হাত ও চোখ বেঁধে ডায়াপার পরিয়ে ফেলে রাখা হয় ফিলিস্তিনিদের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১২ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১২ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ইসরাইলের নেগেভ মরুভূমিতে থাকা কারাগারটিতে এখন বন্দির সংখ্যা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। এই কারাগারে কর্মরত এক ইসরাইলি বন্দিদের দুটি ছবি তুলেছিলেন। সেই দৃশ্য এখন তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। একটি ছবিতে দেখা গেছে, ধূসর ট্র্যাকস্যুট পরা ফিলিস্তিনি পুরুষদের সারি বেঁধে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা একটি জায়গায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের সবার চোখ বাঁধা। তাদের মাথার ওপর ফ্লাডলাইটের তীব্র আলো। কারগারটিতে কর্মরত এক ইসরাইলি জানিয়েছেন, বন্দিদের রাখার স্থানটি দুর্গন্ধে পূর্ণ। এখানে পুরুষদের কথা বলা নিষেধ। তাই তারা নিজের সঙ্গে নিজেই বিড়বিড় করে কথা বলেন। ওই ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল তাদের যেন নড়াচড়া করতে দেওয়া না হয়। তাদের সোজা হয়ে বসতে হবে। তাদের কথা বলতে দেওয়া হবে না। তাদের চোখ বাঁধা থাকবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, রক্ষীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল চিৎকার করে ‘উসকট’ বলতে,যার অর্থ চুপ থাক এবং ‘সমস্যাযুক্ত লোকদের বাছাই করতে এবং তাদের শাস্তি দিতে।’ এখানে থাকা অনেক বন্দির হাতে সারাক্ষণ হাতকড়া থাকে। টানা আবদ্ধ থাকায় অনেক সময় অকেজো হয়ে যায় বিধায় বন্দিদের হাত কেটে ফেলতে হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য এই বন্দিশিবির গবেষণার স্বর্গরাজ্য। তাদের আনাড়ি চিকিৎসার কারণে বন্দিদের পঁচন ধরে যাওয়া অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। এখানকার বাতাসে ভেসে বেড়ায় বন্দিদের পঁচে যাওয়া অঙ্গের দুর্গন্ধ। সিএনএন গোপন তথ্য ফাঁসকারী তিনজন ইসরাইলির সঙ্গে কথা বলেছে। তারা গাজায় ইসরাইলের কট্টরপন্থী নীতির সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে আইনি প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিশোধের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই কথা বলেছেন। তবে তারা কেউ নিজেদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি। তাদের বিবরণ অনুসারে, গাজা সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ মাইল দূরে অবস্থিত কারাগারটি দুই ভাগে বিভক্ত- একটি অংশে গাজা থেকে আনা প্রায় ৭০জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে চরম শারীরিক নিপীড়নের মধ্যে রাখা হয় এবং একটি ফিল্ড হাসপাতাল যেখানে আহত বন্দিদের তাদের বিছানায় বাঁধা হয়। এই বন্দিদের ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয় এবং স্ট্র এর মাধ্যমে খাওয়ানো হয়। হাসপাতালের অংশে কাজ করা এক ইসরাইলি বলেন, ‘মানুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ এমন সবকিছু তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের জন্য এদের মারাধর করা হয় না। প্রতিশোধের জন্য তাদের মারধর করা হয়। এটি হচ্ছে, ৭ অক্টোবর যা করেছিল (ফিলিস্তিনিরা) তার জন্য শাস্তি এবং শিবিরে আচরণের শাস্তি।’ কারাগারটিতে রক্ষী হিসাবে দায়িত্ব পালন করা আরেক ইসরাইলি জানান, রাতে রক্ষীরা ঘুমন্ত বন্দিদের ওপর কুকুর ছেড়ে দিত। বন্দিদের সেলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে মারত সেনারা। এতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়তো বন্দিরা। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি চিকিৎসক আল-রান বলেন, ‘আমাদের যখন তার দিয়ে বেঁধে আটকানো হয়েছিল, তখন তারা কুকুরগুলোকে ছেড়ে দিত। এগুলো আমাদের মধ্যে চলাচল করতো এবং আমাদের শরীরের ওপর দিয়ে হেটে যেত। আপনি আপনার পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকবেন, আপনার মুখ মাটিতে চাপা থাকবে। আপনি নড়াচড়া করতে পারবেন না এবং তারা আপনার উপরে চলে যাচ্ছে।’ ইসরাইলি ওই কারারক্ষী বলেন, ‘এটি ছিল সামরিক পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট যারা তথাকথিত অনুসন্ধান চালাতো। কিন্তু আদতে এটি তাদের আঘাত করার একটি অজুহাত ছিল। এটা একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ছিল। মানুষের চিৎকার আর কুকুরের ঘেউ ঘেউ।’ সিএনএন।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্রতিদিন বাসার খাবার নিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান

প্রতিদিন বাসার খাবার নিয়ে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান তারেক রহমান

ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় তিন দিনে নিহত ৯ জন, আহত-৩৫

ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় তিন দিনে নিহত ৯ জন, আহত-৩৫

ডিমলায় মোটরসাইকেলে মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন আহত

ডিমলায় মোটরসাইকেলে মুখোমুখি সংঘর্ষে পাঁচজন আহত

মাসের ব্যবধানে বরিশালের বাজারে সবজির মূল্য ৮০ ভাগ হ্রাস

মাসের ব্যবধানে বরিশালের বাজারে সবজির মূল্য ৮০ ভাগ হ্রাস

লক্ষ্মীপুরে ৩ দফা দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন

লক্ষ্মীপুরে ৩ দফা দাবিতে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের মানববন্ধন

কলাপাড়ায় জুয়েলার্সের মালিকের বাসায় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হানা, ৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দুই লাখ টাকা লুটের অভিযোগ

কলাপাড়ায় জুয়েলার্সের মালিকের বাসায় সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হানা, ৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার দুই লাখ টাকা লুটের অভিযোগ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ

ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

ঢাকার বায়ু দূষণ বন্ধে ৭ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

কুমিল্লার সাথে নয়, নোয়াখালীর নামে বিভাগ চায় লক্ষ্মীপুরবাসী

কুমিল্লার সাথে নয়, নোয়াখালীর নামে বিভাগ চায় লক্ষ্মীপুরবাসী

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা, নেই লিটন ও হাসান মাহমুদ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা, নেই লিটন ও হাসান মাহমুদ

সেতু নির্মাণকাজ বন্ধে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে ২ উপজেলাবাসি

সেতু নির্মাণকাজ বন্ধে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে ২ উপজেলাবাসি

জেলবন্দিদের মুক্তি, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পূনঃবহালের দাবিতে কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ

জেলবন্দিদের মুক্তি, চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পূনঃবহালের দাবিতে কুড়িগ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন- সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন- সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত বেড়ে ১৬, ইরান চায় উদ্ধারকর্মী পাঠাতে

লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলে মৃত বেড়ে ১৬, ইরান চায় উদ্ধারকর্মী পাঠাতে

পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জনে ব্রতী হতে হবে সিআইডি প্রধান- মো.মতিউর রহমান শেখ

পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জনে ব্রতী হতে হবে সিআইডি প্রধান- মো.মতিউর রহমান শেখ

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণা করলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক

নোয়াখালীর হকার্স মার্কেটে আগুন, ব্যবসায়ীদের দাবি পূর্বপরিকল্পিত

নোয়াখালীর হকার্স মার্কেটে আগুন, ব্যবসায়ীদের দাবি পূর্বপরিকল্পিত

দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে গোয়ালন্দের পেঁয়াজ চাষীরা

দাম কম হওয়ায় লোকসানের মুখে গোয়ালন্দের পেঁয়াজ চাষীরা

আ.লীগ এমপির সঙ্গে বিনামূল্যে বিশ্বকাপ দেখেছেন টিউলিপ : প্রতিবেদন দ্য টেলিগ্রাফের

আ.লীগ এমপির সঙ্গে বিনামূল্যে বিশ্বকাপ দেখেছেন টিউলিপ : প্রতিবেদন দ্য টেলিগ্রাফের

পাথালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হুমকি প্রদান, থানায় জিডি

পাথালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হুমকি প্রদান, থানায় জিডি