ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর চীন সফরের নেপথ্য কারণ কী?
০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম
ফের ক্ষমতায় আসার পর বুধবার প্রথমবারের মত চীন সফরে গেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যখন পশ্চিমা বিশ্বের সাথে চীনের সম্পর্কে বড়রকম ফাটল তৈরি হয়েছে, সে সময় তিনি তিন দিনের এ সফরে গেলেন।
চীনে ফ্রান্সের ব্যাপক অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। ২০২২ সালে দুই দেশের বাণিজ্য প্রথমবারের মত ১০০ বিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে গেছে যা তার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। যে কারণে ৬০ জনেরও বেশি শীর্ষস্থানীয় ফরাসি কোম্পানির প্রতিনিধিরা ম্যাখোঁর সফরসঙ্গী হয়েছেন যাদের মধ্যে এয়ারবাস এবং জ্বালানি জায়ান্ট ইডিএফ-এর প্রধান নির্বাহীরাও রয়েছেন। কিন্তু বেইজিংয়ে যাওয়ার আগে এবং সেখানে পৌঁছে যে সব কথা ফরাসী প্রেসিডেন্টের মুখে শোনা গেছে তাতে পরিষ্কার যে তার সাথে চীনা নেতাদের কথাবার্তায় ব্যবসা ছাড়াও ইউক্রেন যুদ্ধ প্রধান একটি আলোচ্য বিষয় হবে।
বেইজিং রওয়ানা হওয়ার আগে ম্যাখোঁ টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে। হোয়াইট হাউজ এবং ফরাসি প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চীনের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে তারা কথা বলেছেন। মজার ব্যাপার হলো ম্যাখোঁর সাথে একইসময়ে বেইজিং গেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লেইন। চীন সফরের কদিন আগে ব্রাসলসে যেসব কথা যে ভাষায় ভন ডের লেইন বলেছেন তা নিয়ে চীনা কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
ব্রাসেলসে ৩০ মার্চ এক অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে ভন ডের লেইন বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার এমন “অবৈধ আগ্রাসন” সত্বেও প্রেসিডেন্ট শি মস্কোর সাথে “নো লিমিট (সীমাহীন)” সম্পর্ক বজায় রাখছেন। তিনি বলেন, ‘পুতিনের সাথে চীন কেমন সম্পর্ক রাখবে, তার ওপর নির্ভর করবে ইইউ-চীন সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।’ তার দুদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈদেশিক নীতির প্রধান জোসেফ বোরেলও বলেন ‘আমরা চীনের কাছে স্পষ্ট করেছি (ইউক্রেনে) রাশিয়ার নৃশংসতা এবং যুদ্ধাপরাধ নিয়ে তাদের অবস্থানের ওপর নির্ভর করবে তাদের সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক।’ এসব কথা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় ফন ডের লেইন চীনা নেতাদের জন্য কঠোর কিছু বার্তা নিয়ে বেইজিং গেছেন যা তিনি সামনাসামনি তাদের দেবেন।
তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপ চীনের কাছ থেকে কী ধরনের ভূমিকা দেখতে চায় সে কথা সম্ভবত ফন ডের লেইন নয়, বরঞ্চ প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁই চীনা নেতাদের কাছে বলবেন। ‘গত কয়েক মাস ধরে ইউরোপীয় কমিশন প্রেসিডেন্ট ব্রাসেলসে বসে, আমেরিকায় গিয়ে যে ভাষায় চীনের বিষোদ্গার করছেন, তা চীনারা একেবারেই পছন্দ করছে না। আমরা মনে হয় না চীনা শীর্ষ নেতৃত্ব তার কথা শুনতে চাইবেন,’ বলেন কুয়ালালামপুরে মালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদ আলী, ‘বরঞ্চ প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ চীনাদের কাছে অনেক গ্রহণযোগ্য। তিনি কূটনীতিতে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেন যেটা চীন পছন্দ করে। তিনি কী বলেন তা চীনা প্রেসিডেন্ট শুনবেন।’
ইউক্রেন এবং বেইজিং-মস্কো সম্পর্ক নিয়ে কোনও কথায় যেন চীনা নেতারা ক্ষিপ্ত না হন সে ব্যাপারে ম্যাখোঁ যে সতর্ক তা তার বিভিন্ন কথাতে স্পষ্ট। বেইজিং পৌঁছে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যেই-ই ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করছে, তাকেই দুষ্কর্মের “সাগরেদ” হিসাবে বিবেচনা করা হবে। কিন্তু তার পরপরই বেইজিংয়েই সেখানকার ফরাসি নাগরিকদের সাথে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন ইউক্রেনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ফ্রান্স চীনকে সাথে নিয়েই কাজ করতে চায়। তিনি ঐ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘চীনের সাথে কোনোভাবেই আমরা বিচ্ছেদ চাই না।’ বেইজিং রওয়ানা হওয়ার আগে ম্যাখোঁর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চীনই এখন একমাত্র দেশ যারা ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।’
সবচেয়ে বড় কথা, ইউক্রেন যুদ্ধের সুরাহা নিয়ে ম্যাখোঁ হয়তো আমেরিকার কাছ থেকে কিছু বার্তা নিয়ে বেইজিং গেছেন। প্যারিস ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফাউন্ডেশন ফর স্ট্রাটেজিক রিসার্চের গবেষক আন্তোয়ান বোন্ডাজ মনে করেন ইউরোপীয় দুই নেতা প্রধানত চীনকে বলবেন- কোনোভাবেই যেন রাশিয়াকে অস্ত্র না দেয়া হয়। ‘প্রকাশ্য বৈঠকে তারা চীনা নেতাদের বলবেন কোনোভাবেই যেন রাশিয়াকে অস্ত্র না দেয়া হয়। গোপন বৈঠকে হয়তো নিষেধাজ্ঞার ভয়ও দেখানো হতে পারে,’ বার্তা সংস্থা এএফপির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন বোন্ডাজ।
ইউক্রেন বিষয়ে ইউরোপের সাথে সম্পর্ক নিয়ে চীনা নেতারা কী বলতে পারেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং ইইউ প্রেসিডেন্টকে? কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে সফর শুরুর আগে চীনা দুই কূটনীতিকের দেওয়া সাক্ষাৎকারে। দুদিন আগে ব্রাসলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চীনা দূত ফু কং দীর্ঘ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমসকে। ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ‘কোনোভাবেই চীন রাশিয়ার পক্ষ নেয়নি।’ তাহলে কেন চীন এখনও রাশিয়ার নিন্দা করেনি? – এই প্রশ্নে চীনা ঐ দূত বলেন, ‘কারণ নেটো জোটের সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে এটি একটি প্রতিরক্ষামুলক যুদ্ধ বলে যে দাবি রাশিয়া করে সেটি চীন অনুধাবন করে। চীন সরকার বোঝে এই সংকটের মূল কারণগুলো খুবই জটিল।’
প্যারিসে চীনা রাষ্ট্রদূত লু শে কদিন আগে ফরাসি একটি পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন চীনের সাথে ইউরোপের সম্পর্ক দিন দিন চটে যাচ্ছে এবং এর প্রধান কারণ, তার মতে, ‘যুক্তরাষ্ট্র চীনকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বাড়িয়ে চলেছে এবং পক্ষ নিতে ইউরোপকে বাধ্য করছে।’ রাশিয়ার পাশাপাশি চীনও ইদানিং প্রকাশ্যে বলছে- যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে ইউরোপ স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারাচ্ছে। তার ফলেই সম্পর্কে বিরোধ বাড়ছে, ইউক্রেনের মত সংকটের সমাধান করা যাচ্ছে না। বেইজিংয়ে চীনা নেতাদের কাছ থেকে একই কথা শুনতে হতে পারে ম্যাখোঁ এবং উরসুলা ভন ডের লেইনকে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কে হবেন বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার?
বোলারদের নৈপুণ্যে অল্প টার্গেটেও স্বপ্ন দেখছে পাকিস্তান
৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামোর বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে: আমিনুল হক
পিরোজপুর প্রেসক্লাব নির্বাচন শামীম সভাপতি ও তানভীর সম্পাদক
বিরক্তিকর সময়কে গুডবাই বলুন! এন্টি ডোট হিসেবে সেরা অ্যাপ (পর্ব-১)
দেশের বিরাজমান সংকট উত্তরণে জাতির আস্থা তারেক রহমান : মীর হেলাল
টোল প্লাজায় দুর্ঘটনা: বাসের ব্রেকে সমস্যা ছিল, চালক নেশা করতেন
পাবনার আমিনপুরে মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে আগুন, শঙ্কিত পরিবার
দেশে এলো ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ এক্স২০০
বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে লিপ্ত হলে কাউকে ছাড় নয়: শাহ সুলতান খোকন
সচিবালয়ে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য বিশেষ সেল গঠন
যুদ্ধের দামামা, তালেবানের পাল্টা হামলায় ১৯ পাকিস্তানি সেনা নিহত
ফিরে দেখা ২০২৪: ফুটবলে ঘটনাবহুল বছর
বড় চমক অ্যাপলের, জ্বর ও হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করবে ইয়ারবাডস
রাস্তাটি সংস্কার করুন
থার্টি ফাস্ট নাইট এবং প্রাসঙ্গিক কথা
ইসলামী শক্তির সম্ভাবনা কতটা
কিশোরগঞ্জে দুই নারীর রহস্যজনক মৃত্যু, গ্রেফতার-১
সাধারণ মানুষের স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি
দেশের পরিস্থিতি ঠিক না হলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা