গাজায় এক মায়ের সন্তান জন্মের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম

এক মাস আগে গাজার বাসিন্দা জুমানা এমাদ গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে ছিলেন। আনন্দের সাথে সন্তান জন্মের অপেক্ষায় থাকা এই মা তার গর্ভাবস্থার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শেয়ার করেছিলেন। তিনি জানতেন তার একটি মেয়ে হবে। তার স্বামী অনাগত সন্তানের জন্য অধীর অপেক্ষায় ছিলেন, হাসপাতালের ব্যাগ তৈরি ছিল আর তাদের চার বছরের মেয়ে তুলিনের ছোট বোনের সাথে দেখা করার তর সইছিল না। কিন্তু এরপরই সব বদলে গেল! ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলা চালায় হামাস। জবাবে গাজায় ইসরাইলের পাল্টা বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত আট হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ‘আমি ভয়ে ছিলাম,’ বিবিসিকে বলেন জুমানা। ‘টানা গোলাগুলির মধ্যেই আমার প্রসব যন্ত্রণা ওঠে।’ গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার ইসরাইলি নির্দেশনা মেনে বাড়ি ছাড়েন ২৫ বছর বয়সী এই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। ইসরাইলের হামলা শুরুর দুই দিন পর তিনি গাজা শহর ছেড়ে দক্ষিণ দিকে চলে যান। ভীত ও নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা জুমানা তার মেয়েকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সাথে নেন মেয়ের জন্য কেবল একটা কাপড়, এক প্যাকেট দুধ আর একটা ছোট ব্যাগ। ভয়েস ম্যাসেজে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি কঠিন ছিল।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা রাতে ঘুমাইনি। সেখানে প্রচুর গোলাবর্ষণ হওয়ায় আমাদের অন্য জায়গায় যেতে হয়েছিল। আমার মতো গর্ভবতী নারীদের হাঁটতে বের হওয়া উচিত কিন্তু যুদ্ধের কারণে আমরা খাবার কিনতেও বাইরে যেতে পারছি না।’ এই কঠিন পরিস্থিতিতে সন্তান জন্ম দেয়া নিয়ে ভয় আর উদ্বেগের পাশাপাশি বার বার বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, ইন্টারনেট বিঘ্নিত হওয়া ও পানি স্বল্পতার কথা বলেছিলেন জুমানা। ১৩ অক্টোবর শুক্রবার জুমানার প্রসব বেদনা শুরু হয়। তার পরিকল্পনা ছিল গাজা শহরের একটি বড় হাসপাতাল আল-শিফায় যাওয়ার। কিন্তু তাকে জানানো হয় যে হাসপাতালের অবস্থা খুবই কঠিন। তার পরিবর্তে গাজা উপত্যকার মাঝখানে নুসেইরাতের একটি ছোট হাসপাতাল আল-আওদায় যান জুমানা। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোও কঠিন ছিল। প্রসব যন্ত্রণার মধ্যে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পেতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন জুমানা। ‘ট্যাক্সি চালকরা ভীত ছিলেন আর মা হতে যাওয়া একজন নারীর জন্য অ্যাম্বুলেন্সও ছিল না,’ বলেন তিনি। প্রসব বেদনার সময়টিকে কঠোর ও ভয়ঙ্কর হিসেবে বর্ণনা করেন জুমানা। ‘হাসপাতালের পাশের একটি বাড়িতে তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল আর সেই শব্দ এতটাই জোরে ছিল যে আমি ভেবেছিলাম গোলাগুলি হাসপাতালেই হচ্ছিল। অনবরত আহত মানুষরা আসছিল। আমি চারদিক থেকে চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম। আমি আমার বড় মেয়ের কথাও ভাবছিলাম। সে আমার থেকে দূরে থাকায় তাকে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম।’ ‘আমি কেবল ভেবেছিলাম, যাই হোক না কেন আমি আমার সন্তানকে জন্ম দিতে চাই।’ সেদিনই সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টা পর একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন জুমানা। তিনি তার নাম রাখেন তালিয়া। সেই সময়ের অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওর কান্না শুনে মনে হচ্ছিল তখনো আমরা সবাই বেঁচে আছি।’ প্রসবের পরপরই জুমানার জন্য কোনো বিছানা পাওয়া যায়নি। ব্যথা ও রক্তপাতের মধ্যেই তাকে একটি বিছানা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। ‘আমি ভাগ্যবান ছিলাম যে আমার জন্য একটি বিছানা পাওয়া গিয়েছিল, অন্য নারীরা সন্তান জন্ম দেয়ার পর হাসপাতালের করিডোরের সোফা আর মেঝেতে শুয়েছিল,’ বলেন তিনি। বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বাইডেনের ক্ষমায় শিগগিরই মুক্তি পেতে পারেন ডক্টর আফিয়া সিদ্দিকী
আলজাজিরার রিপোর্টে কুকীর্তি ফাঁস, লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন হাসিনা
ইউরোপকে আরেকটি জ্বালানি সংকটে ফেলেছে ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্র: হাঙ্গেরি
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করছে বিপুল সংখ্যক আফ্রিকান সেনা
হুগলির গঙ্গায় ডুবে আছে বাংলাদেশি জাহাজ
আরও

আরও পড়ুন

জবিতে ছাত্রলীগ নেত্রী আটক, মুক্তির পর হুমকি

জবিতে ছাত্রলীগ নেত্রী আটক, মুক্তির পর হুমকি

বিতর্ক যেন ছাড়ছেই না উর্বশীকে,আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

বিতর্ক যেন ছাড়ছেই না উর্বশীকে,আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল

বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে হালের নিও কিউএলইডি টেলিভিশন

বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে হালের নিও কিউএলইডি টেলিভিশন

কিশোরগঞ্জে পুলিশ সদস্যের বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর অবস্থান

কিশোরগঞ্জে পুলিশ সদস্যের বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর অবস্থান

এবার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আবদুস সোবহান গোলাপের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

এবার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আবদুস সোবহান গোলাপের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ সবচেয়ে সহজ বিকাশ-এ

পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ সবচেয়ে সহজ বিকাশ-এ

জনগণের পাশে থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

জনগণের পাশে থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

দেশপ্রেমিক গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান: গয়েশ্বর রায়

দেশপ্রেমিক গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান: গয়েশ্বর রায়

লাকসামের যুবদলের আহবায়ক রাসেল বহিষ্কার

লাকসামের যুবদলের আহবায়ক রাসেল বহিষ্কার

যেভাবে বিদেশি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল হাসিনা

যেভাবে বিদেশি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল হাসিনা

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত

গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ  আহত-৫

গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫

যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান

যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান

মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ

মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ

কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব -  আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা

ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা

আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত

জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন  রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা

জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা

জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে  - খোকন

জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন