মার্কিন মিত্র কুর্দিরা অস্তিত্ব সংকটে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদকে উৎখাতকারী জিহাদি বিদ্রোহীরা বলেছে, তারা একটি ঐক্যবদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশ গড়তে চায়। তবে প্রায় ১৪ বছরের গৃহযুদ্ধের পর দেশটিতে সেই আদর্শের বাস্তবে প্রয়োগ করা সহজ হবে না। সিরিয়ায় আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র কুর্দি সংখ্যালঘুদের জন্য সেখানে একটি নতুন শৃংখলা বাস্তবায়ন আরও চ্যালেঞ্জিং পর্যায়ে প্রবেশ করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাহলে সিরিয়ার ভবিষ্যত কি? রাষ্ট্রবিহীন সংখ্যালঘু কুর্দিদেরই বা কি পরিণতি হবেÑ এই প্রশ্নেরই জবাবে খোঁজা হয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির একটি প্রতিবেদনে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালীন কুর্দি যোদ্ধারা ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীকে পরাস্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মেলায়। পরে দেশটির তেল সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে একটি স্বায়ত্তশাসিত ডেরা তৈরি করে তারা। তবে অনারব কুর্দিদের সেই অর্জন এখন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে সুন্নি আরব বিদ্রোহীদের উত্থান কুর্দিদের জন্য নতুন সিরিয়ায় জায়গা করে নেওয়া কঠিন করে তুলবে। এমনকি এই সংঘাত দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। কুর্দিদের দীর্ঘদিনের শত্রু তুরস্ক অবশ্য সুন্নী বিদ্রোহীদের এই হামলায় সহায়তা করেছে বলে ধারণা করা হয়। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ। জিহাদি বিদ্রোহীরা সপ্তাহান্তে দামেস্কে প্রবেশ করে কুর্দিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছেছে। তবে সরকারি বাহিনী শহরটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরই কুর্দি যোদ্ধাদের পূর্বাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-জোর থেকে তাড়িয়ে দেয় বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার উত্তরে তুরস্ক সমর্থিত একটি পৃথক বিরোধী দল বছরের পর বছর ধরে কুর্দিদের সঙ্গে লড়াই করছে। কুর্দিদের তাড়িয়ে মানবিজ শহরটি দখলে নিয়েছে তারা। এছাড়া, একটি কুর্দি কাফেলার ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে তুরস্ক। দেশটি দাবি করেছিল, সরকারি অস্ত্রাগার থেকে লুট করা ভারী অস্ত্র বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল কাফেলাটি। এই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন সাহায্যের ওপর নির্ভর করছে কুর্দিরা। প্রায় ৯০০ মার্কিন সেনা পূর্ব সিরিয়ায় রয়েছে, যেখানে তারা ইসলামিক স্টেটের পুনরুত্থান রোধে কুর্দি বাহিনীর সঙ্গে অংশীদারিত্ব ভাগ করে নিয়েছে। তবে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে সেই মিশনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। কেননা, দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প সিরিয়া ইস্যুতে মার্কিন সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে আসছেন। কুর্দিরা এখন যে দুর্দশার মধ্যে রয়েছে তার একটি একটি দৃষ্টিভঙ্গি এপির আলোকে তুলে ধরা হলো: বিশ্বের বৃহত্তম রাষ্ট্রহীন জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর একটি কুর্দিরা। তুরস্ক, ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তৃত অঞ্চলে প্রায় ৩ কোটি কুর্দির বসবাস। প্রতিটি দেশেই তারা সংখ্যালঘু এবং প্রায়ই নিপীড়নের শিকার হয়েছে, যা সশস্ত্র কুর্দি বিদ্রোহের আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে একটি স্বায়ত্তশাসিত ছিটমহল তৈরি করেছিল কুর্দিরা। তবে তারা আসাদ সরকারকে বা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে বিদ্রোহীদের কাউকেই পুরোপুরি সমর্থন করেনি গোষ্ঠীটি। ২০১৪ সালে সিরিয়ার এক তৃতীয়াংশ দখল করে নেয় ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী। তখন কুর্দি যোদ্ধাদের মধ্যে যারা ধর্মনিরপেক্ষ এবং তাদের র‌্যাংকে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করে, চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক যুদ্ধে তাদের দক্ষতা প্রমাণ করেছিল। আর এর মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট থেকে সমর্থন অর্জন করেছিল। সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) নামে একটি দল গঠন করে তারা। এই দলে আরব যোদ্ধারাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। গোষ্ঠীটি মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা ও আমেরিকার বিশেষ বাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার বিশাল এলাকা থেকে ইসলামিক স্টেটকে তাড়িয়ে দেয়। ২০১৭ সালে কুর্দি নেতৃত্বাধীন এই বাহিনী চরমপন্থিদের তাদের নিজ ধাচের খিলাফতের রাজধানী রাক্কা দখল করে। রয়টার্স।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার