ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
রাশিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি ইউক্রেনের একমাত্র পথ

পুতিনকে ঘায়েল করতে ব্যর্থ বাইডেনের ‘ইউক্রেন কৌশল’

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নজিরবিহীন মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ইউক্রেন যুদ্ধে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার বহুস্তর বিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রথমটিই পার হতে পারেনি মার্কিন মদদপুষ্ট ইউক্রেন বাহিনী। পশ্চিমাদের প্রশিক্ষণ এবং কয়েক বিলিয়ন ডলার ম‚ল্যের নতুন অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেন বাহিনীকে সজ্জিত করা সত্তে¡ও পাল্টা-আক্রমণ ব্যর্থ দেশটি। জুনের শুরুতে বহুল প্রচারিত ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণ শুরু হওয়ার পর বাহিনীটি মাত্র প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন সরবরাহ করা অস্ত্রের ২০ শতাংশ হারিয়েছে। আপাতত স্থগিত এই পাল্টা আক্রমণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটোর একটি বড় সামরিক অগ্রগতির আশাকে ধ্বংস করে দিয়েছে, যা এখনও ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ দখল করে আছে। এই দীর্ঘ যুদ্ধে ক্রমাগত ব্যর্থতার ফলে পশ্চিমে ‹ইউক্রেন অবসাদ’ শুরু হয়েছে। একটি নতুন সিএনএন-এসএসআরএস সমীক্ষা বলছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকান এখন মার্কিন কংগ্রেসে কিইভের জন্য আরও সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অনুমোদনের বিরোধিতা করছে, যা দেখায় যে, ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়াকে মোকাবেলা করার ‘বাইডেন কৌশল’ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে শুরু করেছে।

এই মুহুর্তে, শুধুমাত্র সংলাপ এবং ক‚টনীতিই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারে, যা উচ্চ খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য এবং বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতির আকারে বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলছে। এটি ম‚লত একারণে যে, রাশিয়াকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর মাধ্যমে সংঘাতটি পরাশক্তিগুলির মধ্যে এক ধরণের ছায়াযুদ্ধের আকার ধারণ করেছে। তবে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন নিষেধাজ্ঞা ও ছায়াযুদ্ধ ক্রেমলিনের সমরযন্ত্রে লাগাম না টেনে বা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে আলোচনার টেবিলে ঠেলে না দিয়ে, বরং উল্টো আরেক পরাশক্তি চীনের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক ফ্রি রাশিয়া ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদনে মস্কোর বিরুদ্ধে পশ্চিমা শাস্তিম‚লক পদক্ষেপের ফলাফল হিসেবে চীনকে সবচেয়ে বড় বিজয়ী বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাশিয়াকে আয়ত্বে আনতে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন নিষেধাজ্ঞা ব্যবস্থার ব্যর্থতা তাইওয়ান নিয়ে চীনের দাবিকে উৎসাহিত করেছে, বিশেষ করে যেহেতু বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরো কম প্রভাব ফেলবে। কারণ চীনের অর্থনীতি রাশিয়ার চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বড়।

পুতিন যেমন ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনা সম্পর্কে স্পষ্ট ছিলেন, তেমনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও তাইওয়ান বিষয়ে স্পষ্টভাবে বলেছেন। তবে, আপতত যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানে সম্ভাব্য চীনা অধিগ্রহন ঠেকাতে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। গত বছরের শেষদিকে কংগ্রেস কর্তৃক পাস করা সামগ্রিক ১হাজার ৬শ’ ৫০লাখ কোটি ডলারের অনুদানটিতে ইউক্রেনের জন্য ৪হাজার ৫শ’ কোটি ডলার অতিরিক্ত সহায়তা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু তাইওয়ানের জন্য ছিল মাত্র ২শ’ কোটি ডলার;তাও ঋণ, অনুদান নয়। এদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের নাকাল প্রকৃতি দেখায় যে, এটি যুদ্ধক্ষেত্রে একটি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে, কোন পক্ষই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করার অবস্থানে নেই, সম্প‚র্ণ বিজয় অর্জন করা ব্যতিত। এই মুহুর্তে যা একটি ক্ষয়ক্ষতি মূলক যুদ্ধ, তাতে মার্কিন সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করা হলে তা কেবল পশ্চিমা সামরিক সংস্থানগুলিকে নিষ্কাশন করবে। ইন্দো-প্রশন্তি মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মধ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে হ্রাস করবে। প্রকৃতপক্ষে, ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্রের বন্যা ইতিমধ্যেই এশিয়ায় মার্কিন সামরিক প্রভাব দুর্বল করে দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একদিকে রাশিয়ার সাথে ক‚টনীতির দরজা বন্ধ রাখছেন, অন্যদিকে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চীন-আমেরিকা সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য চীনকে অনুরোধ করছেন। তিনি এই গ্রীষ্মে সিআইএ প্রধান বিল বার্নস, স্বরাষ্ট্র সচিব অ্যান্থনি বিøঙ্কেন, কোষাগার জ্যানেট ইয়েলেন এবং জলবায়ু প্রতিনিধি জন কেরি সহ একদল জেষ্ঠ্য মার্কিন কর্মকর্তাকে বেইজিংয়ে পাঠিয়েছেন। এইসব অকার্যকরী সফর শতবর্ষী প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র সচিব হেনরি কিসিঞ্জারকে বেইজিংয়ে একটি অঘোষিত ভ্রমণের দিকে পরিচালিত করেছে, যিনি বাইডেন প্রশাসনকে চীনের প্রতি আরও সমঝোতাম‚লক পদ্ধতি অবলম্বন করতে উৎসাহিত করেছিলেন। আসল বিষয়টি হ›ল, ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যতবেশি তার সম্পৃক্ততাকে আরও গভীর করেছে, বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনা-রাশিয়ান অক্ষকে আটকানোর আশায় চীনকে ততবেশি সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে রাশিয়াকে রক্তাক্ত করার জন্য রওনা হয়েছিল। কিন্তু রাশিয়া নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রেরই যুদ্ধাস্ত্র ফুরিয়ে যাচ্ছে। সিএনএন দেয়া সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে বাইডেন স্বীকার করেছেন, ‘এটি যুদ্ধাস্ত্রের সাথে সম্পর্কিত সঙ্ঘাত। এবং তাদের (ইউক্রেন) সেই গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাচ্ছে, এবং আমরা এতে বাড়ন্ত রয়েছি।’ তিনি আরও বলেছেন যে, তাই ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা পাঠানো ছাড়া তার আর কোনও উপায় ছিল না। সার্বিক পরিস্থিতিতে একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টা ইউক্রেনের বর্তমান সামরিক অচলাবস্থার একমাত্র স্বাভাবিক ফলাফল হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক যেমন ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কোরিয়ান যুদ্ধ একটি অস্ত্র প্রত্যাহার চুক্তিতে আসার আগে দুই বছরের জন্য অচলাবস্থায় ছিল। বর্তমান যুদ্ধে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে একই ধরনের দীর্ঘ বিলম্ব ইউক্রেনের জন্য আরও বড় ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে। স্নায়ুযুদ্ধ যেমন একটি প‚র্ব ও পশ্চিম জার্মানি, একটি উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং এখনও বিদ্যমান উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া তৈরি করেছিল, ঠিক সেভাবেই বর্তমান যুদ্ধের সম্ভাব্য ফলাফলটি একটি রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনীয় অংশ হতে পারে যা ন্যাটোর বিরুদ্ধে মস্কোর কৌশলগত নিরাপত্তা অঞ্চল হিসাবে কাজ করবে। এবং বাকি ইউক্রেন ন্যাটোপন্থী হতে পারে (কিন্তু অংশ নয়)। সূত্র : দ্য হিল।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা