ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১
বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার জান্তা বাহিনী

জেড খনির দখল নিয়ে তীব্র যুদ্ধ

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৯ এএম

মিয়ানমারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় জেড (মূল্যবান পাথর) খনির দখল নিয়ে বিদ্রোহী গ্রুপ কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি (কেআইএ) এবং সামরিক জান্তার মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই পাথর দিয়েই বানানো হয় মূল্যবান জেড পাথর। স্থানীয় অধিবাসী এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বছরের শুরু থেকে এই যুদ্ধ তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠেছে। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর অর্থ সংগ্রহের জন্য জান্তাবাহিনী এবং কেআইএ নির্ভরশীল হয়ে পড়ে প্রাকৃতিক এই উৎসের ওপর। কাচিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অং সেইন মিন বলেন, এর মধ্যে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হপাকান্ত। তিনি বলেন, সশস্ত্র গ্রুপগুলো এই এলাকাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, এটা সামরিক এবং আর্থিক সমর্থনের জন্য কৌশলগত এক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ জন্য জেড উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে জোর লড়াই করছে উভয় পক্ষ। উল্লেখ্য, অং সেইন মিন হপাকান্ত শহর থেকে ২০২০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এসব খবর দিয়েছে অনলাইন রেডিও ফ্রি এশিয়া। এতে বলা হয়, বিশ্বে মোট যে পরিমাণ জেড পাথর উৎপাদন হয় তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৭০ ভাগই মিয়ানমারের। এই পাথর প্রতিবেশী চীনে ভীষণ জনপ্রিয়। গত ২০শে জানুয়ারি ৩৩তম মিলিটারি ডিভিশনের কাছ থেকে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) এবং কেআইএ একসঙ্গে কৌশলগত পাহাড় হওয়ে হকার দখলে নিতে আক্রমণ করে এবং তা তাদের দখলে নেয়। মিয়ানমারের কাচিন রাজ্যে প্রবেশের জন্য হপাকান্ত একটি বড় গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বার। স্থানীয় অধিবাসীরা রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেছেন, ২রা ফেব্রুয়ারি ন্যাম তেইন সামরিক ক্যান্ড নিজেদের দখলে নিয়েছে কেআইএ এবং পিডিএফ। নাম প্রকাশ না করে একজন অধিবাসী বলেন, এটা গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়। এক দশক ধরে এখানে অবস্থান করছিল সেনাবাহিনী। বিদ্রোহীদের মারাত্মক হামলায় এসব পাহাড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে মিলিটারি কাউন্সিল। কাচিন স্টেট একাউন্টেবলিটি রিসোর্স গর্ভন্যান্স গ্রুপের ২০২৩ সালের এপ্রিলের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, উৎপাদিত জেডের মধ্যে শতকরা প্রায় ২০ ভাগ করে পেত কেআইএ এবং জান্তাবাহিনী। ওই এলাকায় কয়েক দশক ধরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত কেআইএর রাজনৈতিক শাখা কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্গানাইজেশন (কেআইও)। এরা মাঝেমাঝে চীনা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করে। মিয়ানমারের পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো বেআইনিভাবে আহরিত স্বর্ণ, জেড এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ নিয়ন্ত্রিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেআইও’র তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা কর্নেল নাউ বু’র মতে, ফেব্রুয়ারি শুরু থেকে ওই এলাকায় প্রায় ৩৫টি লড়াই হয়েছে জান্তা বাহিনী ও কেআইএর মধ্যে। গত মাস থেকে মোট ১০টি সেনা ক্যাম্প দখল করেছে কেআইএ। তিনি বলেন, সামরিক কৌশল নিয়ে আমরা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারি না। বর্তমানে লড়াই তীব্র আকার ধারণ করার ফলে বড় পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু বলবো না। অপর এক খবরে বলা হয়, বেসামরিক জাতীয় ঐক্য সরকারের (এনইউজি) অধীনে টানা কয়েক দিনের আক্রমণে গত বছরের ৬ নভেম্বর মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের কাওলিন শহরটি দখল করেছিল জাতিগত সেনাবাহিনী এবং পিপলস ডিফেন্স ফোর্স গ্রুপ (পিডিএফ)। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বড় আক্রমণের মাধ্যমে কাওলিন পুনর্দখল করে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনী। পুনর্দখলের পর শহরটির প্রায় ৮০ ভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে জান্তা বাহিনী। ২৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার বাসিন্দা সংঘর্ষের কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ড্রোন ক্যামেরায় তোলা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শহরের প্রায় সব বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কাওলিনভিত্তিক পিডিএফ অনুসারে, শহরের আটটি ওয়ার্ডই অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে। জান্তা সৈন্যরা উপকণ্ঠের অন্তত ১০টি গ্রাম আগুনে সম্পূর্ণ ভষ্ম করে দিয়েছে। কাওলিন রেভোলিউশন গ্রুপের একজন সদস্য সোমবার বলেন, ‘আজ কোনো সংঘর্ষ ছিল না। তারপরও জান্তা সৈন্যরা ভোর ৫টা থেকে ইন বোকে কোনের লগিং সাইটে অগ্নিসংযোগ করছে।’ বহুতল ভবনগুলোতে জান্তা সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের নজরদারিতে বাধা সৃষ্টি করে এমন সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হচ্ছে। শহরের উপকণ্ঠে কিয়াউকটান গ্রামের কাছে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এতে মান্দালে-শ্বেবো সড়কে পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ মাইটকিনা-ইন্দাও-কাইউকটান সড়কেও যানবাহন আটকা পড়ে আছে। রেডিও ফ্রি এশিয়া, রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিশ্ব সংগীত আসরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সংগীত শিল্পী সুমি

বিশ্ব সংগীত আসরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সংগীত শিল্পী সুমি

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত