যেখানে ভূতের ভয়, সেখানে প্রধানমন্ত্রী রয়!

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পিএম | আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পিএম

 

প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থান— যেখানে নাকি মাছিও গলতে পারার কথা নয়, সেখানে ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়ায় ভূতেরা! জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবাস কান্তেই নিয়ে জল্পনা তেমনই। ভূতের ঠেলা সহ্য করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৎসুতোমু হাতার স্ত্রী ইয়াসুকো হাতা এবং আর এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি।

 

সেই সব গল্প শুনে আরও দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা ও শিনজো অ্যাবে আর থাকতেই রাজি হননি ওই বাড়িতে। কিন্তু ২০২১ সালে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিডা সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে সেই বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন। সম্প্রতি তারই পথে হাঁটছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবাও।

 

কী এমন আছে ওই বাড়িতে?

 

১৯২৩ সালে গ্রেট কান্তো ভূমিকম্পে টোকিওর বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে, টিকে গিয়েছিল দ্য ইম্পিরিয়াল হোটেল। জাপানের মতো ভূমিকম্পপ্রবণ দেশের প্রধানমন্ত্রী আবাস তৈরির জন্য স্বাভাবিকভাবেই দ্য ইম্পিরিয়াল হোটেলের গড়ন অনুকরণ করা হয়।

 

হোটেলটি বানিয়েছিলেন বিখ্যাত মার্কিন আর্কিটেক্ট ফ্র্যাঙ্ক লয়েড রাইট। ১৯২৯ সালে ইট-পাথর দিয়ে তৈরি, ৫০০০ বর্গমিটারের কিছু বেশি এলাকা নিয়ে তৈরি দোতলা সেই প্রধানমন্ত্রীর আবাস অবশ্য বানিয়েছিলেন জাপানি আর্কিটেক্টরাই। বিশ শতকের প্রথমেই জাপান যে ধীরে ধীরে আধুনিকতার দিকে এগোচ্ছিল, তার চিহ্ন এই বাড়ির প্রতিটি ইঞ্চিতে।

 

প্রায় একশো বছরের পুরোনো এই বাড়ি জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসের অনেকটা অংশের সাক্ষী। এই বাড়ি তৈরির সময়ে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ৎসুয়োশি ইনুকাই। ১৯৩২ সালে সরকার ফেলে দেয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে কয়েকজন তরুণ নৌসেনা অফিসার তাকে হত্যা করে। সরকারের পতন হয় ঠিকই, কিন্তু জাপানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করে এই ঘটনা। দেশে জারি হয় সেনা শাসন।

 

কিন্তু একবার রক্তে বিদ্রোহ ঢুকে গেলে কি আর সে নেশা থামে? সেনা শাসন জারি হওয়ার চার বছরের মাথায় ফের বিদ্রোহ! তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী কেইসুকে ওকাডা। তাকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি একটি আলমারিতে গা-ঢাকা দিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচান। তবে সেই আক্রমণে মারা পড়েছিলেন পাঁচজন। আজও ওই বাড়ির এক প্রবেশপথের দরজায় একটা গুলির দাগ সেই কালো দিনের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে।

 

মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে দু’টি এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ায় বাড়িটি অব্যবহৃত পড়ে ছিল। গোটা বিশ শতকে আর কেউ সেই বাড়ি ব্যবহারের কথা ভাবেননি। অবশেষে ৮.৬ বিলিয়ন ইয়েন খরচ করে ২০০৫ সালে জাপান সরকার সেই বাড়িটি সংস্কার করে। তাতে যেমন আধুনিকতা ছিল, তেমনই তার প্রাচীন কারুকাজ, বিশেষ করে সূক্ষ্ম কাঠের কাজগুলিকেও পুনরুদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি এক শিন্তো পুরোহিতকে দিয়ে সেই বাড়ির শুদ্ধকরণও করা হয়।

 

এই বাড়ির খুনোখুনির ইতিহাসে জড়িয়ে গিয়েছে ভূতের গল্প। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ৎসুতোমু হাটার স্ত্রী ইয়াসুকো হাটা ১৯৯৬ সালে তার স্মৃতিকথায় এই বাড়িতে থাকার কথাও লেখেন। তিনি কোনও কিছুর ‘eerie and oppressive presence’ (ভূতুড়ে ও সদর্প উপস্থিতি)-এর কথা বলেন।

 

তিনি লিখেছিলেন, বাড়ির বাগানে নাকি সেই নৌ সেনাদের ছায়ামূর্তি দেখা যায়। এখনও পর্যন্ত জাপানের দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের কাছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি জানিয়েছিলেন, এই বাড়িতে তিনি ভূতের পাল্লায় পড়েছিলেন। ২০১৩ সালে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়, শিনজোর এই বাড়িতে না থাকার সঙ্গে ভূতের গুজবের কোনও সম্পর্ক নেই।

 

২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হওয়া ফুমিও কিশিডা এই সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে সেই বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। তিনি জানান, ভূতের ছায়ারও দেখা পাননি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার
ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত
ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি
বিমান বিধ্বস্তের পর টিকিট বাতিলে হিড়িক
বন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা
আরও

আরও পড়ুন

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

অপকর্মের হোতা পুলিশ কর্তারা এখনও বহাল

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

দুই সচিবের চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়ার সম্ভবনা

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

হঠাৎ বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান রাশিয়ার

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রথম সরকারি সফরে সউদী যাচ্ছেন সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

আড়ানী পৌরসভায় ৫০০ জন হতদরিদ্রদের মাঝে কম্বল বিতরণ

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

হালুয়াঘাটে ধরাছোঁয়ার বাইরে পাচার চক্রের ভারতীয় র'য়ের এজেন্ট সেই শুকান্ত দত্ত

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

ইয়েমেনে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ভারতীয় নার্সের অপরাধের নেপথ্য কাহিনি

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

আটঘরিয়ায় স্বাস্থ্য সহকারীদের বেতন বৈষম্য দূরীকরনের জন্য স্মারকলিপি প্রদান

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি বাতেন, সম্পাদক সাইফুল

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই : আমিনুল হক

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

রাজধানীতে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করছে বিএনপি

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

খুলনা-চট্টগ্রাম ম্যাচে ‘টাইমড আউট’ নাটক

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

মেহেরপুরে প্রবীণ সাংবাদিক রশিদ হাসান খান আলোর জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

সুন্দর সমাজ গঠনে খেলাধুলার বিকল্প নেই সৈয়দপুরে -বেবী নাজনীন

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

কিশোরগঞ্জের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্চায় ব্যস্ত

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম

দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রাঘাতে ছাত্রদল নেতা গুরুতর জখম