যুদ্ধ বিধ্বস্ত মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম
চীন, তার কথায় মিয়ানমারে ‘বাইরের হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে। দেশটি বেইজিং ও ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের মাঝখানে পড়ে গেছে। এই সতর্কবার্তা এমন এক সময়ে এলো যখন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ামনমারের গণতন্ত্রপন্থি শক্তির সাথে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করছে আর যার ফলে বেইজিং এ উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেখানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন মিয়ানমারে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে গভীর সংশয় রয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই, লাওস, থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে ১৬ আগস্ট একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওয়াং জোর দিয়েই বলেন যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো বাইরের হস্তক্ষেপ, বিশেষত এই অঞ্চলের বাহিরের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকা উচিৎ। মিয়ানমারে চীনা দূতাবাস এবং রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ মাধ্যম এই অবস্থানের দ্রুত প্রতিধ্বণি তোলে এবং জোর দিয়ে বলে একার পক্ষেরই উচিৎ হবে না ‘বহির্দেশীয় হস্তক্ষপের’ সীমা লংঘন করা। এই বৈঠকের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ও মিয়ানমারের বিরোধীদলের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল আলোচনা হয় যেখানে ওয়াশিংটন অসামরিক সরকারে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তাদের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করে। ওয়াং যদিও সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করেননি, তার মন্তব্যগুলোকে ওয়াশিংটনের বর্ধিত সম্পৃক্ততার জবাব বলেই মনে হয়েছে। ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল ওয়ার কলেজের একজন অধ্যাপক জাকারি আবুজা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চীনের অনাস্থার কথা তুলে ধরেন। আবুজা বলেন, ‘চীনের দৃষ্টিতে তারা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে প্রত্যাখ্যান করে। সমস্যাটা হচ্ছে চীনারা মিয়ানমারের ব্যাপারে আমাদের সাথে কাজ করতে চায় না।’ চীনে অবস্থিত চীন-মিয়ানমার সম্পর্ক বিষয়ক একজন অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষক হ্লা কিয়াও জাও এই অনুভূতির প্রতিধ্বণি তুলে বলেন, ‘চীন অন্য কোনো দেশের চাইতে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও জাতিগোষ্ঠীগত সশস্ত্র দলগুলোর মধ্যে আলোচনায় চীনের ভূমিকা সম্পর্কে হ্লা কিয়াও জাও বলেন, ‘যেমনটি এ বছরের গোড়াতে চীনের মধ্যস্ততার প্রচেষ্টায় দেখা গেছে মিয়ানমার সঙ্কটের ব্যাপারে চীন নেতৃস্থানীয় হয়ে থাকতে চায়।’ মন্তব্যের জন্য ভয়েস অফ আমেরিকার অনুরোধে , ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ অশান্তি ও গৃহযুদ্ধকে উস্কানি দেয় এমন কর্মকাণ্ডের বিরোধীতায় চীনের অবস্থান পূনর্ব্যক্ত করে। একটি ইমেইলে দূতাবাসটি বলে, ‘বাইরের শক্তি দ্বারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপের বিরোধীতা করে। অধ্যাপক আবুজার মতে মিয়ানমার সঙ্কট সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সহযোগিতার খুব বেশি সম্ভাবনা নেই যদিও উভয় পক্ষেরই লক্ষ্য অভিন্ন। আবুজা বলেন, ‘বস্তুত আমরা উভয়ই চাই অনেকটা একই জিনিষ-সামরিক শাসনের অবসান, গৃহযুদ্ধের অবসান এবং একটি স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন। কিন্তু এই স্বল্প মেয়াদে আমি দেখছি খুব কম সহযোগিতাই এগিয়ে যাচ্ছে।’ ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অফ পিস-এর সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণের মতে এই বিভাজন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকতর উত্তেজনাকে তুলে ধরে। যদিও উভয় শক্তিই মিয়ানমারে স্থিতিশীলতা চায়, তাদের পদ্ধতিটা একেবারেই ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোর পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে, ‘যেমন সে দেশের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তা ছাড়া ২০২১ সালের অভ্যূত্থানের পরে যুক্তরাষ্ট্র বার্মা অ্যাক্ট অফ ২০২২ অনুমোদন করে যেখানে গণতন্ত্রপন্থি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে মারণাস্ত্র নয় এমন সাহায্য প্রদান এবং জান্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা অনুমোদন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরোধী পক্ষ দ্য ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্ণমেন্ট বা এনইউজিকে ওয়াশিংটনে তাদের লিয়াজোঁ দফতর খোলার অনুমতি দেয় যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে এনইউজিকে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। ১৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতি অনুযায়ী, কাউন্সেলার টম সালিভান ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সহকারী প্রশাসক মাইকেল শিফার মিয়ানমারে অন্তর্ভুক্তিমূলক ফেডারেল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গঠন করার জন্য গণতন্ত্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর প্রশংসা করেছেন এবং এই গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন জানানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি আবার নিশ্চিত করেছেন। হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতি অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভান এবং চীনের ওয়াং ২৭-২৮ আগস্টের আলোচনার সময়ে এই বিষয়টির দিকে নজর দেন তবে ওই বিবৃতিতে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি। মিয়ানমারে চীনের কৌশলগত স্বার্থের পেছনে রয়েছে তার প্রচুর অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং ভারত মহাসাগরে প্রবেশের জন্য দেশটির গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান। বিশেষত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়াটিভ বা বিআরআইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে হ্লা কিয়াও জাও ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মিয়ানমারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘চীন যেহেতু প্রতিবেশী রাষ্ট্র, মিয়ানমারে তার বড় রকমের আগ্রহ রয়েছে। এটা ব্যাপকভাবেই মনে করা হয় যে ভারত মহাসাগরের নাগালের মধ্যে যাওয়ার লক্ষ্যে চীনের যে পরিকল্পনা তার জন্য মিয়ানমার খুব গুরুত্বপূর্ণ। হ্লা কিয়াও জাও বলেন, ‘বিআরআইয়ে মিয়ানমারের সম্পৃক্ততা, যেমনটি চীন মনে করেছিল, ততো সহজ নয়। ভয়েস অব আমেরিকা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা