রাফায় ইসরাইলি হামলা আরো জোরদার, বাস্তুচ্যুত ৬ লাখ মানুষ

হামলা বন্ধ না করলে ইইউ’র সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটবে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম

গাজার রাফায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে হুমকি দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপের ২৭ দেশের এই জোট ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছে, রাফায় হামলা বন্ধ না করলে ইইউর সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। বুধবার ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরাইলকে হুমকি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল রাফায় সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখলে অনিবার্যভাবে ইসরাইলের সঙ্গে ইইউর সম্পর্কের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বিবৃতিতে ইইউ আরও বলেছে, রাফায় অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে ইসরাইলকে আহ্বান জানাচ্ছে ইইউ। এই অভিযান বন্ধ না হলে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম আরও বেশি ব্যাহত হবে। এতে নতুন করে বিপুলসংখ্যক মানুষ উদ্বাস্তু হবে, দেখা দেবে দুর্ভিক্ষ। মানুষের দুর্দশা আরও বাড়বে। বিবৃতিতে ইইউ বলেছে, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার থাকলেও তাদের সেটা (সামরিক অভিযান) করতে হবে আন্তর্জাতিক আইন মেনে ও বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সাত মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই উপত্যকার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় অর্ধেক গাজার দক্ষিণের রাফায় ঠাঁই নিয়েছেন। এসব ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে সম্প্রতি রাফায় স্থল অভিযান শুরু করে ইসরাইল। এমন পরিস্থিতিতে রাফায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে এভাবে হুমকি দিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্যদিকে, সাত মাসের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ে ইসরাইলের বর্বর হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এই আগ্রাসনে নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এবার জাতিসংঘও এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি বলছে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনিদের অন্তত ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। সাত মাস ধরে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় ফিলিস্তিনের গাজার বেশির ভাগ এলাকাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন অবরুদ্ধ এই ভূখ-টির রাফা শহরে অভিযান চালাচ্ছে তারা। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই শহরে ইসরাইলি হামলা আরও জোরদার করা হয়েছে। এমন অবস্থায় শহরটি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৬ লাখ মানুষ। গত ৬ মে থেকে শহরটি ছেড়ে পালিয়েছেন তারা। অন্যদিকে রাফা শহরের পাশাপাশি উত্তর গাজার জাবালিয়াতেও হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম । গত ৬ মে থেকে রাফার প্রায় ৬ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই পরিসংখ্যান সামনে এনেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইসরাইলি অভিযানে গত ৬ মে থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ৬ লাখ মানুষ বা গাজার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। উপরন্তু জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়ের কার্যালয় দক্ষিণ গাজার এই শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার বিষয়েও সর্বশেষ তথ্য দিয়েছে। গত ১৪ এবং ১৫ মে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী উত্তর গাজার ১৯টি এলাকার বাসিন্দাদের সমস্ত বা আংশিক স্থানান্তরে দুটি নতুন আদেশ জারি করেছে। এতে করে রাফা এবং উত্তর গাজায় গত ৬ মে থেকে জারি করা আদেশের সংখ্যা পাঁচে পৌঁছাল।’ জাতিসংঘের পরিসংখ্যান বলছে, গত ৬ মে থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া প্রায় ৬ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার মানুষ গত ৪৮ ঘণ্টায় রাফা থেকে পালিয়ে গেছেন। মূলত যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সতর্কতা সত্ত্বেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী রাফাতে স্থল সৈন্য পাঠানোর কাজ অব্যাহত রেখেছে। গাজায় সাত মাস যুদ্ধের পর ইসরাইল জোর দিয়ে বলছে, রাফা দখল এবং হামাসের শেষ অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলোকে নির্মূল করা ছাড়া ‘বিজয় অর্জন’ অসম্ভব। কিন্তু জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলো সতর্ক করে বলেছে, রাফাতে সর্বাত্মক হামলা হলে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে এবং মানবিক বিপর্যয় প্রকট আকার নিতে পারে। আল-জাজিরা, বিবিসি।

 

 

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বৈষম্য কতটা প্রকট: সাধারণের অবস্থান কোথায়

কোরআন তেলাওয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করে: কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

কোরআন তেলাওয়াত আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি দান করে: কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ

ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পাননি আপিল বিভাগ

ড. ইউনূসের ৫ মামলা বাতিলের রায়ে আইনি দুর্বলতা পাননি আপিল বিভাগ

শেরপুরে জামায়াতের দিনব্যাপী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত

শেরপুরে জামায়াতের দিনব্যাপী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত

চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায় এক অচেতন সেনা সদস্য উদ্ধার

চুয়াডাঙ্গা শহরের জান্নাতুল মাওলা কবরস্থান থেকে হাত-পা মুখ বাঁধা অবস্থায় এক অচেতন সেনা সদস্য উদ্ধার

আফগানিস্তানে এবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের

আফগানিস্তানে এবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের

মাওলানা মামুনুল হক আমির জালালুদ্দীন মহাসচিব নির্বাচিত

মাওলানা মামুনুল হক আমির জালালুদ্দীন মহাসচিব নির্বাচিত

বসুন্ধরায় ফ্যাশন ব্রান্ড ‘হিজাবিয়ানা’র আউটলেট উদ্বোধন

বসুন্ধরায় ফ্যাশন ব্রান্ড ‘হিজাবিয়ানা’র আউটলেট উদ্বোধন

‘সরকার এতই যোগ্য যে, থানা থেকে ওসি পালিয়ে যায় কিন্তু টেরই পায় না’: মাহমুদুর রহমান মান্না

‘সরকার এতই যোগ্য যে, থানা থেকে ওসি পালিয়ে যায় কিন্তু টেরই পায় না’: মাহমুদুর রহমান মান্না

সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য, আংশিক নয়: কাদের গনি চৌধুরী

সাংবাদিকতা হতে হবে পুরো সত্য, আংশিক নয়: কাদের গনি চৌধুরী

জিয়া পরিবারের জন্য বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকে আছে - যুবদল নেতা রেজাউল কবীর পল

জিয়া পরিবারের জন্য বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকে আছে - যুবদল নেতা রেজাউল কবীর পল

বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট

বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট

কুষ্টিয়ায় ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত-৩

কুষ্টিয়ায় ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত-৩

তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

২০২৪ সালে সড়কে নিহত ৭ হাজারের বেশি, দায় নিলেন সড়ক উপদেষ্টা

২০২৪ সালে সড়কে নিহত ৭ হাজারের বেশি, দায় নিলেন সড়ক উপদেষ্টা

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

মাদারীপুরের কালকিনিতে মটরসাইকেলের ধাক্কায় কিশোর নিহত

মাদারীপুরের কালকিনিতে মটরসাইকেলের ধাক্কায় কিশোর নিহত

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন ড. ইউনুস

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিলেটে একটি হাসপাতাল উদ্বোধন করলেন ড. ইউনুস

বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার কমিটি গঠন

বাংলাদেশ মাঠ প্রশাসন প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার কমিটি গঠন

জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে : ড. বিধান রঞ্জন

জানুয়ারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে : ড. বিধান রঞ্জন