প্রথমবারের মতো অনিশ্চিত সীমানায় মোদি
১১ জুন ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৪, ১২:০৬ এএম
রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। ভারতের ইতিহাসে গত সাত দশকের মধ্যে তিনি একমাত্র দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি টানা তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিবেশী দেশগুলোর নেতাসহ প্রায় ৮হাজার সমর্থক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ।
তবে, মোদির ঘন্টাব্যাপী ভাষণে তার চিরাচরিত আত্মপ্রচার দেখা যায়নি এবার। তার স্বর ছিল নিয়ন্ত্রিত এবং শব্দগুলি ছিল মাপা। তিনি তার জোটের সুশাসন এবং একটি উন্নত ভারতের স্বপ্নপূরণের প্রতিশ্রুতিতে মনোনিবেশ করেছেন বলে মনে হয়েছে, এবং তিনি বলেছেন যে গত ১০ বছরের থেকে এবারের শাসনামলটি আলাদা হবে। গত সপ্তাহে শেষ হওয়া নির্বাচন মোদির কাছ থেকে তার সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেড়ে নিয়েছে। ফলে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তাকে বিভিন্ন জোটের অংশীদারদের শরাণাপন্ন হতে বাধ্য করেছে। এখন, এই অন্যান্য শরীক দলগুলি এমন কিছু সুবিধা উপভোগ করছে, যা বছরের পর বছর ধরে এককভাবে মোদির সেবায় নিয়োজিত ছিল। তবে, আপাতত, তার গেরুয়া পরিহিত মসীহার আবহটি অদৃশ্য হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মোদির নেতৃত্বের একটি ট্রেডমার্ক হল তার বিরোধীদের পুলিশ মামলার চাপ থেকে শুরু করে ক্ষমতায় অংশীদারিত্বের লোভ দেখানো এবং তাদের চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে তার নিজের দিকে তাড়িয়ে আনার জন্য ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, একটি ক্ষতবিক্ষত শাসক দল তার পক্ষে কিছু আইনপ্রণেতাকে ভিড়িয়ে শীর্ষে নিজের জায়গাটি পোক্ত করতে এমন কৌশলের চেষ্টা করতেই পারে। কিন্তু শপথ গ্রহণের আগের দিনগুলিও তাদের এই পদ্ধতির পরিবর্তনটি স্পষ্ট ছিল।
শেষবার মোদি যখন ভারতের নতুন সংসদভবনে একটি ঘনিষ্ঠভাবে দেখা অনুষ্ঠানের জন্য এসেছিলেন এবং যখস গত মে মাসে তিনি যখন বিধানসভার জন্য একটি নতুন, আরও আধুনিক ভবন উদ্বোধন করেছিলেন, তখন তিনি একজন রাজার মতো প্রবেশদ্বারগুলি পার হয়েছিলেন: তার কপালে ধার্মিকতার তিলক এবং হাতে একটি রাজদণ্ড ছিল। জামাবিহীন হিন্দু সন্ন্যাসীর দল তার সামনে এবং পিছনে হেঁটেছিলেন। এইবার, তিনি সরাসরি শপথ অনুষ্ঠানে এসে সংবিধানের একটি অনুলিপি হাতে নিয়ে এর সামনে মাথা নত করেছেন, যেটি ঘোষণা করে যে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্র।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার শীর্ষে থাকা মোদি প্রথমবারের মতো নিজেকে অনিশ্চিত সীমানায় আবিষ্কার করেছেন। এপর্যন্ত যতদিন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রাজ্য স্তরে বা জাতীয় স্তরে নেতৃত্বে ছিলেন, ততদিন তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কখনোই শক্ত বিরোধী দলে না থাকার কারণে রাজনীতিতে তার কট্টর দৃষ্টিভঙ্গি শক্তিশালী জায়গা করতে পেরেছে।
মোদির বিশাল ক্ষমতা তার ডানপন্থী দলের উদ্দেশ্যগুলিকে কয়েক দশক ধরে দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করেছিল, যার মধ্যে ছিল একটি দীর্ঘ-বিতর্কিত জায়গায় একটি জমকালো হিন্দু মন্দির নির্মাণ করা, যেখানে একসময় একটি মসজিদ ছিল। এবং মুসলিমদের সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের ভোগ করা বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের আগে মোদির দল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, তার জোট ভারতের ৫শ’ ৪৩ আসনের সংসদে ৪শ’ আসন জিতবে। মোদি বলেছিলেন যে, বিরোধীদের জায়গা হবে দর্শকের গ্যালারিতে।
এছাড়া, তার সরকারের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, নতুন মেয়াদে মোদি তার দলের আলোচ্যসূচিতে অবশিষ্ট একমাত্র যে প্রধান ইস্যুটি রাখবেন, তা হল বৈচিত্র্যময় ভারত জুড়ে একটি অভিন্ন নাগরিক আইন প্রণয়ন করে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন আইন প্রতিস্থাপন করা, যা ভিন্ন ধর্মে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংত্রান্ত বিজেপির বর্তমান ইস্যুগুলিরকে পরিচালনা করে। তার দলের নেতারা মোদিকে শুধুমাত্র বর্তমান মেয়াদে তাদের নেতা হিসেবেই নয়, ২০২৯ সালের পরবর্তী নির্বাচনের জন্যও সামনে রাখতে চান, যখন তার বয়স ৭৮ হবে।
দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ২০২৩ সালের বই ‹হাউ প্রাইম মিনিস্টার্স ডিসাইড›-এর লেখক নীরজা চৌধুরী বলেছেন, ‹অভিন্ন নাগরিক বিধি প্রণয়নের মতো বিতর্কিত মতাদর্শিক বিষয়গুলি হীতে বিপরীত হতে পারে, যদি শরীকরা সহজ বোধ না করে।›
মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের বিপরীতে দুটি প্রধান জোট দল, যারা তাকে সরকার গঠনের পথে সংসদের ন্যূনতম সংখ্যক আসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ। এন. চন্দ্রবাবু নাইডু, যার দলের ১৬ টি আসন রয়েছে, মুসলিম সংখ্যালঘুদের প্রতি মোদির আচরণের সমালোচনায় তিনি অতীতে নিন্দা করেছেন। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তার বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করার জন্য এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি খোলাখুলিভাবে মোদির সমালোচনা করেছেন।
মোদির ক্ষমতার শীর্ষে তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দিকটি ক্রমবর্ধমানভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, তাকে ভোটের ফলাফলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক ভর্ৎসনা ভারতীয় জাতির জন্য একটি সৌভাগ্যজনক বিরতি হতে পারে। এতে করে মোদি তার উন্নয়নের চ্যাম্পিয়ন দলের উপর এবং অর্থনৈতিক রূপান্তরের উপর দৃৃষ্টি নিবদ্ধ করতে পারেন, যা সমস্ত ভারতীয়দের জীবনকে উন্নত করতে পারে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
কমলা হ্যারিসকে সমর্থন করায় টেইলর সুইফটকে চড়া মূল্য দিতে হবে
বিচারের কাঠগড়ায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী, হতে পারে ২০ বছরের কারাদণ্ড
অবশেষে মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন পিনাকী ভট্টাচার্য
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই ইসরাইলকে জবাব দেবে ইরান !
নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যের সার্চ কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি
ফুলকোর্ট সভা ডেকেছেন প্রধান বিচারপতি
মুমিনুল-তাইজুল জুটিতে বাংলাদেশের লড়াই
প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়ার আগেই গাজা যুদ্ধের অবসান চান ট্রাম্প
তুরস্কে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশের মুয়াজ
ড. ইউনূসকে নিয়ে সজীব ওয়াজেদের উদ্ভট মন্তব্য
ভৈরবে দুই নারীর ঝগড়ার জের : একজনকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা, আটক ৪
সুস্থ আছে পরিমণির ছেলে তাই ভালো আছেন মা পরি
কচুক্ষেতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ, সেনা-পুলিশের গাড়িতে আগুন
ইরান যদি পুনরায় হামলা চালায় তবে ইসরাইলকে সমর্থন দিবে যুক্তরাষ্ট্র
ছাত্র জনতার বিপ্লবের স্পিরিটে রুয়েটকে গড়ে তোলা হবে -রুয়েট ভিসি
যৌতুক না পেয়ে স্ত্রীকে পিটিয়ে বাড়িছাড়া করলেন স্বামী
নরওয়েতে ট্রাম লাইনচুত্য হয়ে ঢুকলো অ্যাপলের শোরুমে
উত্তরায় ব্যবসায়ীর অফিসে ঢুকে লুটপাটের অভিযোগ
দুপুর থেকে গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়