররা জানেন, আমরা জানি না।

সিন্ডিকেটের কারসাজির বিষয়টি অস্বীকার করে পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর দোষ চাপিয়ে আড়তদাররা বলছেন, বিভিন্ন জেলায় বন্যা, অতিবৃষ্টির কারণে ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত অনেক সবজি নষ্ট হওয়ায় ভোলার বাজারে কাঁচামালের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে যশোর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমরা কাঁচামাল মাল কিনে এনে ভোলার বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করি। তাদের দাবি, ভোলার বাজারে স্থানীয় পণ্যের জোগান বাড়লে সংকট কেটে যাবে, একই সঙ্গে দামও কমবে।

তবে ভোলা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. মোস্তফা সোহেল জানান, আমাদের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাজার মনিটরিং চলমান রয়েছে। এরপরও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের চেষ্টা করেন তাহলে কৃষি বিপণন আইনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেনÑ কোন রকম বাজার সেন্ডিকেট করতে দেয়া হবে না। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। যাতে করে নিত্যপন্যের দাম বাড়তে না পারে। নিত্যপন্য নিয়ন্ত্রনে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইননুসারে ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

গৌরীপুরে ৬ ইটভাটাকে জরিমানা
মোরেলগঞ্জে একটি ব্রিজের জন্য ১৬ গ্রামবাসীর ভোগান্তি
সিরাজদিখানে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই
হাত বদলে দাম বাড়ে সবজিতে নিরুপায় ক্রেতা
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র দাবিতে ইবিতে গণসংযোগ
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত