গাজায় যুদ্ধ তৃতীয় মাসে পদার্পনের সাথে সাথে ইসরায়েলি বাহিনী উপকূলীয় অঞ্চলটির জনাকীর্ণ দক্ষিণ এলাকা খান ইউনিসে কঠোর হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের লক্ষ্য হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়ার এবং গাজার পূর্ণ দখল নেয়ার। এখন পর্যন্ত এটি আংশিকভাবে সফল হয়েছে গাজার ১৬ হাজারেও বেশি বেসামরিক ফিলিস্তিনিকে হত্যার মাধ্যমে। খান ইউনিসের জন্যও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। তবে, আন্তর্জাতিক সমর্থন, যা ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তার ‹বৈধতার জানালা› বলে অভিহিত করে, তা গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে হ্রাস পাচ্ছে।

যদিও জনসমক্ষে ইসরায়েলের নেতারা জোর দিয়ে বলঁেছন যে, এই অভিযান সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা নেই। তবে, মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলের যুদ্ধ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভাকে স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ইসরায়েলির বাহিনীর হাতে ‹অনির্দিষ্ট মাস› অবশিষ্ট নেই কাজটি শেষ করার জন্য।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ২ ডিসেম্বর সতর্ক করে ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়ার সময় তার প্রাপ্ত শিক্ষা থেকে বলেছেন, ‘আপনি কেবল বেসামরিক লোকদের রক্ষা করে শহুরে যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারেন এবং আপনি যদি তাদের শত্রুর দিকে ঠেলে দেন, তবে আপনি একটি কৌশলগত জয়কে কৌশলগত পরাজয় দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’

বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা গাজায় ইসরায়েলি নির্দেশিকা অনুসরণ করলেও তাদেরকে হাজার হাজার হামাস যোদ্ধার সাথে একটি সঙ্কুচিত এলাকায় জড়ো হয়ে থাকতে হচ্ছে, যারা নি:সন্দেহে তাদের অনুসরণ করবে। অধিকন্তু, ইসরায়েল এখনও এই কথিত নিরাপদ এলাকাগুলির জন্য কোনও বিস্তিৃত মানবিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেনি। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন ইসরায়েল দিনে ২শ’ থেকে ৩শ’ সাহায্য লরির অনুমতি দিয়েছিল, কিন্তু সংখ্যাটি দিনে প্রায় ১শ’তে নেমে এসেছেু।

তবে, চাপের সম্মুখীন হয়েছে বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার। একদিকে, ইসরায়েলের অর্থনীতির স্বার্থে তাকে অবশ্যই যুদ্ধ ব্যয় কমানো শুরু করতে হবে এবং ৩৬ হাজার সংরক্ষিত সেনার মধ্যে অনেককে ব্যক্তিগত কর্মস্থলে ফিরে যেতে হবে। অন্যদিকে, নেতানিয়াহুর অতি-ডানপন্থী জোটের কিছু অংশ হুমকি দিয়েছে যে, তিনি খুব শীঘ্রই স্থল যুদ্ধ বন্ধ করে দিলে তারা জোট ত্যাগ করবে।

এদিকে, যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামাস ২৪ বিদেশী কর্মী সহ ১শ’ ১০ জিম্মিকে মুক্ত দিয়েছে, যারা প্রধানত নারী ও শিশু। গাজায় বন্দী আরও ১শ’৩৮ জিম্মির পরিবার তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য হামাসের সাথে আরেকটি চুক্তির দাবি জানাচ্ছে। ৫ ডিসেম্বর জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের পরিবার নেতানিয়াহুর সাথে একটি উত্তেজনাপূর্ণ বৈঠক করেছে, যেখানে নেতানিয়াহুকে রাজনীতিকে জিম্মিদের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এখন, লেবাননের হিজবুল্লাহ আবারও উত্তর ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করছে, যেমনটি যুদ্ধবিরতির আগে করেছিল। আর ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরাইরের বিরুদ্ধে জাহাজে হামলা চালাচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, যার জনপ্রিয়তা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে এবং যার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তেল আবিবে তার গদির দিকে নজর দিচ্ছে, তার পরিণতি দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলি গর্জে ওঠার মধ্য দিয়ে ঘনিয়ে আসছে।