হুমকির মুখে পদত্যাগ করতে চাইছেন জার্মানির মেয়ররা

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম

জার্মানির স্থানীয় রাজনীতিতে প্রায় ১১ হাজার মেয়রের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু হুমকির মুখে তাদের অনেকে এখন পদত্যাগ করতে চাইছেন। এই মেয়ররাই দেশটির মাঠ পর্যায়ের রাজনীতির মোকাবিলা করেন। কিন্তু সেখানে ক্রমাগত বিপদ বাড়ছে। সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্টও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। স্থানীয় রাজনীতির উদ্বেগ ও সমস্যা সম্পর্কে জানতে গত ১১ এপ্রিল তিনি এবং ক্যুরবার ফাউন্ডেশন ৮০ জন সম্মানসূচক পদবীতে থাকা মেয়রকে আমন্ত্রণ জানান। তারা অনেক সময় বেতন ছাড়াই এই দায়িত্ব পালন করেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফোরসাকে দিয়ে এ বিষয়ে একটি জরিপ করিয়েছে ক্যুরবার ফাউন্ডেশন। জরিপে ছোট শহরের ৪০ শতাংশ মেয়র জানিয়েছেন তারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে আশেপাশের মানুষজনদের কাছ থেকে বিদ্রুপ, হুমকি বা এমনকি শারীরিক আক্রমণের মুখেও পড়েছেন। ২০২১ সালে ফোরসার করা আগের জরিপে পূর্ণকালীন নির্বাচিত মেয়রদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৫৭ শতাংশ। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে প্রতি চারজনের একজন মেয়র রাজনীতি ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন। এমনকি জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পৌরসভার নাগরিকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন। প্রতি পাঁচজনের একজন নিজের এলাকায় গণতন্ত্রবিরোধী মনোভাব বাড়ার কথা জানিয়েছেন। সংখ্যাটি পূর্ব জার্মানির ক্ষেত্রে চারজনে একজন, যেখানে সেপ্টেম্বরে তিনটি রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জার্মানির ক্ষমতাসীন মধ্য-বাম রাজনৈতিক দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) সদস্য মিশায়েল ম্যুলার মনে করেন ঠুরিঙ্গিয়ায় তার নিজের শহর ভাল্টার্সহাউসেনে নিরাপত্তা হুমকি ক্রমাগত বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তার বাড়ির সামনে দুবৃত্তরা অগ্নিসংযোগকারী ডিভাইস বসিয়ে যায়। রাতে তার গাড়িতে আগুন ধরে যা পরে তার বাড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে। সৌভাগ্যক্রমে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন তিনি। এর কিছুদিন আগে ম্যুলার উগ্র-ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছেন না তিনি। এই ধরনের ঘটনা রাজনীতির প্রতি মানুষকে বিমুখ করে তুলবে বলে তার মত। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই ভাবছে, সমাজের জন্য আমার সময় বিলিয়ে দেয়ার আদৌ কোনো মানে আছে কিনা যার বিনিময়ে আমি বরং হুমকি পাচ্ছি।’’ এমন অবস্থায় সামনের দিনে সিটি কাউন্সিলর, স্থানীয় কাউন্সিল কিংবা মেয়র পদে লোকজন খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তার। জার্মানির অন্যতম বৃহৎ শহর কোলনের মেয়র হেনরিট্টে রেকা ২০১৫ সালে মৃত্যু থেকে রেহাই পেয়েছেন। নির্বাচনের একদিন আগে কট্টর ডানপন্থি এক ব্যক্তি তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করে। ২০০৭ সালে আল্টেনা নামের আরেক শহরের মেয়রের উপর একইভাবে শরণার্থী বিদ্বেষী এক ব্যক্তি হামলা চালান। ২০১৯ সালে মধ্য জার্মানির কাসেল জেলার প্রধান ওয়াল্টার লুবকে এক উগ্র-ডানপন্থির হাতে প্রাণ দেন, যা গোটা দেশকে নাড়া দেয়। এর বাইরে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের প্রতিনিয়ত নানা হয়রানি ও হুমকির মধ্যে থাকতে হয়। যার মধ্যে আছে: বাড়ির সামনের বাগানে ফাঁসির প্রতীকী মঞ্চ রেখে যাওয়া, চিঠির বাক্সে পশুর লাশ রাখা, হুমকি দিয়ে মেইল পাঠানো প্রভৃতি। ব্রান্ডেনবুর্গের সসেন শহরের মেয়র উইবকে সাহিন-সোয়ার্ৎজভেলার জোট সরকারের সঙ্গী ফ্রি ডেমোক্রেটিক পার্টির (এফডিপি) সদস্য। ২০১৯ সালের নির্বাচনি প্রচারে তিনি সরাসরি হুমকি পেয়েছেন বলে জানান। এমনকি তর্কি বংশোদ্ভুত তার স্বামীও অপবাদের শিকার হন। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের মতো স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সাঁজোয়া লিমুজিন বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার সুবিধা নেই। কিন্তু সাহিন-সোয়ার্ৎজভেলার হাল ছাড়েননি। তিনি প্রেসিডেন্ট স্টাইনমায়ারের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ রেখে চলছেন এবং সচেতনতা তৈরির কাজ করছেন। তার এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে একটি নতুন পোর্টাল চালু হয়েছে, যা স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সহায়তা করে। ডয়চে ভেলে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার
ইস্তানবুলে বিষাক্ত মদ পানে ৩৩ জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক ৩২ জন
চিকি‍ৎসার নামে ২০০ রোগিনীকে যৌন হেনস্থা
অলিম্পিকের মেডেলও ছাপ ফেলল ‘কেলেঙ্কারি’?
নেতানিয়াহুকে অস্ত্র সরবরাহ করা গণহত্যার শামিল : বার্নি স্যান্ডার্স
আরও

আরও পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

ভারতীয় ৭২ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য প্রচার

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরো ৪৭

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

প্লাটফর্ম বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

শক্তিশালী অর্থনীতি ও গর্বিত জাতি গড়তে শহীদ জিয়ার দর্শন ধারণ করতে হবে : আমির খসরু

কী আছে তৌফিকার লকারে?

কী আছে তৌফিকার লকারে?

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

ঘটনার তিনদিন পর থানায় মামলা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

অনিয়ম ঢাকতে তড়িঘড়ি করে নির্বাচনের পাঁয়তারা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের দুরবস্থা

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৯৬টি সিএনজি ভাঙ্গাড়ি হিসাবে সাড়ে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ

৩১ দফা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে রূপগঞ্জে বিএনপির সমাবেশ