গাজায় নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বাইডেনের ইতিবাচক সাড়া হামাসের
০২ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ০২ জুন ২০২৪, ১২:০১ এএম
চলমান গাজা যুদ্ধ আজ ২৪০তম দিনে পড়ল। এর প্রাক্কালে যুদ্ধ অবসান ঘটাতে নতুন ইসরাইলি প্রস্তাব মেনে নিতে হামাসের প্রতি আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘এখন এ যুদ্ধ বন্ধের সময় এসেছে’। যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরাইল তিন ধাপের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি হবে এবং গাজার জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের সরিয়ে নেয়া হবে। সেখানে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হবে এবং একই সাথে দুপক্ষের মধ্যে বন্দি এবং জিম্মি বিনিময় হবে। চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী শত্রুতা বন্ধ এবং গাজায় বড় ধরনের পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে। হামাস বলেছে, তারা এ প্রস্তাবটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে এক বক্তব্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে একটি ‘পরিপূর্ণ ও সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি’, সেই সাথে জনবহুল এলাকা থেকে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের জিম্মি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসময় মি. বাইডেন বলেন, এটা আসলেই একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়। হামাস সবসময় বলে তারা যুদ্ধ বিরতি চায়। তাহলে তারা এ চুক্তি মানে কি না সেই বক্তব্য প্রমাণ করার এটি একটি সুযোগ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, এ যুদ্ধবিরতি গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে যাওয়াসহ, বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে আরো মানবিক সহযোগিতা পৌঁছানোর অনুমতি দেবে। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে পুরুষ সৈন্যসহ সব জীবিত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা হবে। যুদ্ধবিরতি তখন স্থায়ীভাবে দীর্ঘ শত্রুতার অবসান ঘটাবে। প্রস্তাবে রাজি হতে হামাসকে যারা আহবান জানিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি তার এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে বলেছেন, ‘চুক্তি অবশ্যই মেনে নিতে হবে, যাতে আমরা লড়াই বন্ধ দেখতে পারি’।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসও এক্সে (সাবেক টুইটার) এ চুক্তি প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সারা বিশ্ব গাজায় অনেক দুর্ভোগ এবং ধ্বংস প্রত্যক্ষ করছে, এখন এটি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি ও মধ্যপ্রাচ্যে শেষ পর্যন্ত একটি টেকসই শান্তির জন্য এ সুযোগটি কাজে লাগাতে সকল পক্ষকে উৎসাহিত করি। মি. বাইডেন নিজেই তার বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন, এ চুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মধ্যে সমঝোতা কঠিন হতে পারে।
কয়েকদিন আগে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসাবে যুদ্ধ বন্ধে রাজি নন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এখন নতুন করে যুদ্ধ বন্ধে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এ প্রস্তাবনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
আগে যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও সেগুলো খুব একটা কাজে দেয়নি। বর্তমানের যুদ্ধ বিরতির জন্য এ চুক্তি হামাসকে আলোচনায় ফিরিয়ে আনার জন্য করা হচ্ছে এবং এরই মধ্যে হামাস এ প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি হামাসের অন্যতম দাবি।
এ চুক্তির তৃতীয় দফায় হয়তো দেখা যাবে, কোনো মৃত ইসরাইলি জিম্মিদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে আনা। এর পাশাপাশি বাড়িঘর, স্কুল ও হাসপাতাল পুনর্নির্মাণের জন্য মার্কিন ও আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে পুনর্গঠন পরিকল্পনা।
মি. বাইডেন তার বক্তব্যে স্বীকার করেছেন যে, হয়তো কিছু ইসরাইলি এবং ইসরাইল সরকারের কর্মকর্তারা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করতে পারেন।
‘যতই চাপ আসুক আমি আমি ইসরাইলের নেতৃত্বকে এ চুক্তির পক্ষে থাকার আহবান জানাচ্ছি’ বলেন মি. বাইডেন। ইসরাইলি নাগরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা এ মুহূর্তটিকে হারাতে পারি না। মি. বাইডেন বলেন, ৭ অক্টোবরের হামলার সময় হামাস যেরকম শক্তি নিয়ে হামলা চালিয়েছিলে, সেরকম শক্তি বা ওরকম হামলা চালানোর মতো সামর্থ্য এখন আর তাদের নেই। এটিকে যুদ্ধ বন্ধের একটি সংকেত হিসেবেই দেখছে ওয়াশিংটন।
এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, সব জিম্মিকে মুক্তি ও হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতা নির্মূল না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ হবে না।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার, পুনর্গঠন এবং বন্দি বিনিময়ের আহবানের কারণেই এ প্রস্তাবটিকে ‘ইতিবাচকভাবে’ দেখছে। তবে হামাস এও বলেছে যে, তারা স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে যে কোনো প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখে। তবে শর্ত একটিই, সেটি হল ইসরাইল যেন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
এ আলোচনার সাথে যুক্ত আরেক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা যিনি ইসরাইলের নতুন প্রস্তাবটিকে দেখছেন, তিনি বলেন, নথিতে এমন গ্যারান্টি নেই যে, যুদ্ধ শেষে গাজা থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। প্রস্তাবটি কাতারভিত্তিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে।
গাজায় ক্রমবর্ধমান বেসামরিক মানুষের হতাহতের পর ইসরাইলের প্রতি মার্কিন সমর্থন নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয় সারা বিশ্বে। এরপরই সমালোচনার মুখে যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষকেই আলোচনার আহবান জানিয়ে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউজ বলেছে যে, তারা বিশ্বাস করে না যে, রাফায় ইসরাইলি অভিযান রেডলাইন ক্রস করতে পারে এবং মার্কিন নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। এমন সমালোচনার মুখে গত রোববার রাফাহ শহরে ইসরাইলি বিমান হামলায় ৪৫ ফিলিস্তিনি মারা যাওয়ার পর বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন বিবৃতি এসেছে।
শুক্রবার আলাদা একটি বিবৃতিতে মার্কিন আইন প্রণেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে মি. নেতানিয়াহুকে ওয়াশিনটনের কংগ্রেসে ভাষণ দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। তবে তা কখন বা কোথায় হবে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৩৬ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ১২০০ ইসরাইলিকে হত্যা এবং প্রায় ২৫২ জন ইসরাইলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে আসে হামাস। একই দিন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে গাজায় বোমা হামলা করে আসছে ইসরাইল।
‘ওয়াশিংটন থেকে আবার মিশ্র বার্তা আসছে’
ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক পরিচালক অ্যালন লিয়েল বলেছেন, গত শুক্রবার বাইডেনের বক্তৃতা এবং তিনি যে যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন তা ছিল ‘ইসরাইলিদের কানের কাছে সঙ্গীত যারা যুদ্ধ শেষ করতে চায়’। তবে তিনি আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘ওয়াশিংটন থেকে আবার একটি মিশ্র বার্তা আসছে’। লিয়েল বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় ছিল যে, [যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব] একটি ইসরাইলি প্রস্তাব হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি নেতানিয়াহু সম্প্রতি বলেছেন এমন অনেক কথার বিরোধিতা করে; এটি একটি আমেরিকান প্রস্তাবের মতো দেখায় যা একটি ইসরাইলীয় হিসাবে উপস্থাপন করা হয়’। লিয়েল যোগ করেছেন যে, তিনি এটি ‘অদ্ভুত’ পেয়েছেন যে, নেতানিয়াহুকে মার্কিন কংগ্রেসে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বাইডেনের উপস্থাপিত পরিকল্পনাটি প্রকাশ্যে গ্রহণ না করেই।
এদিকে ইসরাইলের বিরোধী নেতা নেতানিয়াহুকে গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য বাইডেনের আহ্বানে মনোযোগ দেওয়ার অনুরোধ এবং সরকারকে তার দলের সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইয়ার ল্যাপিড এক্স-এ বলেন, ‘ইসরাইল সরকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পরিণতিমূলক ভাষণকে উপেক্ষা করতে পারে না। টেবিলে একটি চুক্তি আছে, এবং এটি করা উচিত’ ।
‘আমি নেতানিয়াহুকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, যদি [ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার] বেন-গভির এবং [ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল] স্মোট্রিচ সরকার ছেড়ে চলে যান তবে জিম্মি-মুক্তি চুক্তির জন্য তার কাছে আমাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে’।
এর আগে, নেতানিয়াহু বাইডেনের যুদ্ধবিরতি বক্তৃতার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করে বলেছিলেন যে, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরাইলের শর্ত ‘পরিবর্তন হয়নি’ এবং যুদ্ধের সমাপ্তি হবে ‘হামাসের সামরিক ও শাসন ক্ষমতার ধ্বংস’।
অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুর মৃত্যু : ওয়াফা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, মধ্য গাজার দেইর এল-বালাহ শহরের আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ১৩ বছর বয়সী এক ফিলিস্তিনি শিশু মারা গেছে। চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, ওয়াফা নিউজ এজেন্সী।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাসুল সা. এর জীবনাদর্শই আদর্শ রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র চাবিকাঠি- সিলেটে জমিয়ত মহাসচিব মাওলানা আফেন্দী
বাংলাদেশের মাটিতে যত খুন হয়েছে, বিচার বহির্ভূত হত্যকান্ড হয়েছে সবার বিচার এই মাটিতেই হবে; শামা ওবায়েদ
দস্তগীরের বানোয়াট প্রশ্নের সমুচিত জবাব দিলেন ম্যাথু মিলার
কেরানীগঞ্জে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ,আহত ১০
প্রধান উপদেষ্টাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ
কুড়িগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার
দুই দিনের রিমান্ড শেষে নোয়াখালী-৪ সাবেক এমপি একরামুল কারাগারে
নড়াইলে গরু চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
চৌগাছায় পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ বন্ধ, বিপাকে গ্রাহকরা
ভূয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়ে রাষ্ট্রের টাকার অপচয় করেছে আওয়ামী সরকার- বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস খোলার চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
ঐক্যবদ্ধ্য ভাবে চাঁদাবাজির মূল উৎসগুলো উৎপাটন করতে হবে ..সোনারগাঁওয়ে এস এম ওয়ালিউর রহমান আপেল
কেনাকাটা করতে গিয়ে বিপত্তি, খোদ ফরাসি রাষ্ট্রদূতের মোবাইল চুরি চাঁদনি চকে!
‘ছাত্র-জনতা দুস্কৃতিকারী’ বলার পুরস্কার সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি!
কেমন শিক্ষাঙ্গন চায় জানতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রদলের মতবিনিময়
পালিয়ে বিয়ে করে হয়রানির শিকার হয়েছিলেন কোক স্টুডিও তারকা
ব্রাহ্মণপাড়ায় সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল অনুষ্ঠিত
ইসরাইলকে জব্দ করতে সামরিক বাজেট ৩ গুন বাড়াচ্ছে ইরান
ইবির চারুকলা বিভাগের নতুন সভাপতি ড. কামরুল
৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের পতন তাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে আছে তাই সজাগ থাকতে হবে - বাদশা