আরব অঞ্চলে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ ৪০ হাজার কোটি ডলার
১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৪ এএম
আরব অঞ্চলের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতের বিকাশে রয়েছে কয়েক দশকের প্রচেষ্টা। এতে বিনিয়োগ করেছে স্থানীয় ও বিদেশী জায়ান্ট কোম্পানিগুলো। শুধু সর্বশেষ ২২ বছরে বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এ লগ্নির বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া থেকে এসেছে বলে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আরব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পস (ধামান)।
২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত বিনিয়োগের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে ধামানের ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হচ্ছে, দুই দশকের বেশি সময়ে আরব অঞ্চলে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করেছে ৩৫৬টি দেশী-বিদেশী কোম্পানি। এ সময় কোম্পানিগুলো ৬১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।
আরব অঞ্চলের জ্বালানি খাতের রমরমা বিনিয়োগের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। মোট বাস্তবায়িত প্রকল্পের ৮৫টি অর্থাৎ ১৪ শতাংশের সঙ্গে মার্কিন বিনিয়োগের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তবে অর্থের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। সাম্প্রতিক বছরে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমাদের বিধিনিষেধের আওতায় থাকা দেশটি এ অঞ্চলে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে ৬ হাজার ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে, যা মোট খরচের ১৫ দশমিক ২ শতাংশ।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আরব অঞ্চলের জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিএফ) মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মিসর, ইরাক, সৌদি আরব ও কাতারে কেন্দ্রীভূত ছিল। এ পাঁচ দেশে প্রায় ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, এতে রয়েছে ৩৮৯টি প্রকল্প। মোট খরচ হিসেবে দেশগুলোর দখলে ছিল ৭১ শতাংশ বিনিয়োগ, যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এ পাঁচ দেশে সংশ্লিষ্ট খাতে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, এর পরিমাণ ৭৯ হাজার ২০০টি পদ। বিনিয়োগকারী কোম্পানি হিসেবে ৩ হাজার কোটি ডলার খরচ করে শীর্ষে রয়েছে রাশিয়ার রোসাটম গ্রুপ, মোট বিনিয়োগে কোম্পানিটির হিস্যা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প পেয়েছে নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল ডাচ শেল ও আরব আমিরাতের ডানা গ্যাস গ্রুপ। তারা ১৪টি করে প্রকল্পে কাজ করছে, যা মোট প্রকল্পের ২ দশমিক ৩ শতাংশ করে।
বিশ্বের জ্বালানি তেলের বৃহত্তম মজুদদার মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল। পরিসংখ্যান প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার ২০২৩ সালের দেয়া তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের মোট মজুদের ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ এখানেই মজুদ রয়েছে। ১৯৬০ সালে জ্বালানি তেলে বৈশ্বিক মজুদে অঞ্চলটির হিস্যা ছিল প্রায় ৬৩ শতাংশ। তবে ২০২০ সাল নাগাদ তা ৫৬ শতাংশে নেমে আসে।
মজুদের পরিমাণ ও অর্থনৈতিক কারণে মধ্যপ্রাচ্য থেকেই বিশ্বের জ্বালানি তেলের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ হয়। এ কারণে আরব অঞ্চলে এরই মধ্যে আবিষ্কৃত জ্বালানি তেলের রিজার্ভ ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। ক্রেডিট রেটিং সংস্থা ফিচের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৪ সালের মধ্যে রিজার্ভ ৭০ হাজার ৪০০ কোটি ব্যারেলে নেমে আসে, যা মোট বৈশ্বিক রিজার্ভের প্রায় ৪১ দশমিক ৩ শতাংশ। বর্তমান প্রবণতা ও ভবিষ্যৎ চাহিদার পূর্বাভাস অনুসারে, ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি তেলের মজুদ আরো ৭ শতাংশ কমে ৬৫ হাজার ৪৫০ কোটি ব্যারেলে নেমে আসতে পারে। অন্যদিকে এ অঞ্চলে শনাক্তকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ আনুমানিক ৫৮ ট্রিলিয়ন ঘনমিটারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী মোট মজুদের ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এ পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কমে ৫৩ দশমিক ৫৩ ট্রিলিয়ন ঘনমিটারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে।
ক্রুড অয়েল, কমপ্রেসড গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ তরলের মজুদ কমার পূর্বাভাস সত্ত্বেও আরব দেশগুলোয় উত্তোলন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে জ্বালানি তেল উত্তোলন ২০২৩ সালের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে দৈনিক ২ কোটি ৮৭ লাখ ব্যারেলে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া ২০৩০ সাল নাগাদ দৈনিক উত্তোলন বেড়ে ৩ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছাতে পারে।
চলতি বছরে আরব অঞ্চলে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা দৈনিক ১ কোটি ১৩ লাখ ব্যারেলে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা বৈশ্বিক মোট অপরিশোধনের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০৩০ সাল নাগাদ দৈনিক ১ কোটি ১৪ লাখ ব্যারেলে পৌঁছতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পরিশোধন সক্ষমতা বাড়বে ইরাক ও ইউএইর প্লান্টগুলোয়।
চলতি বছরে আরব অঞ্চল থেকে হাইড্রোকার্বন পণ্যের নিট রফতানি দৈনিক প্রায় ২ কোটি ৩৫ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের সমমান হতে পারে। ২০৩০ সাল নাগাদ তা বেড়ে ২ কোটি ৭০ লাখ ব্যারেলের সমতুল্য হতে পারে।
একসময় জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত থাকলেও আরব দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরে নীতিগত পরিবর্তন এনেছে। সৌদি আরব, ইউএই, কাতার, ওমানসহ দেশগুলো অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ নীতি গ্রহণ করেছে। ব্যবসায়িক লাইসেন্স, ভিসা ও কর নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে দেশগুলোয় পর্যটন, আবাসন ও শিল্প খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বেড়ে চলেছে, যা আরব অঞ্চলে জ্বালানি তেলবহির্ভূত অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। সূত্র : আরব নিউজ ও জর্ডান নিউজ।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন
শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ