দেশের অর্ধেক এলাকা দখলে নিয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমেই আরও সংঘাতময় হয়ে উঠছে। এরইমধ্যে দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা দখলে নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো। তারা একজোট হয়েছে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে। কোণঠাসা হতে থাকা জান্তা পরিস্থিতিতে হাতে রাখতে চীনের দ্বারস্থ হয়েছে। দেশটিতে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত চেন হাইয়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান শোয়েসহ কয়েক জন সামরিক শীর্ষকর্তা। মিয়ানমারের সরকারি টিভি চ্যানেল গ্লোবাল নিউজ লাইট অব মিয়ানমারে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, দু’দেশের জন্য লাভজনক যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়ন, সীমান্তে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং আইনের শাসন বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করেছিল মিয়ানমার সেনা। তখন থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নানা প্রান্তে শুরু হয় বিদ্রোহ। সম্প্রতি উত্তর মিয়ানমারের শান এবং সাগিয়াং প্রদেশে সাফল্যের পরে পশ্চিমের চীন এবং রাখাইন প্রদেশেও হামলা শুরু করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নতুন জোট ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। চলতি মাসে ওই জোট আরও সম্প্রসারিত হয়েছে। ইতোমধ্যেই অন্তত পাঁচটি প্রদেশ দখল করেছে বিদ্রোহী জোট। চীনগামী মূল সড়কটিও তাদের দখলে। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ জান্তা সরকারের। অপর এক খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণে বিশেষ করে মাদায়া ও মাইনজিয়ান শহরে শুরু হওয়া গেরিলা হামলায় জান্তা পোস্টলক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ বাহিনী। স্থানীয় গেরিলা যোদ্ধাদের ভাষ্য মতে, মান্দালয় অঞ্চলের পশ্চিম মাদায়া টাউনশিপে অবস্থিত গ্রামটিতে বেশ কয়েকটি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। প্রতিরোধ মূলক হামলার পর জান্তা সৈন্যরা এই প্রতিশোধ হিসেবে এটা করে। এদিকে দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে, ভ্রমণ বিঘ্ন হচ্ছে। মিয়ানমারের চারপাশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সফরকারীদের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ সড়কপথগুলো। দেশের কিছু অংশে ভ্রমণ ক্রমবর্ধমান কঠিন এবং ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। অপর এক খবরে বলা হয়, রাজ্যের জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর জন্য আরো স্বায়ত্তশাসনের জন্য আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে আসছে। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত বেশ কয়েকটি জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম এটি। কয়েকটি গোষ্ঠী বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন চাইলেও অন্যরা নিজের অঞ্চলের দামি খনিজ, মাদক ও কাঠের লাভজনক ব্যবসা পরিচালনা করার অধিকার চায়। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের একটি বৌদ্ধবিহারে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বেশ কয়েকটি পরিবার। দেশটিতে চলমান গৃহযুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার মানুষের কাতারে সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে তারা। জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর অন্যতম সশস্ত্র দল আরাকান আর্মি গত সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এরই মধ্যে দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে সমন্বিত হামলার মুখে পড়া জান্তা শাসকের বিরুদ্ধে আরেকটি রণাঙ্গন খুলল। আরাকান আর্মিসহ জাতিগত সংখ্যালঘু জোটের অন্তর্ভুক্ত সশস্ত্র বাহিনীগুলো গত মাসে জান্তার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আক্রমণ শুরু করে চমক জাগায়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ক্রমেই বেড়ে চলা সংঘাতে প্রায় তিন লাখ ৩৫ হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আরাকান আর্মির যোদ্ধারা অল্প সময়ের জন্য উপকূলীয় শহর পাউকতাও দখল করে নেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার জান্তার সশস্ত্র বাহিনী ২০ হাজার বাসিন্দার শহরটিতে গোলাবর্ষণের জন্য নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠায়। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকেও গুলি ছোড়া হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে। জান্তা সেনারা ক্রমেই কাছে এগিয়ে আসায় পাউকতাও শহর ও আশপাশের গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে আশ্রয় নেয়। শহরের বাইরের একটি বিহারে আশ্রয় নেওয়া এক বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘আমি গুজব শুনেছি সেনা সদস্যরা গ্রামের দিকে এসে বেসামরিক লোকদের গুলি করে মারছে।’ নাম গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘পালানোর সময় আমাদের অনেক ধকল সামলাতে হয়েছে। কারণ আমরা ভারী বর্ষণের মধ্যে ছোট নৌকায় নদী পার হচ্ছিলাম।’ গত সপ্তাহে পাউকতাওয়ের কাছের একটি গ্রাম থেকে পালিয়ে আসেন থান থান (৪৫) নামের আরেকজন। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে আমরা হেঁটে ও নৌকায় এত পথ এসেছি। আমাদের ঠাণ্ডা লেগে গেছে। কেউ কেউ তো বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে।’ রয়টার্স, এএফপি, মিয়ানমার নাউ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা