যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন বদল নিয়ে শঙ্কা ও বিভ্রান্তি
১২ মে ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
ট্রাম্প শাসনামলের বিতর্কিত অভিবাসন আইন ‘টাইটেল ফর্টি টু’র মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ মে। তিন বছরের বেশি চালু থাকার পর মার্কিন অভিবাসন নীতিতে নাটকীয় একটা বদল ঘটতে চলেছে এই আইনের মেয়াদ শেষ হবার মধ্যে দিয়ে। বহুল সমালোচিত এই আইন উঠে যাবার মুহূর্তে আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসীদের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সীমান্তে কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের ধারণা আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আইন বদলানোর পর প্রতিদিন দশ হাজার করে অভিবাসীর ঢল নামবে সীমান্তে।
আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে কড়া রোদের মধ্যে শুকনো বালুর বিরান ভূমিতে এখনই শত শত মানুষ শুধু এই আইন উঠে যাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। মঙ্গলবারই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন যে, ‘কিছু সময়ের জন্য সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে’। কারণ মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় ঢোকার জন্য বহু মানুষের অপেক্ষা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। অভিবাসন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে চালু হওয়া এই আইনের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং কিছু কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্য বলেছেন এই নীতির কারণে বহু আশ্রয়প্রার্থী আমেরিকায় ঢুকতে পারছেন না।
অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এখনও যুক্তি দেখাচ্ছেন বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হওয়া রুখতে এই আইনের প্রয়োগ এখনও বলবৎ রাখা উচিত। সীমান্তে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য তারা দুষছেন খোদ প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত ও ভীত শত শত মানুষ এই মুহূর্তে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছে দুই দেশের মাঝখানে বিশালাকৃতি ইস্পাতের সীমান্ত বেড়ার পাশে- জানাচ্ছেন মেক্সিকোর সিউদাদ হুয়ারেজ থেকে বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা সারা স্মিথ। যে দেশে পৌঁছনর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে এসেছেন, সেই দেশ তারা দেখতে পাচ্ছেন বেড়ার ফাঁক দিয়ে। কিন্তু এদের কেউই জানেন না তাদের শেষ অবধি ওই বেড়া পার হতে দেয়া হবে কিনা।
কয়েক দশক ধরে সীমান্তে কর্মরত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সীমান্তে এধরনের মানুষের স্রোত তারা কখনও দেখেননি। সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, সীমান্তের এই দৃশ্য খুবই বিরল। আমেরিকায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সাধারণত রাখা হয় হুয়ারেজ শহরের আশ্রয়কেন্দ্রে। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকদিনে সীমান্তে যে পরিমাণ মানুষ জড়ো হয়েছেন তা ব্যাপক –এই ঢল সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। এত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া অসম্ভব বলে তারা বলছেন। কয়েক দশক ধরে সীমান্তে কাজ করছেন এমন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এধরনের দৃশ্য তারা কখনও দেখেননি।
সেখানে জড়ো হওয়া অধিকাংশ মানুষ বলেছেন এ সপ্তাহে আমেরিকায় ঢোকার আইন বদলাচ্ছে এমনটা তারা শুনেছেন। কিন্তু অভিবাসীদের জন্য এই পরিবর্তনের অর্থ কী তা নিয়ে ব্যাপকভাবে ছড়িয়েছে ভুয়া খবর এবং তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। অনেকেরই ধারণা কোভিডের সময় চালু হওয়া ‘টাইটেল ফর্টি টু’ যার আওতায় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সহজেই তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর সুযোগ ছিল – তা উঠে গেলেই আমেরিকায় ঢোকার পথ সহজ হবে। আর সে কারণেই দলে দলে এত মানুষ সীমান্তে এসে ভিড় জমিয়েছেন।
টাইটেল ফর্টি টু প্রথম চালু হয় ১৯৪৪ সালে – তখন এ আইনের নাম ছিল জন স্বাস্থ্য আইন। রোগব্যাধির বিস্তার রোধ করতে আমেরিকান কর্তৃপক্ষকে এ আইন ব্যবহারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। আমেরিকার অভিবাসন নীতিতে এ আইনের প্রয়োগ নতুন করে আবার সামনে আসে ২০২০ সালের মার্চ মাসে। সীমান্ত দিয়ে কোভিডের বিস্তার ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন এ আইনের প্রয়োগ অনুমোদন করে। মেক্সিকো থেকে সীমান্ত পেরিয়ে আমেরিকায় ঢুকতে চাওয়া মানুষ, এমনকী মানবিক কারণে যারা আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থী তাদেরও প্যানডেমিকের যুক্তি দেখিয়ে এ আইনের বলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদের সোজা মেক্সিকোয় ফেরত পাঠিয়ে দেয়।
এরপর ২০২১ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং তার প্রশাসন জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলার যুক্তি দিয়ে এ নীতি বজায় রাখেন আরও এক বছরের ওপর। আমেরিকার শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০২১-২২ অর্থ বছরে টাইটেল ফর্টি টু নীতিমালা ব্যবহার করে ২০ লাখের ওপর মানুষকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আমেরিকার স্বাস্থ্য নীতি নির্ধারক সংস্থা ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ২০২২এর এপ্রিল মাসে যুক্তি দেয় যে, জন স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেহেতু কমে গেছে তাই এই নীতি এখন তুলে নেয়া যাবে।
প্রথমত আমেরিকা-মেক্সিকো সীমান্ত পার হবার জন্য সেখানে যে অপ্রত্যাশিত সংখ্যায় মানুষের ঢল নামবে তার মধ্যে থেকে কারা আইনত অভিবাসনের জন্য আবেদনের যোগ্য সেটা হয়ে দাঁড়াবে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন তাদের ধারণা সীমান্তে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী ভিড় জমাবেন। টাইটেল ফর্টি টু-র অধীনে বহু অভিবাসীকে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করার অনুমতিই দেয়া হয়নি। কিন্তু এই ধারা উঠে যাবার পর আমেরিকার পুরনো অভিবাসন নীতি অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই বাছাই করে দেখা হবে এবং তাদের ফেরত পাঠানো যাবে একমাত্র যদি প্রমাণিত হয় যে তারা আবেদনের যোগ্য নন। সূত্র : বিবিসি নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দাবানলে আবাসন হারালেন হলিউড হিলের যেসব তারকারা
শীতার্তদের মাঝে উঞ্চতা ছড়ালো ইবি 'তারুণ্য'
আমরা খেলাধুলার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি- অধ্যক্ষ এখলাস উদ্দিন খান
হাসিনার উৎখাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত নেই এটা ভারতও বিশ্বাস করে : জ্যাক সুলিভান
আশুলিয়ায় চাঁদা না দেয়ায় চা দোকানীকে গুলি, গ্রেপ্তার ৩
সরাইলে পলিথিন উৎপাদনকারিকে কারাদণ্ড
হাজীগঞ্জে অর্ধলক্ষাধিক জনসমাগমের উপস্থিতিতে জামায়াতের কর্মী সম্মেলন
ফরিদপুরের ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড় হারিয়ে যাচ্ছে
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ৪ আগস্ট পরবর্তী হামলা হয়েছে পুলিশের তদন্তে প্রকাশ : প্রেস উইং
নগরকান্দায় কবরস্থানের জায়গা নিয়ে দুইপক্ষের সংঘর্ষে আহত ১৫
কুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৯২ দশমিক ৩৯ শতাংশ
লক্ষ্মীপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ২ জনের, আহত ৯
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয়, বরং সু-সম্পর্ক রয়েছে: ডা. তাহের
দাউদকান্দিতে সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
সুন্দরবন জুড়ে ফের দস্যু আতঙ্ক
আবারও ভারতীয় রুপির দরপতন
রাজবাড়ীর পদ্মায় বরশিতে ধরা পড়লো ১৬ কেজির বোয়াল মাছ
রাজবাড়ী ডিবেট এসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক কমিটি গঠন
প্রথমবারের মতো মক্কার বাইরে পবিত্র কাবার সম্পূর্ণ কিসওয়া প্রদর্শন
মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে ধুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ভোলা পৌরসভা