ভারতের উপর কানাডা নিষেধাজ্ঞা জারি করলে কোন দেশের বেশি ক্ষতি হবে?
১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
কানাডা ও ভারতের মধ্যে যে সঙ্কট দেখা গিয়েছে তার শেষটা ঠিক কোথায়, তা অনুমান করা সহজ নয়। আগামী বছরের অক্টোবর মাসে কানাডায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এবং জাস্টিন ট্রুডো যদি আবারও নির্বাচনে জেতেন, তাহলে ভারত সম্পর্কে তার অবস্থান পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কমই রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবার কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি জানিয়েছিলেন, ভারতের সঙ্গে সে দেশের বর্তমান সম্পর্কের প্রেক্ষিতে তাদের কাছে বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। তার মধ্যে একটা হলো, ভারতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা।
কানাডার গুরুত্বপূর্ণ শিখ নেতারাও ভারতের উপর প্রতিবন্ধকতা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করার দাবি তুলছেন। এই তালিকায় থাকা নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জগমিত সিং, যার সমর্থন নিয়ে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার প্রায় চার বছর ধরে চলেছিল।
সেপ্টেম্বর মাসে জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন জগমিত সিং। তবে ভারতের সঙ্গে কানাডার উত্তেজনা বাড়ার পর আবারও জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে দেখা যাচ্ছে তাকে।
চলতি সপ্তাহের সোমবার একটা সাংবাদিক সম্মেলনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকা-ের তদন্তে সহযোগিতা না করার জন্য ভারত সরকারকে দায়ী করেছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
এদিকে খালিস্তান পন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যা মামলায় কানাডার অবস্থান নিয়ে ভারতও ব্যাপক ক্ষুব্ধ। দিল্লিতে কানাডিয়ান মিশন থেকে ছয়জন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে ভারত এবং কানাডা থেকে হাইকমিশনারসহ অন্যান্য কূটনীতিকদেরও প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অন্যদিকে কানাডার পাল্টা দাবি, ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিককে তাদের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দুই দেশের সম্পর্কে যে চরম অবনতি ঘটেছে এই বিষয়টা বেশ স্পষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো এই আবহে কানাডা যদি ভারতের বিরুদ্ধে সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
ভারত প্রধানত কানাডায় রতœ, গয়না, মূল্যবান পাথর, ওষুধ, তৈরি পোশাক, জৈব রাসায়নিক এবং হালকা প্রকৌশল পণ্য রফতানি করে থাকে। আর কানাডা থেকে ডাল, নিউজপ্রিন্ট, কাঠের ম-, অ্যাসবেস্টস, পটাশ, লোহার স্ক্র্যাপ, তামা, খনিজ এবং শিল্প রাসায়নিক আমদানি করা হয় ভারতে।
ন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন অ্যান্ড ফ্যাসিলিটেশন এজেন্সি (ইনভেস্ট ইন্ডিয়া) অনুসারে, ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশগুলোর মধ্যে কানাডার স্থান রয়েছে ১৮ নম্বরে।
২০২০-২০২১ থেকে ২০২২-২০২৩ পর্যন্ত ভারতে কানাডার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩৩১ কোটি ডলার। যদিও কানাডার এই বিনিয়োগ ভারতের মোট এফডিআইয়ের মাত্র অর্ধ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারত সরকারের এক সূত্র বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছে, “কানাডার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিয়ে এই মুহূর্তে আমরা উদ্বিগ্ন নই। কানাডার সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য খুব একটা বড় নয়।”
“কানাডার পেনশন ফান্ডের যে অর্থ ভারতে বিনিয়োগ করা হয় তা রিটার্নের উপর ভিত্তি করে। ভারত ভালো রিটার্ন পাচ্ছে, তাই আমরা এটা নিয়েও চিন্তিত নই।”
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কানাডা ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮৪০ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় সামান্য বেশি।
কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজি সোমবার বলেন, “আমি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমাদের সরকার ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রকৃত সমস্যা কি প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো?
অগাস্ট মাসে কানাডা ভারতে ২৭.৯০ কোটি ডলার অর্থমূল্যের রফতানি করেছিল এবং ভারত থেকে আমদানি করেছিল ৩২.৪ কোটি ডলারের। এই সংখ্যা কিন্তু গত বছরের অগাস্ট মাসের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি। অজয় বিসারিয়া ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত কানাডায় ভারতের হাই কমিশনার ছিলেন। ইংরেজি পত্রিকা হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এর কোনও প্রভাব পড়বে। ভারতের সমস্যা কিন্তু ট্রুডো, কানাডা নয়। দুই দেশই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, বাণিজ্য, ভিসা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকা উচিৎ নয়।”
২০২২ সালের মার্চ মাসে দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যের বিষয়ে চুক্তি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়। গত বছর পর্যন্ত এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে নয় দফা আলোচনা হলেও এখন সমস্ত আলাপ-আলোচনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে বিষয়টা শুধুমাত্র ব্যবসা নিয়েই নয়। গণতন্ত্রে নির্বাচনে জেতার জন্য বেশি ভোটের প্রয়োজন হয় এবং ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ভাবাবেগের দিকেও খেয়াল রাখতে হয়। ২০২১ এর পরিসংখ্যান বলছে, কানাডার জনসংখ্যার ২.১% শিখ সম্প্রদায়ভুক্ত। ২০০১ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত, গত ২০ বছরে কানাডায় শিখ জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিক্ষা, ক্যারিয়ার, চাকরির মতো কারণে পাঞ্জাব থেকে কানাডায় পাড়ি দিয়েছেন। কানাডায় বসবাসরত শিখ জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভারে বাস করে। সূত্র : বিবিসি বাংলা।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জুলাই হতাহতের বিচার আদৌ হবে কিনা সংশয় স্বজনের মধ্যে
হরিণাকুন্ডুতে যুবদল সভাপতির উপর গুলি অল্পের জন্য রক্ষা
সচিবালয়ে আগুন, টঙ্গী হত্যাকাণ্ড ও ইসকনের আস্ফালন একই সূত্রে গাঁথা : যুব সমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে :পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সেই সুখরঞ্জন বালির ভারতে গুমের লোমহর্ষক কাহিনী
খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন শাস্তি হলে হাসিনার সুযোগ নেই :অ্যাটর্নি জেনারেল
থার্টি ফাস্ট নাইট নিষিদ্ধ করতে হবে আইন করে :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
হাসিনা-জয়ের ৩০০ মিলিয়ন ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এফবিআই
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের রহস্য নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন
সংস্কারের সঙ্গেই নির্বাচন প্রস্তুতি
‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প সোলার সিস্টেম চালু করুন’
আসিফ মাহমুদের হেলিকপ্টারে ছয় দিনে ২৮ বার সফর বিতর্ক
বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রম
ডেঙ্গুতে মৃত্যুহীন ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫৩
নববর্ষ উদযাপনে ৭ বছরে শব্দদূষণ বেড়েছে ৭৪ শতাংশ
হাসিনা পরিবারের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পরই সচিবালয়ে আগুন : রিজভী
হাসিনার ফ্যাসিজম নিয়ে সস্তা কথা টিকবে না : শফিকুল আলম
চাঁদপুর মেঘনায় ড্রেজারসহ ২৮ জন আটক
ব্যাট হাতেও উজ্জ্বল অভিষিক্ত বশ,চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা
১৬ বছরের অভিনেতার অকাল প্রয়াণে হলিউডে শোকের ছায়া