বিপজ্জনক অবস্থায় ভারতের অর্থনীতি
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৮ এএম
বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল ভারতের অর্থনীতি ভয়াবহ অবস্থায় আছে। সর্বশেষ সেখানে যে জিডিপি’র তথ্য পাওয়া গেছে তাতে এমন চিত্রই ফুটে উঠেছে। ভারতীয় সাংবাদিক সৌতিক বিশ্বাস ‘ইন দ্য ফাস্টেস্ট-গ্রোয়িং বিগ ইকোনমি লুজিং স্টেম?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথাই বলেছেন। তিনি লিখেছেন, সর্বশেষ জিডিপি’র যে সংখ্যা পাওয়া গেছে তাতে ভারতের এক ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটির অর্থনীতি সেভেন-কোয়ার্টারে কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ৫.৪ ভাগ। অথচ রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) এই সংখ্যা শতকরা ৭ ভাগ বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। ফলে ওই সময়ে আরবিআইয়ের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক কম জিডিপি অর্জিত হয়েছে। যদিও এই চিত্র উন্নত দেশগুলোর তুলনায় এখনো শক্তিশালী। তবুও এই জিডিপি অর্থনীতি ধীরগতির হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকে শনাক্ত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে ভোক্তাদের চাহিদা দুর্বল হয়েছে বা কমে গেছে। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগ কমেছে। সরকারি খরচের খাত একটি অত্যাবশ্যকীয় চালিকাশক্তি। তবে তা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিছিয়ে নেয়া হয়েছে। ভারতের পণ্য রপ্তানি দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই করছে। তাদের বৈশ্বিক রপ্তানি ২০২৩ সালে এসে দাঁড়ায় শতকরা মাত্র ২ ভাগ। ফাস্ট-মুভিং কনজ্যুমার গুডস (এফএমসিজি) বিষয়ক কোম্পানিগুলো তাদের রিপোর্টে বলছে, তাদের বিক্রি কমেছে। প্রকাশ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বাণিজ্য করে তাদের বেতন বিষয়ক বিল গত তিন মাসে সংকুচিত হয়েছে। এর আগে সমালোচিত আরবিআই ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধি শতকরা ৬.৬ ভাগ অর্জন হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। অর্থনীতিবিদ রাজেশ্বরী সেনগুপ্ত বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে, অর্থনীতিতে পরিষ্কারভাবে সেøাডাউন বা ধীরগতি দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে (ভোক্তাদের) চাহিদা একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন অর্থনীতির একটি উজ্জ্বল চিত্র এঁকেছেন। গত সপ্তাহে তিনি বলেছেন, অর্থনীতির এই পতন ধারাবাহিক নয়। কিন্তু নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি দেয়ার সময়ে সরকারি ব্যয় কমানোর ফলে এমনটা হয়েছে। তিনি আশা করেন, তৃতীয় চতুর্ভাগে প্রবৃদ্ধি এই পতনকে পুষিয়ে নেবে। সীতারমন বলেন, নির্দিষ্ট মজুরির ফলে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদায় প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক চাহিদাও ধীরগতির হচ্ছে। তাছাড়া আছে কৃষিতে জলবায়ুজনিত বাধা। এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ভারত সম্ভবত সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে অবস্থান করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সিনিয়র একজন মন্ত্রীসহ অর্থনীতিবিদ, আরবিআই-এর অর্থনৈতিক নীতি বিষয়ক গ্রুপের একজন সাবেক সদস্য যুক্তি দেখান যে, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদের হার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এর ফলে প্রবৃদ্ধির গলা টিপে ধরেছে। তবে ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের ক্ষেত্রে ঋণের ক্ষেত্রে অধিক হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে বিনিয়োগ কমেছে। ভোক্তাদের চাহিদা কমেছে। এ দু’টি বিষয়ই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া প্রায় দুই বছর ধরে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। প্রাথমিকভাবে এটা করা হয়েছে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে। অক্টোবরে সেখানে মুদ্রাস্ফীতি শতকরা ৬.২ ভাগ ছাড়িয়ে যায়। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বোচ্চ সীমা শতকরা ৪ ভাগ অতিক্রম করেছে এবং তা ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। প্রধানত এ ঘটনায় ঘটেছে খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। এ খাতে ভোক্তাদের অর্ধেকই চলে যায় এ খাতে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সবজির মূল্য অক্টোবরে বেড়ে যায় শতকরা কমপক্ষে ৪০ ভাগ। এই বৃদ্ধি আরও ইঙ্গিত দেয় যে, খাদ্যের মূল্য ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা নিত্যদিনের অন্যান্য খরচকে, যাকে মূল্যস্ফীতি বলা হয়, তাকে প্রভাবিত করছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতির হওয়ার বিষয়টিকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে শুধু উচ্চ সুদহারই যথেষ্ট নয়। এ বিষয়ে দিল্লিতে অবস্থিত জওয়াহেরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ হিমাংশু বলেন- ভোক্তা চাহিদা যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে সুদের হার কমিয়েও আপনি প্রবৃদ্ধিকে বাড়াতে পারবেন না। যখন চাহিদা থাকে শুধু তখনই বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার বিদায়ী গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বিশ্বাস করেন, ভারতের প্রবৃদ্ধির গল্প এখনো অক্ষত আছে। তিনি আরও যোগ করেন- মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্য বজায় আছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলেন, রেকর্ড পরিমাণ খুচরা ঋণ এবং অনিরাপদ ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইঙ্গিত মেলে যে, উচ্চ হারের সুদের মধ্যেও জনগণ অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে ঋণ নিচ্ছেন। এতে ইঙ্গিত মেলে যে, শহরে চাহিদা দুর্বল হচ্ছে। মুম্বইভিত্তিক ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট রিসার্সের সহযোগী প্রফেসর মিস সেনগুপ্ত বলেন, ভারতের অর্থনীতির চলমান সংকটের সূচনা হয়েছে ‘দুই রকম গতিসম্পন্ন প্রক্ষেপণ থেকে, যা চালিত হয়েছে পুরনো এবং নতুন অর্থনীতি দিয়ে। কনসাল্টিং পার্ম ডেলোইটের মতে, উপসাগরীয় সহযোগিতা সংগঠন জিসিসি বিশ্ব জুড়ে যে পরিমাণ কাজ করে তার শতকরা কমপক্ষে ৫০ ভাগ এখন ভারতে। এই প্রতিষ্ঠানটি দৃষ্টি দেয় আরঅ্যান্ডডি, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন এবং কনসাল্টিং সার্ভিসে। এ খাত থেকে রাজস্ব আসে ৪৬০০ কোটি ডলার। তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ২০ লাখ মানুষ। আরও সংশয়মূলক ইঙ্গিত আছে। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সালে ভারতের গড় শুল্কহার বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫ ভাগ থেকে ১৭ ভাগে। ডলার কিনতে ক্রেতাদেরকে অবশ্যই অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে রুপিতে। এর ফলে বাজারে তারল্য কমেছে। বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস