মার্কিন হুঁশিয়ারি উপেক্ষা মার্কিন বোমায় মারা গেছেন ফিলিস্তিনিরা, বাইডেনের স্বীকারোক্তি ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় প্রায় ১৫ হাজার শিশু নিহত

রাফায় অভিযান শুরু ইসরাইলের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম


বাইডেনের হুঁশিয়ারির কোনো তোয়াক্কা না করেই রাফায় হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইল। গতকাল রাফায় হামলা চালানো হয়েছে। এর আগে বাইডেন ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন যে, ইসরাইল যদি দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে আক্রমণ চালায় তবে তিনি তাদের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। হামাসের সঙ্গে সংঘাত চলাকালীন প্রথমবারের মতো এটাই ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা ছিল। কিন্তু বাইডেনের এই সতর্কবার্তা কানে তোলেনি ইসরাইল। তারা ইতোমধ্যেই রাফায় ট্যাঙ্ক মোতায়েন করেছে এবং সেখানে অভিযান শুরু হয়েছে। রাফাকে হামাসের শেষ ঘাঁটি উল্লেখ করে সেখানে অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে রাফায় ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছে। পরবর্তীতে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। এদিকে রাফায় হামলা না চালানোর বিষয়ে বাইডেনের সতর্কবার্তাকে হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছে ইসরাইল। সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনি ভূখ-ে মার্কিন বোমা নিক্ষেপের ফলে বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনারও নিন্দা জানান বাইডেন। মিশরীয় সীমান্তের কাছে অবস্থিত রাফা শহরে আশ্রয় নিয়েছে লাখ লাখ অসহায় ফিলিস্তিনি। তাদের এখন আর কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা নেই। গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালায়নি। এখন যদি ইসরাইল রাফায় পূর্ণ মাত্রায় হামলা চালায় তবে আশ্রয়হীন এসব মানুষ কোথায় যাবে?

রাফা শহরে ইসরাইল বড় ধরনের হামলা চালাতে প্রস্তুত এমন উদ্বেগ থেকে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে বোমার একটি চালান বন্ধ করার পরেই নতুন করে সতর্কবার্তা দেয়া হলো। ইসরাইলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাইডেন বলেন, যদি তারা রাফায় হামলা চালায় তবে আমি তাদের অস্ত্র সরবরাহ করবো না। রাফায় হামলা চালানোর জন্য যেসব অস্ত্র এবং কামানের গোলা ব্যবহার করা হয়েছে তা সরবরাহ করব না। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আগেই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি রাফায় আক্রমণ করবেন। ব্যক্তিগতভাবে বেশ কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিষয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত নন। তিনি রাফায় হামলা চালানোর পক্ষপাতি নন।

মার্কিন বোমায় মারা গেছেন ফিলিস্তিনিরা, বাইডেনের স্বীকারোক্তি : গাজায় ইসরাইলি হামলায় অনেক বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার বাইডেন এসব কথা বলেন। একই সঙ্গে তিনি রাফাতে নতুন করে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের কঠোর সমালোচনা করেন। হোয়াইট হাউসে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, গাজা ও ইসারাইলের মধ্যে চলা সংঘর্ষে ৩৪ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে অনেক নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে হাজার হাজার শিশুও রয়েছে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, লাখ লাখ মানুষ খাদ্য, পানীয় বা অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারছে না এবং অনেক পরিবার কেবল একজনকে নয়, অনেক আত্মীয়কে হারিয়েছে। এটি হৃদয়বিদারক।’ বাইডেন বলেন, ‘গাজায় ও ইসরাইলে হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি নিরপরাধ জীবন এক একটি ট্র্যাজেডি। যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের উভয়ের জন্য এবং শোকার্ত পরিবারের সবার জন্য আমরা প্রার্থনা করি।’ তিনি আরো বলেন, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তির বিষয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তি ‘অন্তত ছয় সপ্তাহ সময়ের জন্য গাজায় টেকসই ও সবার জন্য ভালো সময় নিয়ে আসবে। পরে এটি হয়তো আমরা আরও কিছু সময় স্থায়ী করতে পারি।’ বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরাইলের প্রতিরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়বদ্ধ। তাই তারা আয়রন ডোম রকেট ইন্টারসেপটার দেবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র একটি বিভাজনরেখাও তৈরি করেছে। ইসরাইল যদি রাফাতে আক্রমণ করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেবে না।’

৭ অক্টোবর থেকে গাজায় প্রায় ১৫ হাজার শিশু নিহত : গাজা কর্তৃপক্ষের প্রেস সার্ভিস তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, ৭ অক্টোবর, ২০২৩-এ ইসরাইলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতের আরেক দফা বৃদ্ধির পর থেকে গাজা উপত্যকায় কমপক্ষে ১৫,০০২ শিশু মারা গেছে। প্রেস সার্ভিসের মতে, অপুষ্টিতে অন্তত ৩০ শিশু মারা গেছে। উপরন্তু, প্রায় ১৭,০০০ নাবালক এতিম হয়েছে বা লড়াইয়ের ফলে তাদের একজন বাবা-মাকে হারিয়েছে। সূত্র : আল-জাজিরা, তাস, এএফপি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে-  উপদেষ্টা শারমীন

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে- উপদেষ্টা শারমীন

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক :  শামীম তালুকদার

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী  গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল

ফ্যাসিবাদের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে সক্রিয় ছিল ইবি ছাত্রদল