অর্থপাচার ঠেকাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:১৪ পিএম
দেশে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়া ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বহুবিধ পন্থায় অর্থ পাচারের প্রতিযোগিতা। গত দেড় দশকে দেশ থেকে প্রায় ১০ লক্ষকোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে হয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব অর্থের বেশিরভাগ পাচার হয়েছে সুইস ব্যাংক, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, সিঙ্গাপুর, কানাডা-আমেরিকা, ভারত ও মালয়েশিয়ায়। পরিবর্তিত বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের নিরাপত্তা ও আইনগত জটিলতার প্রশ্ন থাকায় এখন অর্থ পাচারের নিরাপদ জায়গা হিসেবে দুবাইকে বেছে নিয়েছে পাচারকারিরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দুবাইয়ে অর্থপাচারের সাথে জড়িত বলে কথিত ৪৫৯ জনের একটি তালিকার কথা বলা হয়েছে। যদিও তালিকাভুক্তদের নাম এখনো প্রকাশ্যে আসেনি। দুর্নীতি দমন কমিশন এই তালিকা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বলেও জানা যায়। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের উদ্ধার করা তথ্য বিশ্লেষণ করে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৫৯ জন বাংলাদেশী দেশে তথ্য গোপণ করে দুবাইয়ে ৩১ কোটি ডলারের প্রপার্টি ক্রয় করেছে। এখানে ২০২০ সাল পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। সম্পদ ক্রয়ের প্রকৃত অংকটি আরো অনেক বড় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। আর ২০২৩ সালে এসে সে অংক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য আমাদের কাছে নেই।
ইউক্রেন যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের নতুন মেরুকরণের কারণে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় পাচার হওয়া অর্থ এখন দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে স্থানান্তর হতে শুরু করেছে। কানাডা ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, বিনিয়োগ ও বেগম পাড়ায় প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে সরকারি আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। বেশিরভাগ বেনামে বা স্ত্রী-সন্তানসহ নিকটাত্মীয়দের নামে সম্পদ গড়েছেন বলে জানা যায়। ঘুষবাণিজ্য, কমিশনবাণিজ্য, ব্যাংকঋণ জালিয়াতি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক তৎপরতার মাধ্যমে সম্পদ অর্জন করে বিদেশে পাচার করে পাচারকারীরা দেশে বহাল তবিয়তে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। দেশে ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের জন্য মূলত এরাই দায়ী। পাচারকৃত অর্থের অর্ধেকও যদি পরিকল্পনামাফিক দেশে বিনিয়োগ করা হতো তাহলে দেশে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হতো এবং ব্যাংকগুলোতে ডলারের এমন সংকট দেখা দিতনা। নিয়ন্ত্রণহীন অর্থপাচারের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রির্জাভে টান পড়েছে। জ্বালানি তেল-গ্যাস, মূলধনী যন্ত্রপাতি, রফতানি পণ্যের কাঁচামাল, ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি পণ্য সামগ্রি আমদানির এলসি ব্যয় নির্বাহে ব্যাংকগুলোর বর্তমান অক্ষমতা দীর্ঘদিনের অর্থপাচারেরই ফল।
কারা কিভাবে অর্থ পাচার করছে তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ে কিছু বাগাড়ম্বর করলেও অর্থপাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় নজরদারিসহ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি দমনের নামে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে বিশেষত রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে। বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখে চুনোপুটি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে দুদকের বিরুদ্ধে। দুবাইয়ে অর্থ পাচার ও সম্পদ ক্রয়ের সাথে জড়িত কথিত ৪৫৯ জনের বিরুদ্ধে দুদক তদন্তে নামছে বলে শোনা গেলেও এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির কথা শোনা যাচ্ছেনা। দুদকের নিরপেক্ষতা, সদিচ্ছা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা এবং রাঘব-বোয়ালদের নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতির কারণেই বছরে লক্ষকোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অর্থপাচার বন্ধ করতে হলে প্রথমেই দুর্নীতি, বিচারহীনতা ও নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতির পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের সবই হয়তো অবৈধ বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত নয়, তবে খতিয়ে দেখা দরকার। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিদেশে অর্থ পাচার ও অগাধ সম্পদের মালিকদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যকর রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পানির ট্যাংকে লুকিয়ে ছিলেন আ. লীগের ‘ভাইরাল নেত্রী’ কাবেরী
সাঁথিয়ায় করিমনে ট্রাকের ধাক্কায় তিন কৃষিশ্রমিক নিহত, আহত ৫
ঢাকার সাথে আর কোনও সমস্যা বাড়াতে চায় না নয়াদিল্লি: দ্য হিন্দু
যুক্তরাষ্ট্রে বিপজ্জনক সামুদ্রিক ঢেউ ও টর্নেডোর আঘাত, এক জনের মৃত্যু
সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার পথে সাগরে আটকা পড়া ৭২ পর্যটক উদ্ধার
‘ইন্ডিয়া’ থেকে কংগ্রেসের বহিষ্কার চায় কেজরিওয়ালের দল!
নরওয়েতে বাস দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত, গুরুতর আহত ৪
ঐক্য-সংস্কার-নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু আজ
ইহুদিদের ইউসুফ (আঃ)- এর সমাধিতে নিয়ে গেল ইসরায়েলি সেনারা
কাকরাইলে সাদপন্থিদের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ইয়েমেনে ইসরাইলি হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ডব্লিউএইচও প্রধান
ইসরায়েলি হামলায় ইয়েমেন ও গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি
হেলিকপ্টারে সফর নিয়ে বিতর্ক, ব্যাখ্যা দিলেন আসিফ মাহমুদ
কুমিল্লায় ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
সচিবালয়ে আগুন: সংগ্রহ করা হলো সিসিটিভি ভিডিও
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা
টেস্ট ক্যারিয়ারের রেকর্ডময় ৩৪তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করলেন স্মিথ
জাহাজে ৭ খুন : লাগাতার কর্মবিরতিতে পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকেরা
লেস্টার সিটিকে হারিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে লিভারপুল
ফের্নন্দেসের লাল কার্ডের দিনে ফের হারল ইউনাইটেড