অস্তিত্ব রক্ষায় রোহিঙ্গাদেরই সহায়তা চাইছে জান্তা
০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৮ এএম
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সামরিক জান্তা এক সময় অকাতরে গণহত্যা চালিয়েছে রোহিঙ্গাদের ওপর। বিশেষ করে ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর গণতন্ত্রকামী মানুষের গণবিক্ষোভ, আন্দোলন এবং তার সঙ্গে জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর যোগ দেয়ার পর ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকে তারা। গত অক্টোবর থেকে বিদ্রোহীদের একের পর এক অভিযান, হামলায় দিশেহারা সামরিক জান্তার সেনারা। তারা একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। পরাজিত হচ্ছে বিভিন্ন শহরে। হারাচ্ছে আউটপোস্ট, ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর। পালিয়ে সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ও ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন মাঝেমধ্যেই। উপায়ান্তর না দেখে সব যুবক-যুবতীর জন্য সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে জান্তা সরকার। কিন্তু কিছুতেই শেষ রক্ষা হচ্ছে না। ফলে তারা যে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল, তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, ধর্ষণ চালিয়েছে- সেই রোহিঙ্গাদের কাছে এখন তারা সাহায্য চাইছে। বিভিন্ন সময়ে গণহারে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা পালিয়ে দলেবলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। প্রায় সাত বছর আগে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। এই হত্যাকে জাতিনিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ। বিবিসি বলছে, এখন সেই রোহিঙ্গাদের কাছে সাহায্য চাইছে সামরিক জান্তা। সম্প্রতি রাখাইনে বসবাসরত কমপক্ষে ১০০ রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিবিসি। এসব রোহিঙ্গা সামরিক জান্তার পক্ষে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছেন কয়েক সপ্তাহ আগে। এ নিয়ে রিপোর্টে ওইসব রোহিঙ্গার নাম পাল্টে দিয়ে বিবিসি বলছে- তাদের একজন ৩১ বছর বয়সী মোহাম্মদ। তিনি এই যুদ্ধে গিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তাবে ভয়ে ছিলাম। কিন্তু আমাকে যেতেই হয়েছে (অর্থাৎ তাকে বাধ্য করা হয়েছে)। তার বসবাস রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের কাছে বাউ ডু ফা ক্যাম্পে। গত এক দশকে আইডিপি ক্যাম্পে বসবাস করতে আভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত কমপক্ষে দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে বাধ্য করা হয়েছে। মোহাম্মদ বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ক্যাম্প লিডার এক রাতের শেষের দিকে উপস্থিত হন এবং বলেন, তাকে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। মোহাম্মদের ভাষায়, এটা ছিল সামরিক নির্দেশ। ওই লিডার আমাকে বলেন, যদি আমি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি তাহলে তারা আমার পরিবারের ক্ষতি করবে। বেশ কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এসব রোহিঙ্গা নিশ্চিত করে বলেছেন, সেনা কর্মকর্তারা ক্যাম্পে ঘোরাঘুরি করতেন এবং যুবকদেরকে নির্দেশ দিতেন সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণে রিপোর্ট করতে। মোহাম্মদের সঙ্গে যে ভয়াবহতা ঘটে গেছে তাতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তাদেরকে এখনও মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। দেশের ভিতরে পর্যন্ত তাদের চলাচলে বিভিন্ন রকম বিধিনিষেধ আছে। ২০১২ সালে কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইন রাজ্যে গাদাগাদি ক্যাম্পে যেতে বাধ্য করা হয়। এর ৫ বছর পর ২০১৭ সালে ৭ লাখ রোহিঙ্গা নিষ্পেষণ, নৃশংসতা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এখনও রাখাইনে আছেন প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা। এই সম্প্রাদায়ের ওপর চালানো গণহত্যার অভিযোগে হেগে অবস্থিত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) বিচার চলছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। কিন্তু কি নির্মম পরিহাস! সেই রোহিঙ্গাদেরকেই এখন নিজেদের অস্তিত্ব টেকানোর জন্য সেনাবাহিনীতে জোর করে যুক্ত করাচ্ছে সেই গণহত্যা চালানো সেনাবাহিনী। অথচ সামরিক অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনীর গুলি, গোলা এবং আকাশ থেকে ফেলা বোমা হামলায় কত রোহিঙ্গা এবং অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়েছেন তার কোনো হিসাব নেই। উল্লেখ্য, সর্বশেষ গত শনিবার মায়াবতী শহরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সেনাবাহিনী। এটি হলো থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছের একটি শহর। এই শহরের ভিতর দিয়ে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থলবাণিজ্য পরিচালিত হয়। বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্যও হারিয়েছে সামরিক জান্তা। তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, তারা আহত হয়েছেন, আত্মসমর্পণ করেছেন অথবা পক্ষ ত্যাগ করেছেন। ফলে তাদের এই শূন্য পদে জনশক্তি দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অনলাইন বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জবিতে ছাত্রলীগ নেত্রী আটক, মুক্তির পর হুমকি
বিতর্ক যেন ছাড়ছেই না উর্বশীকে,আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল
বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে হালের নিও কিউএলইডি টেলিভিশন
কিশোরগঞ্জে পুলিশ সদস্যের বাড়ীতে বিয়ের দাবিতে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীর অবস্থান
এবার যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আবদুস সোবহান গোলাপের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ
পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ সবচেয়ে সহজ বিকাশ-এ
জনগণের পাশে থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
দেশপ্রেমিক গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন জিয়াউর রহমান: গয়েশ্বর রায়
লাকসামের যুবদলের আহবায়ক রাসেল বহিষ্কার
যেভাবে বিদেশি মিডিয়ার মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল হাসিনা
শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী পালিত
গৌরনদীতে বসত বাড়ির গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ আহত-৫
যে কারণে সফল হয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান
মাদারীপুরে স্কুলে ল্যাব না থাকলেও শিক্ষক নিয়োগ
কৃষকের প্রয়োজন পানি: মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পে সেচ সুবিধা না পেয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দুর্যোগে নেতৃত্বহীনতায় জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
ব্রাহ্মণপাড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবকের আত্মহত্যা
আশুলিয়ায় বাস চাপায় নারী পোশাক শ্রমিক নিহত
জানুয়ারির প্রথম ১৮ দিন রেমিট্যান্স এলো ১৪,৭২৩ কোটি টাকা
জনগণ নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল একটি দলের সাথে - খোকন