যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনের অধিকার পাস

গাজায় আগ্রাসনে বিশ্বে ক্ষোভ বাড়ছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে

Daily Inqilab ফরচুন

১৩ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম

জাতিসঙ্ঘের পূর্ণ সদস্য হওয়ার প্রস্তাবে পক্ষে ভোট যুদ্ধে আরও অনেকটাই এগিয়ে গেল ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনকে নতুন অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য শুক্রবার বিশ^ সংস্থাটির সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত ভোটে ১শ’ ৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ১শ’ ৪৩টি দেশ এবং জাতিসংঘের ১শ’ ৯৪তম সদস্য হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনের অনুরোধকে ‘ইতিবাচকভাবে’ পুনর্বিবেচনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসঙ্ঘে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং ফিলিস্তিনের পেশকৃত প্রস্তাবটি বিপুল ভোটের ভিত্তিতে অনুমোদন করলেও এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলসহ নয়টি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, মাইক্রোনেশিয়া, পালাউ, পাপুয়া নিউ গিনি ও চেক প্রজাতন্ত্র। এছাড়া, ২৫টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে বলেছে যে, ইসরাইলের সাথে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে নিরাপত্তা, সীমানা ও জেরুজালেমের ভবিষ্যত সহ মূল সমস্যাগুলির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এটি ফিলিস্তিনের সদস্যপদ ও সার্বভৌমত্বে বাধা দেবে এবং একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে। গত মাসেও নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির একটি প্রস্তাব উঠলে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে তা খারিজ হয়ে যায়।

ভোটের আগে সাধারণ সভায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর একটি আবেগপূর্ণ বক্তব্যে বলেন, ‹কোন শব্দই ফিলিস্তিনিদের, তাদের পরিবার, সম্প্রদায় ও সামগ্রিকভাবে আমাদের জাতির জন্য এই ক্ষতি এবং ক্ষতের গভীরতা বোঝাতে পারবে না। ইসরাইল কর্তৃক রাফা গ্রাস করার মাধ্যমে গাজার ফিলিস্তিনিদেরকে উপত্যকার একেবারে শেষে, জীবনের একেবারে প্রান্তে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’

মনসুর মনসুর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বিন ইয়ামিন নেতানিয়াহুকে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করতে লক্ষ্যে হাজার হাজার হত্যার এবং ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন, যা ব্যাপক বৈশ্বিক সমর্থনকে প্রতিফলিত করেছে।

শুক্রবারের ভোট জাতিসঙ্ঘের অসংখ্য কাউন্সিল ও সমাবেশে গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক বিপর্যয় এবং ৩৪ হাজারেরও বেশি মানব হত্যায় অনেক দেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এটি দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে আশ্রয় নেয়া ১৩ লাখ ফিলিস্তিনির ওপর একটি বড় ধরণের ইসরাইলি আক্রমণের আশঙ্কার মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ক্রমবর্ধমান সমর্থনেরও প্রকাশ ঘটিয়েছে।

শুক্রবারের প্রস্তাবটির পক্ষে জাতিসঙ্ঘ সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের প্রয়োজন ছিল এবং ন্যূনতম ১শ’ ১৮ ভোটের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি ভোট অর্জন করে ফিলিস্তিন। ফ্রান্স, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, এস্তোনিয়া এবং নরওয়ে সহ মার্কিন মিত্ররা এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় দেশগুলো ছিল অত্যন্ত মত বিভক্ত।

এর আগে, গাজায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে গত ২৭ অক্টোবর সাধারণ পরিষদের একটি প্রস্তাব ১শ’২০ বনাম ১৪ ভোটে অনুমোদিত হয়েছিল, যেখানে ৪৫টি দেশ ভোট দান থেকে বিরত থাকে। এটি ছিল দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইল তার সামরিক আক্রমণ শুরু করার কয়েক সপ্তাহ পরের ঘটনা, যাতে ১২শ’ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিল।

ফিলিস্তিন বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ সদস্য-বহির্ভূত পর্যবেক্ষকের মর্যাদা ভোগ করছে। যদিও শুক্রবারের গৃহীত প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনকে কিছু নতুন অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা দেবে, কিন্তু দেশটি এখনও জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ এবং সাধারণ পরিষদে বা এর যে কোনও সম্মেলনে ভোট দেওয়ার অধিকার পাচ্ছে না।
কূটনীতিকদের মতে, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের সদস্যপদের দৃঢ় সমর্থক চীনের সাথে তাইওয়ান এবং রাশিয়ার সাথে কসোভো সম্পর্কিত ভবিষ্যত উদ্বেগগুলিকে মোকাবেলা করার জন্য দেশ দুইটি ব্যতিক্রমীভাবে ফিলিস্তিনের জন্য অধিকার এবং সুযোগ-সুবিধাগুলি পেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জাতিসঙ্ঘের গৃহীত প্রস্তাবটি ফিলিস্তিনকে যা দিচ্ছে, তা হল ফিলিস্তিনি এবং মধ্যপ্রাচ্য সহ সমস্ত বিষয়ে কথা বলার অধিকার, আলোচ্য বিষয়ের প্রস্তাবনা এবং বিতর্কে উত্তর দেয়ার এবং জাতিসঙ্ঘের প্রধান পরিষদে প্রস্তাব পরিবেশন করার অধিকার। এটি ফিলিস্তিনকে ভোটাধিকার ব্যাতিত জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়।

ফিলিস্তিন কোনো ভোট দেয়ার অধিকার না পেলেও, এই পদক্ষেপ দেশটিকে জাতিসংঘে যুক্ত করার পক্ষে এটি একটি বৈশ্বিক স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করবে। ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা থাকবে। তবে, মার্কিন কংগ্রেসের দীর্ঘস্থায়ী আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে পূর্ণ সদস্যপদ প্রদানকারী জাতিসংঘের সংস্থাগুলির তহবিল বন্ধ করতে হবে, যার অর্থ হবে, সংস্থটির সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষকের কাছ থেকে জাতিসংঘে বকেয়া এবং স্বেচ্ছায় অবদানের একটি সমাপ্তি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২,মানবিক সংকট চরমে

ইসরায়েলি বর্বর হামলায় গাজায় নিহত আরও ৩২,মানবিক সংকট চরমে

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত

চাটমোহর পৌর বিএনপির কাউন্সিলে আরশেদ-তাইজুল-সিন্টু নির্বাচিত

‘একদল খাইছে আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’ কথাটি ছিল ভেরি জেনারেল: আজহারী

‘একদল খাইছে আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’ কথাটি ছিল ভেরি জেনারেল: আজহারী

নোয়াখালীর মাইজদী হর্কাস মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

নোয়াখালীর মাইজদী হর্কাস মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল জাবি ছাত্রদল

ছাত্রলীগ কর্মীকে পুলিশে দিল জাবি ছাত্রদল

গরু চুরি করে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রীর ভূরিভোজ, অতঃপর...

গরু চুরি করে বিএনপি নেতা ও তার স্ত্রীর ভূরিভোজ, অতঃপর...

মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ভাই আটক

মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ভাই আটক

থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই যুবদল নেতা গ্রেফতার

থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া সেই যুবদল নেতা গ্রেফতার

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী