চরম ডানপন্থিদের নস্যাতের প্রয়াস ডানপন্থিদের উত্থানে মুসলিম কমিউনিটিতে উদ্বেগ্য

ফ্রান্সের রান-অফ নির্বাচন থেকে শত শত প্রার্থী প্রত্যাহার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০৩ এএম

ফ্রান্সের বাম ও মধ্যপন্থি দলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে প্রথম অতি-ডানপন্থী সরকার গঠনকে ব্যর্থ করার লক্ষ্যে রোববার অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচন থেকে কয়েকশ’ প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আগামী রোববার চূড়ান্ত রান অফের আগে গত মঙ্গলবার নিবন্ধনের সময়সীমার আগে গণপ্রস্থানের হিড়িক পড়ে। প্রত্যাহার করা প্রার্থীদের বেশিরভাগই হয় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর মিত্র বা বামপন্থী দলগুলোর।

ইউরোপীয় নির্বাচনে তার দলের পরাজয়ের পর ম্যাখোঁ জুনে প্রারম্ভিক সংসদীয় নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন। কিন্তু পদক্ষেপটি মূলত ব্যাকফায়ার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তার মধ্যপন্থি এন্নাহদা পার্টির ম্যান্ডেটকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে মেরিন লা পেনের অতি-ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি পার্টি ৩০ জুন প্রথম রাউন্ডের ভোটে সর্বাধিক সংখ্যক আসন জিতেছে।

অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রসিদ্ধ লা পেনের দল সরকার গঠনের জন্য দ্বিতীয় দফা ভোটে পর্যাপ্ত সংখ্যক আসন জেতার আশা করে। গত মঙ্গলবার লা পেন বলেছেন, দলটি ৫৭৭ আসনের জাতীয় পরিষদে ২৮৯ আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সরকার গঠনের চেষ্টা করবে।
ম্যাখোঁর মধ্যপন্থি ও বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট আশা করে যে, তারা এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করতে পারবে। মঙ্গলবার এলিসি প্রাসাদে মন্ত্রীদের একটি বন্ধ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন যে, জাতীয় ফ্রন্টকে ক্ষমতা থেকে রোধ করাই শীর্ষ অগ্রাধিকার।

ম্যাখোঁ বলেন যে, তার নিজ দলের সদস্যদের কিছু বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রয়োজনে এতে সুদূর-বাম ফ্রান্স আনকার্ভড পার্টির সমর্থনকারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এলএফআই সদস্য ফ্রাঁসোয়া রাফিন মঙ্গলবারও বলেছেন যে, ‘একটি লক্ষ্যে ঐক্য ছিল... যা জাতীয় সমাবেশকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে বঞ্চিত করা’।

আল জাজিরার নাতাশা বাটলার প্যারিস থেকে একটি প্রতিবেদনে বলেছেন, প্রার্থীরা যারা প্রত্যাহার করেছিল তারা সাধারণত ত্রিমুখী প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত যেখানে দূর-ডান প্রার্থীরা এগিয়ে ছিলেন বলে মনে হয়েছিল।
ডানপন্থীদের উত্থান মুসলিম কমিউনিটিতে উদ্বেগ্য : এদিকে ফ্রান্সে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) দল বড় সাফল্য পেয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের মতো এবারও প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর মধ্যপন্থী জোটকে পেছনে ফেলেছে দলটি। তবে দ্বিতীয় ধাপ শেষে তারা সরকার গঠন করতে পারবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। ন্যাশনাল র‌্যালির সাফল্যে ফরাসি মুসলমানদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। ২২ বছর বয়সী ফাতিমাতা বলেন, আমার মনে হচ্ছে ফরাসি জনগণ আমার সঙ্গে বেইমানি করছে। ফাতিমাতা হিজাব পরেন এবং তার পরিবার অভিবাসী।

লা পেনের দলের প্রচারণা অনুযায়ী, তারা জনপরিসরে হিজাব নিষিদ্ধ করবে। ২৫ বছর বয়সী ইলিয়াস বলেন, ন্যাশনাল র‌্যালি ক্ষমতায় এলে অনেক মুসলিম ফ্রান্স ছাড়ার কথা ভাবছেন। তবে আমরা যদি সবাই চলে যাই, কে প্রতিরোধ করবে? আলজেরিয়ান বংশোদ্ভূত ছাত্র তিজিরি মেসাউডেন ন্যাশনাল র‌্যালির নীতির কারণে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। তিনি বলেন, দ্বৈত নাগরিকদের কৌশলগত পদে চাকরি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি আমার পড়াশোনার কোনো দামই রাখবে না।

রবিবার প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণের পর ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার ফলাফল ঘোষণা করে। ন্যাশনাল র‌্যালি পেয়েছে ৩৩ শতাংশ ভোট, বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট পেয়েছে ২৮ শতাংশ, আর ম্যাক্রোঁনের এনসেম্বল অ্যালায়েন্স পেয়েছে ২০ শতাংশ। ন্যাশনাল র‌্যালি দলটি অভিবাসনবিরোধী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচক হিসেবে পরিচিত। দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন মেরিন লে পেনের শিষ্য জর্দান বারদেলা।

ফ্রান্সের পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৫৭৭ আসনের মধ্যে ২৮৯ আসন প্রয়োজন। দ্বিতীয় ধাপের ভোট হবে ৭ জুলাই। ন্যাশনাল র‌্যালির সরকার গঠন ঠেকাতে ম্যাক্রোঁন অন্যান্য দলের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছেন। সূত্র : আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস