দোকানে চলে সরকারি কার্যক্রম
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম
লক্ষ্মীপুরের ৫৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২২টিই নেই নিজস্ব ভবন। ঘর ভাড়া নিয়ে কোনো রকমে চলছে এসব ইউনিয়নের কার্যক্রম। এতে পরিষদের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, দুর্ভোগে পড়ছেন সেবা নিতে আসা লোকজন। নিজস্ব ভবনের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে জানালেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নিজস্ব ভবন না থাকায় প্রশাসনিক কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বিঘিœত হচ্ছে নাগরিক সেবাদান।
তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, জায়গা নির্ধারণ হলে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লক্ষ্মীপুর সদরের উপশহর দালাল বাজার এলাকায় একটি ভাড়া দোকান ঘরে রয়েছে দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়। নিজস্ব ভবন না থাকায় এই ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম চলছে এই ভাড়া করা দোকান ঘরে। এতে গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ ব্যাহত হচ্ছে দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক নানা কাজ। ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা কোনো রকমে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম।
একইভাবে ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ, সাহেবের হাট, পাটোয়ারীর হাট, চরকালকিনি ও সদরে রসুলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদসহ জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। সবমিলিয়ে জেলার ৫টি উপজেলায় ৫৮টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ২২টিরই নেই নিজস্ব ভবন।
ইউনিয়নবাসীর উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনার জন্য নিবিড়ভাবে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন। এখান থেকেই পরিষদের গ্রাম-আদালত ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী ভবন না থাকায় ভাড়াকৃত দোকানে কিংবা বাসাবাড়িতে গোডাউনসহ দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতে হচ্ছে। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ ইউনিয়ন পরিষদের দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজ। এতে দূর-দূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা লোকজনও পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা কোনো রকমে ছোট কক্ষ নিয়ে চালাচ্ছেন তাদের কার্যক্রম। এতে জন্ম ও মৃত্যুসনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও ওয়ারিশি সনদসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে বেগ পেতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্যদের পৃথক কক্ষে বসে অফিস করার কথা থাকলেও কোথাও কোথাও সবাই একটি কক্ষে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম। আবার এসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বদল হলে, বদলে যায় পরিষদের ঠিকানাও। নির্দিষ্ট ভবন না থাকায় চেয়ারম্যানরা নিজেদের বাসা অথবা পছন্দমতো স্থানে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রাদি যেমন হারানোর ভয় থাকে, তেমনি সেবা প্রত্যাশীরাও শিকার হন চরম দুর্ভোগের। পরিষদের ওইসব অস্থায়ী কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করার মতো জায়গাও থাকে না সেবাপ্রত্যাশীদের।
সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা ইফতেখার সাকিব বলেন, ‘ডিজিটাল সেন্টারের কক্ষটি একেবারে ছোট হওয়ায় সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কক্ষটিতে আমাদেরই ঠিকমতো বসার জায়গা হয় না, এজন্য সেবা নিতে আসা লোকজনকে সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। কষ্টের শিকার হতে হয় সেবা প্রত্যাশীদেরও।
একই ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমার নিজের একটা অফিস রুম নাই, চেয়ারম্যান সাহেবের আলাদা কোনো রুম নাই, ডিজিটাল সেন্টারের জন্যও আলাদা কোনো কক্ষ নেই। বর্তমানে জনগণ যথেষ্ট ভোগন্তির শিকার হচ্ছেন।’
কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, এই ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বাস। এই ইউনিয়নে স্থায়ী ইউপি ভবন না থাকার কারণে ঠিকমতো নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। এছাড়া যখন যিনি চেয়ারম্যান হন, তখন তিনি নিজের সুবিধামত জায়গায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় স্থাপন করেন। এতে করেও ভোগান্তি বাড়ে ইউনিয়নবাসীর। এমন বাস্তবতায় স্থায়ীভাবে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণের দাকিব জাান তিনি।
দালাল ইউনিয়নের বাসিন্দা কুলছুমা বেগম বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন না থাকায় জন্ম ও মৃত্যুসনদ, নাগরিকত্ব সনদ ও ওয়ারিশি সনদ নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকতে হয় তাদের। ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে তাদের। সার্ভার জটিলতার কারণে অনেক সময় দিনের পর দিন সেবা পেতে অপেক্ষায় থাকতে তাদের।
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা আছমা আক্তার বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে আসলে বসাতো দূরের কথা, দাঁড়ানোর জায়গাও পাই না। জনসংখ্যা হারে পরিষদের কক্ষের অভাবে ঠিকমতো সেবাও দিতে পারেন না তারা। এতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের।’
সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, লক্ষ্মীপুরের উপশহর হচ্ছে দালাল বাজার। এই বাজারের প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদ। অদৃশ্য কারণে এখনও দালাল বাজার ইউনিয়ন পরিষদের স্থায়ী কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, গত ২০ বছর ধরে একটি দোকা ঘরে চলছে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম, যা রীতিমতো লজ্জাকর বিষয়। সেবাপ্রত্যাশীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, জণগণ যাতে সঠিকভাবে সেবা পায় সেজন্য দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মির্জা আশরাফুজ্জামান রাসেল জানান, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন না হওয়ায় গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ নানা সমস্যা পোহাতে হয় তাদের। পরিষদের বিভিন্ন মালামাল অরক্ষিত থাকে। এছাড়া স্থায়ী ভবন না থাকায় বাসিন্দারাও পড়েছেন বিপাকে। নাগরিকদের কৃষি ও স্বাস্থ্যসহ পরিষদ কমপ্লেক্স থেকে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও কক্ষ সংকটের কারণে তা পাচ্ছেন না ইউনিয়নবাসী।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানালেন, ইউপি ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এরইমধ্যে ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব কয়টি ইউপি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষেও বিপর্যস্ত ইউনাইটেড
‘ন্যায়বিচারকে হত্যা’ করা হয়েছে: পিটিআই
নতুন ভূগর্ভস্থ নৌ ঘাঁটি উন্মোচন ইরানের
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে অনেক আফ্রিকান সেনা
পাওয়ার প্ল্যান্টের ৩৬০ মেট্রিকটন তেল ডাকাতি
বাংলাদেশি কর্মী নিতে প্রস্তুত রাশিয়া: রাষ্ট্রদূত
রাজনৈতিক দলগুলো বেশি কিছু সংস্কার না চাইলে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন: প্রেস সচিব
এবার ওলমোর ইনজুরি দুঃসংবাদ বার্সার
কুড়িগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্বে ইমন ও আলামিন
এসএমই ফাউন্ডেশনের নতুন চেয়ারপার্সন মো. মুশফিকুর রহমান
বিয়ের ওপর কর বাতিলের দাবি
শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছে আ.লীগ : মির্জা ফখরুল
নামাজের প্রথম কাতারে জামাত পড়াবস্থায় অজু ভেঙ্গে যাওয়া প্রসঙ্গে।
কয়েক মিনিটে বাংলাদেশ দখল করে নিতে পারে ভারত: শুভেন্দু অধিকারী
নরসিংদীতে নিখোঁজের ৫ দিন পর নদীতে পাওয়া গেল স্কুল ছাত্রের লাশ
বিএনপি : দেশবাদ যার রাজনীতির মূল কথা
পাহাড়ি উপজাতিরা আদিবাসী নয়
সংস্কার প্রতিবেদন : জাতির নতুন অধ্যায়ে অভিযাত্রা
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগে জোর দিতে হবে
ভারতে ৫ বছর সাজাভোগ করে দেশে ফিরলেন স্বামী-স্ত্রী