ভারতের মুসলিম জনসংখ্যা কি সত্যিই বিস্ফোরিত হয়েছে?
২০ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ১২:০২ এএম
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের (ইএসি) একটি নতুন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৫০ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা ৪৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এর বিপরীতে, ভারতের হিন্দু জনসংখ্যা ৪৩.১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এর বিপরীতে, দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনসংখ্যা ১৯৫০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৮৪.৬৮ শতাংশ থেকে ৭৮.০৬ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
ভারতের উত্তপ্ত জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে মোদি ও তার ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ক্রমবর্ধমানভাবে দাবি করে চলেছেন যে, বিরোধী দলগুলির মদদে মুসলমানরা ভারতর সম্পদ দখল করার ষড়যন্ত্র করছে এব ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হুমকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবেদনটি এর প্রকাশের সময় নিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ভারতে ১৯৫০ সালে থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে খ্রিস্টান জনসংখ্যা ৫.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শিখ জনসংখ্যা ১.৮৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে দেশটির বৌদ্ধ জনসংখ্যার অংশ ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.৮১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতে সংখ্যালঘুরা শুধু সুরক্ষিতই নয় বরং ব্যাপক উন্নতি লাভ করছে, যদিও একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন এবং তথ্য তালিকা দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতা হ্রাস পাওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছে।
নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য স্মৃতি ইরানি বলেছেন যে সরকারের প্রতিবেদনটি হিন্দুদের ক্ষয়-ক্ষতির এবং কংগ্রেসের উত্তরাধিকার সূত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি নির্যাতন ও অসম্মান প্রমাণ বহন করছে। বিজেপির জাতীয় তথ্য বিভাগের প্রধান অমিত মালভিয়া এক্সে বলেন, ‹হিন্দুদের জন্য কোনও দেশই থাকবে না›।
তবে, স্বাধীন গবেষণা সংস্থা পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়া’ মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে শঙ্কা ছড়ানোতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, ইএইস-এর প্রতিবেদনের ব্যাখ্যাগুলো শুধু ভুলই নয়, বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীনও বটে। উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ এবং যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সন্তোষ মেহরোত্রা বলেন, ‹প্রবন্ধটি গবেষণার নয়, গোষ্ঠির স্বার্থে করা হয়েছে।›
ইএসি-এর প্রতিবেদনটি একটি সমীক্ষার তথ্যের ভিত্তিতে করা, যা ভারতের সর্বশেষ জাতীয় আদমশুমারির তথ্য অনুমরণ করেনি। দেশটিতে শেষবার ২০১১ সালে জাতীয় আদমশুমারি পরিচালিত হয়েছিল। কোভিড-১৯-এর কারণে ২০২১ সালের আদমশুমারি স্থগিত করা হয়েছিল, কিন্তু মোদি সরকার এটির জন্য এখনও কোনও সময়সীমা ঘোষণা করেনি। জনসংখ্যাবিদ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আশিস গুপ্ত বলেন, ‹আদমশুমারির কোনও প্রতিস্থাপন নেই এবং এই অনুপস্থিত তথ্য ছাড়া নীতিমালার ক্ষেত্রে কিছুই করা সম্ভব না।›
ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ কট্টরপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ‹জনসংখ্যা জিহাদ› ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রচার করে আসছে, যা দাবি করে যে ভারতীয় মুসলমানরা হিন্দুদের ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিপ্রায়ে দ্রুত সন্তান উৎপাদন করে। কিন্তু, সমালোচকরা বলছেন যে, ১৯৫১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ৩ কোটি ৫৪ লাখ থেকে ১৭ কোটি ২০ লাখে উন্নীত হয়েছে। একই সময়ে হিন্দু জনসংখ্যা ৩০ কোটি ৩০ লাখ থেকে ৯ কোটি ৬০ লাখে উন্নীত হয়েছে, যা মুসলিমদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি।
বাস্তবে, ভারতের সকল প্রধান ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিমদের সন্তান উৎপাদনের হার সবচেয়ে দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। মোদি সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মুসলমানদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের হার ৪.৪১ শতাংশ থেকে কমে ২.৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে হিন্দুদের ক্ষেত্রে তা ৩.৩ শতাংশ থেকে কমেছে ১.৯৪ শতাংশে নেমেছে।
পুনর্নির্বাচনের প্রচারণা এগিয়ে চলার সাথে সাথে, মোদি ভারতের ২০ কোটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার ঘৃণাত্মক প্রচারণাকে দ্বিগুণ করেছেন, আপাতদৃষ্টিতে তাদের ‹অনুপ্রবেশকারী› বলে অভিহিত করেছেন এবং তাদের বহু-সন্তান উৎপাদনকারী হিসাবে উল্লেখ করেছেন। মেহরোত্রা বলেন, ‹এই সরকার তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বীজ বপনের জন্য তথ্যের অপব্যবহার করছে। গত ১শ’ বছর ধরে হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম জনসংখ্যা সম্পর্কে ভয় দেখাচ্ছে এবং এই প্রতিবেনটি সমালোচনা ছাড়াই সেই ইতিহাসে অবদান রাখছে।’
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন