রাশিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেন
০১ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৪, ১২:০৩ এএম
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রায় আড়াই বছর পর এক উল্লেখযোগ্য, নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। রুশ ভূখণ্ডে হামলার ক্ষেত্রে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন তিনি। নতুন নীতিমালার ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি হামলায় (প্রতিরক্ষা নয়) মার্কিন অস্ত্র ব্যবহারে আর কোনো বাধা থাকছে না। যদিও কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান শুরুর প্রথম থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররা কিয়েভকে অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে এসেছে। তবে শর্ত ছিল একটাই-এ অস্ত্র শুধু প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা যাবে। তবে সাম্প্রতিক সময় সুর পাল্টেছে জেলেনস্কির বেশিরভাগ পশ্চিমা মিত্র। মার্কিন কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, অনুমতি দেয়া হলেও শুধু খারকিভ অঞ্চলকে সুরক্ষা দিতে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করে ‘রুশ ভূখণ্ডে’ হামলা চালাতে পারবেন জেলেনস্কি। দীর্ঘ সময় থেকে এই বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের চাপে ছিলেন বাইডেন। তবে এ ধরনের উদ্যোগে এই যুদ্ধে সরাসরি ‘ন্যাটো’ জোট যুক্ত হয়ে পড়তে পারে, বা এমন কী, রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক পেশীশক্তির প্রদর্শনীতেও জড়িয়ে যেতে পারে জোটের সদস্যরা-এমন আশঙ্কায় এতদিন ইউক্রেনের অনুরোধে কান দেননি বাইডেন।
এক মার্কিন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, ‘প্রেসিডেন্ট (বাইডেন) সম্প্রতি তার দলকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করে খারকিভ অঞ্চলে পাল্টা-হামলা চালাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে। রুশ বাহিনী (রাশিয়ার) যেসব অবস্থান থেকে হামলা চালাচ্ছে বা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানেও হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেন।’ নাম না প্রকাশের শর্তে মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে দূর-পাল্লার অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আমাদের নীতির পরিবর্তন হয়নি।’ অপর এক মার্কিন কর্মকর্তা বাইডেনের নীতি পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সাম্প্রতিক সময় ইউক্রেনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের খারকিভ প্রদেশে তীব্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে রাশিয়া। মূলত নতুন এই অগ্রযাত্রা ঠেকাতেই নীতি বদলাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বেশ কিছুদিন ধরেই অস্ত্র-গোলাবারুদের অভাবে বিপাকে আছে কিয়েভ। এই সুযোগে রাশিয়া তাদের হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল খারকিভ দখলের উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা এমনও বলেছেন যে খারকিভ দখল করতে পারলে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ‘যুদ্ধ জয়ের’ ঘোষণাও দিতে পারেন।
এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ফ্রান্স ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। ‘ফ্রান্স ইউক্রেনে তার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন খবরে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে। আমি উল্লেখ করতে চাই যে, আমরা ৩ এপ্রিল এ ধরনের রিপোর্ট ঘোষণা করেছি। যদিও প্যারিস তার পেশাদার সৈন্যদের সংঘাতে জড়িত থাকার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছে, কিয়েভ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে এ ধরনের উন্নয়নের প্রচার করছে যাতে আবারও বিস্তৃত আন্তর্জাতিক সমর্থন দাবি করা যায় এবং তার ব্যর্থ সংহতি (সেনায় বাধ্যতামূলক বেসামরিক নাগরিক নিয়োগ) অভিযানকে শক্তিশালী করা যায়,’ কূটনীতিক উল্লেখ করেছেন।
যুদ্ধবাজরা ইস্তাম্বুল চুক্তি বাস্তবায়নে নাশকতা করেছে : রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির জন্য প্রস্তাবিত ইস্তাম্বুল চুক্তিগুলো নিয়ে নাশকতা করেছে যুদ্ধবাজ পশ্চিমা পরামর্শদাতার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান ইফেন-২০২৪ সামরিক মহড়ায় সেনাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার সময় এ কথা বলেছিলেন।
‘আমাদের পাশে, আমাদের কৃষ্ণ সাগরের প্রতিবেশী রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ তৃতীয় বছরে। দুর্ভাগ্যবশত, ইস্তাম্বুল প্রক্রিয়া, যার জন্য আমরা কাজ করেছি এবং যার লক্ষ্য ছিল ন্যায্য শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো, যুদ্ধ লবিস্টদের দ্বারা নাশকতা ও অবরুদ্ধ করা হয়েছিল যারা বাধা দিয়েছে,’ এরদোগান বলেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, ‘কখন এবং কীভাবে যুদ্ধ শেষ হবে তা কেউ জানে না, যা অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য আর্থিক ব্যয় ক্রমাগত বাড়ায়।’
আব্রামস ট্যাঙ্কগুলোকে ‘টিনের খালি ক্যান’ বলে উপহাস : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছর ইউক্রেনকে ৩১টি আব্রামস ট্যাঙ্ক প্রদান করেছিল যাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কিয়েভের জন্য একটি সম্ভাব্য গেম চেঞ্জার হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার আব্রামস ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে এবং রুশ সেনারা সেগুলোকে ‘টিনের খালি ক্যান’ বলে উপহাস করছে।
ইউক্রেন অভিযোগ করে আসছিল যে তাদের পুরানো সোভিয়েত যুগের ট্যাঙ্কগুলো কাদায় আটকে যাচ্ছে, গুলি চালানো যাচ্ছে না এবং ক্রমাগত ভেঙে পড়ছে। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মার্কিন ট্যাঙ্কগুলোও খুব একটা ভাল ফলাফল দেখাতে পারছে বলে মনে হচ্ছে। সিএনএন-এর সাথে কথা বলার সময়, ট্যাঙ্কগুলোতে কাজ করা ইউক্রেনীয় ক্রুরা বলেছে যে, আব্রামস এম ১ গুলোকে যতটা বলা হয় ততটা শক্তিশালী নয়। ‘এর বর্ম এ সময়ের জন্য যথেষ্ট নয়,’ জোকার (ছদ্মনাম) নামের একজন ক্রু সদস্য বলেছেন। ‘এটি ক্রুদের রক্ষা করে না। প্রকৃতপক্ষে, এটি ড্রোনের যুদ্ধের সময়। তাই এখন, যখন ট্যাঙ্কটি যুদ্ধে নামে, ড্রোনগুলো সর্বদা সেগুলোকে আঘাত করার চেষ্টা করে।’
ট্যাঙ্কগুলি সাধারণত ‘গোপন’ ইউরেনিয়াম বর্ম দিয়ে সজ্জিত করা হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দেয়া ট্যাঙ্কগুলোতে সেগুলোর পরিবর্তে ১৯৬০-এর দশকে ব্রিটেনে বিকশিত যৌগিক সিরামিক এবং ইস্পাত প্রতিরক্ষামূলক উপাদান চোভাম আর্মার দিয়েছে। ইউরেনিয়াম বর্ম রাশিয়ার হাতে চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। ইউক্রেনীয় ক্রুরা বলছেন যে, মৌলিক সমস্যা হল আব্রামগুলো বিমান শক্তি এবং আর্টিলারির সাহায্যে অগ্রগতির জন্য তৈরি করা হয়েছিল, যা ইউক্রেনের অভাব রয়েছে। রাশিয়া, ইতিমধ্যে, তার আক্রমণে ড্রোনের ভারী ব্যবহার চালিয়ে যাচ্ছে, যার বিরুদ্ধে আব্রামসগুলোর টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে।
ইউক্রেনকে ‘অর্থহীন যুদ্ধ’ চালিয়ে যেতে চাপ দিচ্ছে ন্যাটো : ক্রেমলিন বৃহস্পতিবার বলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং কিছু ইউরোপীয় দেশ ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে কিয়েভের ‘অর্থহীন যুদ্ধ’ বলে চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করছে এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে উত্তেজনা বৃদ্ধির জন্য তাদের অভিযুক্ত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার কিছু পশ্চিমা দেশকে অভিযুক্ত করে বলেছেন যে, তারা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে তাদের সরবরাহ করা অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়ে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
‘উত্তর আটলান্টিক জোটের সদস্য দেশগুলো (ন্যাটো) - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে, অন্যান্য ইউরোপীয় রাজধানী - সাম্প্রতিক দিন এবং সপ্তাহগুলিতে একটি নতুন দফা বৃদ্ধির সূচনা করেছে,’ পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন। ‘তারা এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করছে। আমরা অনেক বিদ্রোহী বিবৃতি শুনতে পাচ্ছি। ... তারা এই অর্থহীন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনকে সম্ভাব্য সব উপায়ে উৎসাহিত করছে,’ তিনি বলেছিলেন, ‘এটি অবশ্যই, অনিবার্যভাবে পরিণতি ডেকে আনবে এবং শেষ পর্যন্ত সেই দেশগুলির স্বার্থের জন্য খুব ক্ষতিকর হবে যারা উত্তেজনার পথ নিয়েছে।’ সূত্র : রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, তাস।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রিকসে যোগ দিতে চায় ইরাক, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র
ক্লান্তিকর ফিল্ডিংয়ের পর হতাশ করলেন ব্যাটাররাও
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: অনশনে আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা, ফল প্রকাশের দাবিতে সাংবাদিকতা বিভাগে তালা
দ্রুতগামী ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু
আরও দুটি শহর মুক্ত, দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে রুশ সেনা
রাজবাড়ীতে পুকুরের পানিতে ডুবে বাকপ্রতিবন্ধী শিশুর মৃত্যু
সিংগাইরে একই দিনে সকাল-বিকেল পৃথক স্থান থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার
সোনালী ব্যাংকের নতুন এমডি শওকত আলী খান
চেচনিয়ায় ড্রোন হামলার প্রতিশোধ নেবেন কাদিরভ
কর্মকর্তারা বদলির তদবির করলেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা : ইসি
এলসি কমছে, ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা
কাশ্মীরে আবার কেন অশান্তি বাড়ছে?
সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ ৪ দিনের রিমান্ডে
উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রশিবিরকে হেয় করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ
নর্ডিক রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে যুদ্ধের কৌশল নিয়ে আলোচনা জেলেনস্কির
টেকনাফে জনতার কর্তৃক অস্ত্রসহ ডাকাত আটক
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অফিস প্রয়োজন আছে কি না দেখছি : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
দৌলতখানে ইউএনও পরিচয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে প্রতারণা
১৬ ঘণ্টা পর আরেক এএসআইয়ের লাশ উদ্ধার
৩২ রানে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের