সিলেটে ফের বন্যা
০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১২:১৬ এএম
সিলেটে টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। ফলে ফের দেখা দিয়েছে বন্যার। গত শনিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টির কারণে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি। অন্যান্য নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবারও নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যার আশঙ্কা বিরাজ করছে সুনামগঞ্জে। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানি এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়াও রাজনগর উপজেলার ২টি ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যার রূপ নিয়েছে। ২১ দিন থেকে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে কুলাউড়া পৌর সাভার ৫টি ওয়ার্ড, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ, জুড়ি উপজেলা পরিষদসহ ওইসব এলাকার বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তা ঘাট। অন্যদিকে সুনামগঞ্জে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঢলের পানি দ্রুত লোকালয়ে প্রবেশ করায় জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট, ফসলী জমি, দোকানপাট ও বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলায় চলমান এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যে’র প্রতিবেদনে-
সিলেট ব্যুরো জানায়, দফায় দফায় বন্যায় পৃষ্ট হচ্ছে সিলেটবাসী। থমকে দিয়েছে জীবন জীবিকা। চলমান জীবনের দুঃখ গাঁথায় পরিণত হয়ে পড়েছে বন্যার ভয়াবহতা। গ্রাম থেকে নগর কোথাও বাদ নেই বন্যার ঝাঁপটা। ধ্বংস করছে অবকাঠামো, কৃষি, মৎস খাত সহ জীবনধর্মী সব পর্যায়। মূলত এক অসহায় পরিস্থিতির শিকার সিলেটবাসী। বার বার ঘুরে ফিরে বন্যার তাণ্ডবে ছন্দ পতন ঘটছে স্বাভাবিক জীবন চিত্র। পর পর দুই দফার পর আবার বন্যার মুখে সিলেট।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই সারা দেশের ন্যায় বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। আগামী কয়েকদিন অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। গতকাল মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়ার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়। এদিকে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বন্যার কারণে এ অঞ্চলে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন সিলেটে। চলমান বৃষ্টি ও উজানের ঢলে দুই দফার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই গত ৩৫ দিনে তৃতীয় দফায় বন্যা কবলিত এখন সিলেটবাসী। এদিকে, বর্ষণে টিলা ধসের আশংকায় ঝুঁকিপূর্ণ টিলায় বসবাসকারী জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সড়িয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ টিলা সনাক্ত করেছে উপজেলা প্রশাসন। সেই টিলাগুলিতে লাল কাপড় দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ টিলা চিহ্নিত করার পরও বসবাসকারীরা সরকারি নির্দেশনা মানতে নারাজ। তবে খোঁজ নিয়েও দেখা গেছে, টিলার ওপর বা নিচে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী বেশির ভাগই দরিদ্র পরিবার। উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরীন আক্তার বলেন, ঝুঁকিপূর্ণদের কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী পরিবারের তালিকা তৈরি করেছি। ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে, তবে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীকে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সিলেটের এই বন্যা পরিস্থিতির মূলে ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির প্রভাব। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চার নদীর পয়েন্টে পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেটের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও সারিগাঙ্গ নদীর পানি দ্রুত বেড়ে পাঁচটি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়াও আরও ছয়টি পয়েন্টে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় পর থেকে সুরমা নদীর পানি ভারতের সীমান্তবর্তী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে সীমান্তবর্তী কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এ উপজেলার আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই আবারও তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন নতুন করে পানি বৃদ্ধিতে বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগ-ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪১ মিলিমিটার। ফলে আবারও দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে সিলেটের সবকটি নদ-নদীর পানি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। একই কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সঞ্চরণশীল মেঘমালা তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসাইন জানান, গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল সকালে টানা বৃষ্টিতে টানা বৃষ্টিতে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসমুখী লোকজন যানবাহনের স্বল্পতায় কাকভেজা হয়ে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। তবে দুপুরের দিকে সূর্যের দেখা মিলে সিলেটের আকাশে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৬ জন। ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১০ হাজার ৭১৩ জন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের জন্য প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।
স্টাফ রিপোর্টার, শেরপুর থেকে জানান, গত ৪ দিনের শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ঝিনাইগাতী. শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার নদীর পানি বাড়েছে। চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইসঙ্গে বেড়েছে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই, সদর উপজেলার মৃগী ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদের পানি। তবে চেল্লাখালি ছাড়া এখনও সব নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে ৩০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শেরপুরসহ আশপাশের এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও শেরপুর সদর উপজেলায় স্বল্পমেয়াদী বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে, পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর কাঁচা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভাঙনের ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় কলা চাষি ও মাছ চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এরমধ্যে ঝিনাইগাতী উপজেলার নিচু জমিতে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢলের পানি নেমে না গেলে আমনের বীজতলা ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নকিবুজ্জামান খান বলেন, এরমধ্যে ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভাঙা স্থানে মেরা মতের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল ইনকিলাবকে জানান, বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছেন, তাতে ঝিনাইগাতী মহারশী নদীর ঢলের পানি দ্রুত নেমে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চলে। তাতে নিন্মাঞ্চলের পানিও যদি দ্রুতই নেমে যায় তবে ভয়ের কোন কারণ নেই বলে তিনি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে দ্বিতীয় দফায় সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সুরমা নদী, সহ সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। ঢলের পানি দ্রুত লোকালয়ে প্রবেশ করায় জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রথম দফা বন্যায় যারা আশ্রয়কেন্দ্রে ছেড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন, তারা প্রায় ২ সাপ্তাহের ব্যবধানে আবার ও ঘর-বাড়ি ছেড়ে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঘরবন্দি মানুষের আর্তনাত বাড়ছে। গ্রামীণ নলকূপ নিমজ্জিত থাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগ যেন ঘিরে ধরেছে হাওর বাসিকে। এদিকে পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে সুরমা নদীর পানি ষোল ঘর সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮.১২ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ ছাতক পয়েণ্টে ৯৫, দিরাই কালনী নদী-দিরাই পয়েন্টে ৬.১৭ কুশিয়ারা নদী মার্কুলি পয়ন্টে ৭.১৯ সেন্টিমিটার, ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জানা গেছে, তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া হাওর ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকায় অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বসত বাড়ি আঙ্গিনায় ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে ওইসব এলাকার মানুষজনের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের বালিজুড়ি গ্রামের ফেরদৌস তালুকদার বলেন, গত দুই দিনের বৃষ্টিপাতে হাওরসহ সব জায়গায় পানি বেড়েছে। ১২ দিনের ব্যবধানে আবার বন্যার পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিলন খান বলেন, খাসিয়ামারা নদীর তীরবর্তী নিম্ন অঞ্চলে পানি প্রবেশ করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানির কারণে গ্রামহীন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। উপজেলার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের নিচু এলাকা নোয়াগাঁও, রণভূমিসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষের বাড়িতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানি ক্রমেই বাড়ছে। ইতোমধ্যে এই উপজেলার আনোয়াপুরবাজার এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়েছে। গত বন্যায় হাওরে পানি টুইটুম্বর থাকায়। অপর দিকে জেলার ১২ উপজেলায় গত ২ দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাত, আর পাহাড়ি ঢলের পানি এসে মানুষের বসত-বাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বন্যায়। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দেওয়া তথ্যনুযায়ী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় গেল ২৪ ঘন্টায় ৩০০ মিলিমিটার, বৃষ্টি পাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গেল ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৪১ মিলিমিটার গত কাল ছিল ৩১৩ মিলিমিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার আরও জানান, মঙ্গলবার ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও সুনামগঞ্জে আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। আজ সুরমা নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমলেও ভোগান্তির শেষ নেই তিস্তার চরাঞ্চালের মানুষগুলোর। কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও গতকাল সকাল থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করছে। এতে জেলার ৫ উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও তিস্তা চরাঞ্চল এলাকাগুলো থেকে পানি নামতে শুরু করছে। তবে চলাচলের রাস্তাঘাট ও গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জানা গেছে, তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, দোয়ানী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ি, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তবে পানি আবার কমে যাওয়ায় এসব এলাকার বাড়ি ঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। আদিতমারী উপজেলা মহিষখোঁচা ইউনিয়নের তিস্তা গোবর্ধন চরবাসীরা জানান, রোববার বিকেল থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সন্ধ্যার মধ্যেই তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করে। আর মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি কমতে শুরু করছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলা খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান মন্ডল বাদল বলেন, দুদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করছে। তবে দ্রুত গতিতে পানি নেমে যাওয়ায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, দুদিন ধরে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে পানি কমতে শুরু করছে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাফউদ্দৌলা বলেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে তিস্তার পানি কমতে শুরু করছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
ছাগলনাইয়া (ফেনী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধে ৫টি স্থানে ভেঙে অন্তত ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট, ফসলী জমি, দোকানপাট ও বাড়ি-ঘর ডুবে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে দুই উপজেলায় চলমান এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পরশুরামের দক্ষিণ শালধর মধ্যম পাড়া, ফুলগাজীর কিসমত ঘনিয়ামোড়া ও উত্তর দৌলতপুর এলাকার ৩টি স্থানেসহ মোট ৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে যায় পরশুরামের দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর ও ফুলগাজীর নিলক্ষী, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, মনিপুর, কিসমত ঘনিয়ামোড়া, পশ্চিম ঘনিয়ামোড়া গ্রাম। এসব এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, দোকানপাট, মৎস্য খামার ও ফসলি জমি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সোমবার থেকে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। রাত ৮টার দিকে ফুলগাজীর সদর ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহারিয়ার জানান, ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে হচ্ছে মর্মে রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ছাগলনাইয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার জানান, ফুলগাজীতে ৪টি ও পরশুরামে ১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় এসব এলাকার হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেছেন, বন্যাদূর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। গতকাল সোমবার রাত ১১টার পর মুহুরি ও কুহুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরশুরাম সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল ও পরীক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু কাওসার মো. হারেছ জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মৌখিক নির্দেশনা মোতাবেক তিনি পরশুরাম উপজেলা আওতাধীন কলেজ ও মাদরাসার গতকালের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা স্থগিত করেছেন।
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে নিম্নাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। এসব নদীর একাধিক জায়গায় ভাঙনের ফলে ঢলের পানিতে ভাসছে মাঠঘাট। ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ। নষ্ট হয়েছে বীজতলা। গ্রামীন অনেক সড়ক রয়েছে পানির নিচে। কয়েকদিনের টানা বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। আর এই ঢলের পানি প্রবাহিত হয় ভাটি অঞ্চলে। বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রবেশ করে এই ঢলের পানি। নিমজ্জিত হয় পুকুর, বীজতলা, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাঠ-ঘাট। চেল্লাখালী নদীর তীর ভাঙনে বাঘবেড় ইউনিয়নের সন্যাসীভিটা, রাণীগাঁও গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। যোগাযোগের গ্রামীণ রাস্তা রয়েছে পানির নিচে। ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষ। অনেকের উনুনে জ¦লছে না আগুন। কলসপাড় ইউনিয়নের গোল্লারপাড়, নাকশি, ঘুঘুরাকান্দি, তারাকান্দি গ্রামে ব্যাপক বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। যোগানিয়া ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামে প্রবেশ করেছে ঢলের পানি। মরিচপুরান ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পৌর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তীর ভেঙে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খালভাংগা গ্রামেও ভোগাই নদীর তীর ভেঙে ঢলের পানি প্রবেশ করে মাঠে। এদিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোশারফ হোসেন জানান, এসব ভাঙা অঞ্চলে তিনি নির্ব্হাী অফিসার মাসুদ রানাকে নিয়ে পরিদর্শন করছেন। তাৎক্ষণিক জিও বেগ, বালুভর্তি বস্তা দিয়ে সাময়িক ব্যবস্থার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কন্যার নাম প্রকাশ করলেন রণবীর-দীপিকা দম্পতি,দিয়েছেন মিষ্টি ছবি
তুরস্কে বিজয়ী বাংলাদেশের হাফেজ মুয়াজকে অভিনন্দন জানালেন পীর সাহেব চরমোনাই
সিলেট মহানগর ‘বৈষম্য বিরোধী হকার ঐক্য পরিষদ’র ১৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন
শেরপুরে তারে জড়িয়ে বন্য হাতির মৃত্যু
কাঁচা সড়কে জনদুর্ভোগ
দেরি করে ভাত দেওয়ায় হত্যা
গ্রামে প্রবেশের সড়ক নেই
বন্য হাতি হামলা
পলো বাওয়া উৎসব
গোদাগাড়ীর মহিশালবাড়ী হাটে ময়লার স্তূপ
কুয়াকাটায় ব্যবসা বাণিজ্যে গতি ফিরছে
গারো পাহাড়ে কলার আবাদ
সেতুর পনেরো শতাংশ কাজ করতেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ
ডেঙ্গুতে ১০ মাসে মৃত্যু ৩০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা
স্বেচ্ছায় রক্ত ও চক্ষু দানকে উৎসাহিত করতে হবে
অনন্য চিন্তক-দার্শনিক দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে
বিদ্যুৎ সংকট আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে
শার্শায় আফিল জুট উইভিং ফ্যাক্টরি শ্রমিক নিহত