ত্রাণ সঙ্কটে খাদ্যাভাব, গাজার অধিকাংশ মানুষ একবার খায়

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম

আমার মেয়েরাক্ষুধার কারণে তাদের আঙুল চুষে, আর আমি তাদের পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াই’, বললেন গাজা উপত্যকার বিধ্বস্ত তাঁবুতে বসবাসরত এক নারী ইয়াসমিন ইদ। দেইর আল-বালাহ’র শরণার্থী শিবিরে ইট দিয়ে বানানো চুলায় ছোট এক পাত্রে ডাল রান্না করছিলেন তিনি। এটিই ছিল তাদের একমাত্র খাবার। এটাই তারা কিনতে পেরেছিলেন। পাঁচবার স্থানচ্যুত হওয়ার পর, ইয়াসমিনের পরিবার এখন মধ্য গাজায় বসবাস করছে। কারণ এখানে ত্রাণ সংস্থাগুলোর উত্তরাঞ্চলের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রবেশাধিকার রয়েছে। তবে উত্তর গাজা এখন অনেকটা বিচ্ছিন্ন। যুদ্ধের কারণে ব্যাপক ধ্বংসের শিকার হয়েছে। অবশ্য গাজায় এখন প্রায় সবাইক্ষুধার্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। দেইর আল-বালাহ এলাকায় ইয়াসমিনের পরিবার হাজারো মানুষের সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে। এ সপ্তাহে সেখানে স্থানীয় বেকারিগুলো পাঁচদিন বন্ধ ছিল। বুধবার সেখানে এক ব্যাগ রুটির দাম ১৩ ডলারের বেশি ছিল। তাও শেষ হয়ে গিয়েছিল দ্রুত। জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর জানিয়েছে, মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ভয়াবহক্ষুধার শিকার পরিবারের সংখ্যা ‘তীব্রভাবে বৃদ্ধি’ পেয়েছে। গত সাত সপ্তাহে ইসরাইল গাজায় যে পরিমাণ খাবার প্রবেশ করতে দিয়েছে, তা পুরো যুদ্ধের মধ্যে প্রায় সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। জাতিসংঘ ও সহায়তা সংস্থাগুলো বলছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর চলাচলে বিধিনিষেধ, চলমান সংঘর্ষ, রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি এবং ডাকাতিসহ বিভিন্ন বাধার কারণে গাজার ২৩ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ গাজায়,ইসরাইলি সামরিক অবস্থানের কাছাকাছি গত সপ্তাহে সশস্ত্র ব্যক্তিরা প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। ইসরাইল হামাসকে দায়ী করেছে, তবে এই ডাকাতি থামাতে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। অন্যদিকে হামাস বলছে, এটি স্থানীয় ডাকাতদের কাজ। মাসের পর মাস ধরে ইয়াসমিন ও তার পরিবারক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যায়। তিনি বলেন, ‘সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে, আমরা কিছুই কিনতে পারি না। আমরা সবসময় রাতের খাবার না খেয়েই ঘুমাতে যাই।’ গাজার বাজারে এখন এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ ডলার, মাঝারি আকারের একটি তেলের বোতলের দাম ১৫ ডলার। তবে সেগুলো পাওয়া কঠিন। মাংস ও মুরগি কয়েক মাস আগে থেকেই বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। অবশ্য কিছু স্থানীয় সবজি পাওয়া যায় এখনও। শত শত মানুষ দাতব্য সংস্থার খাবারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। কিন্তু দাতব্য সংস্থাগুলোর অবস্থাও এখন খারাপ হয়ে গেছে। যুদ্ধ চলাকালে জুইদা শহরের এক দাতব্য সংস্থা দৈনিক ৫০০ ডলার বাজেটে পরিচালিত হচ্ছিল। তখন তারা প্রতকিদিন ১০০০ পরিবারকে খাওয়াতে পারতো। কিন্তু অক্টোবরে গাজায় সহায়তা প্রবাহ কমে যাওয়ার পর, খরচ বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ১,৩০০ ডলার। এখন তারা অর্ধেক পরিবারকে খাওয়াতে পারে। অক্টোবরে গাজায় প্রবেশ করা সহায়তার পরিমাণ ১,৮০০ ট্রাকে নেমে এসেছে, যা আগের মাসে ৪,২০০ ট্রাক ছিল। নভেম্বর মাসে প্রায় ২,৪০০ ট্রাক গাজায় প্রবেশের কথা রয়েছে। যুদ্ধের আগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ ট্রাক প্রবেশ করত। এমন পরিস্থিতিতে ইসরাইল ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ’র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আইন পাস করেছে। ইসরাইলের অভিযোগ সংস্থাটি হামাস দ্বারা প্রভাবিত। তবে জাতিসংঘ তা অস্বীকার করেছে। ইয়াসমিনের স্বামী হানি বলেন, ‘আমাদের যে কষ্ট হচ্ছে, তা বলতে আমার লজ্জা লাগে। আমি কী বলতে পারি? আমি একজন মানুষ, যার ২১ জন পরিবারের সদস্য রয়েছে। কিন্তু আমি তাদের জন্য এক ব্যাগ ময়দাও সরবরাহ করতে পারি না।’ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। যুদ্ধবিরতির জন্য আলোচনা চলছে। আর গাজার অধিকাংশ ফিলিস্তিনি বেঁচে থাকার জন্য খেয়ে না খেয়ে সংগ্রাম করছে। এপি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস