ইরান-ইসরাইলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মোড়, এখন যা হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ইসরাইলের ওপর রোববার ভোরে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সবার দৃষ্টি এখন ইসরাইলের দিকে। তারা কি আরো সামরিক পদক্ষেপ নেবে, যখন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতির মাধ্যমে আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে? ইরান বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাদের কূটনৈতিক ভবনে হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা ইসরাইলে আক্রমণ করেছে। দামেস্কে যে হামলায় ইরানের আধা-সামরিক রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর দু’জন জেনেরাল নিহত হন, সেটা ইসরাইলি বিমান থেকে করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ইসরাইল বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সাহায্যে ইরানের নিক্ষেপ করা তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সবগুলোকেই ভূপাতিত করেছে। তারা আরো বলছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের একটি বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে, তবে তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। তারপরও রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান তাদের অভিযানকে সফল বলে বর্ণনা করেন। গবেষণা কেন্দ্র ইউএস ইন্সটিটিউট অফ পিস-এর মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা স্টাডিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা ইয়াকুবিয়ান বলেন, ইরান দামেস্কে হামলার প্রতিশোধ নেয়া এবং ইসরাইলকে আরো হামলার জন্য উস্কে দেয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে দু’পক্ষেরই (ইরান এবং ইসরাইল) সম্ভব বিজয় দাবি করা এবং খাদের কিনারা থেকে সরে আসা। বিশেষ করে যেহেতু ইসরাইলে কোনো বেসামরিক লোক মারা যায়নি।’ ইসরাইলে কট্টরপন্থীরা পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু অন্যান্যরা সংযত হওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তারা বলছে, ইসরাইলের উচিত আরব দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়া। ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, ‘আমরা একটা আঞ্চলিক জোট গঠন করব এবং ইরানের কাছ থেকে একটি মূল্য আদায় করব, যার সময় এবং পদ্ধতি আমাদের সুবিধা অনুযায়ী হবে।’ বিশ্লেষণকারীরা বলছেন, ইরান একটি বার্তা দিয়েছে যে প্রয়োজনে তারা সংঘাত আরো বিস্তৃত করতে প্রস্তুত এবং ইসরাইলের সাথে ‘ছায়া যুদ্ধের’ নিয়মাবলী তারা বদলে দিয়েছে। সুইডিশ ডিফেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাটেজিক উপদেষ্টা ম্যাগনুস র‌্যানস্টরপ বলেন, ‘এটা ছিল একটা সাবধানতা বার্তা, যার সারমর্ম ছিল ইসরাইল যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তার পরিণতি থাকবে।’ গাজার যুদ্ধ যে গোটা অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে, ইরানের আক্রমণ সেই শঙ্কা আবার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু ইরান বলছে যে তারা সমগ্র অঞ্চলে পুরদমে যুদ্ধ চাইছে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দোল্লাহিয়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় বলেন, ‘আক্রান্ত না হলে এই সময়ে ইরানের আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।’ ইরান জোর দিয়ে বলছে, তারা ইসরাইলের সেই সব স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে যেগুলো দামেস্ক হামলায় জড়িত ছিল। কোনো বেসামরিক বা অর্থনৈতিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়নি। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল অভিযান শুরু করার পর থেকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো সামরিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল, আর তেহরান দূরত্ব বজায় রাখছিল। লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ করে। ইয়েমেনের হাউছিরা লোহিত সাগরে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ করে। ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। এখন ইরান তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর ওপর নির্ভর না করে ‘ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি’ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কারনেজি মিডল ইস্ট সেন্টারের পরিচালক মাহা ইয়াহিয়া। কিন্তু তারপরও ইরান শুধু অল্প কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছে। ভয়েস অব আমেরিকা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
ইস্তানবুলে বিষাক্ত মদ পানে ৩৩ জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৩২ জন
চিকি‍ৎসার নামে ২০০ রোগিনীকে যৌন হেনস্থা
অলিম্পিকের মেডেলও ছাপ ফেলল ‘কেলেঙ্কারি’?
নেতানিয়াহুকে অস্ত্র সরবরাহ করা গণহত্যার শামিল : বার্নি স্যান্ডার্স
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ