ভারতের শীর্ষস্থানীয় নাচের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ
১৩ এপ্রিল ২০২৩, ০৭:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৮ পিএম
ভারতের একটি শীর্ষ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘কলাক্ষেত্র’ – যা বিশেষ করে ভরতনাট্যম নাচ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে সুপরিচিত – সেখানকার একজন ফ্যাকাল্টি সদস্য এবং তিনজন বদলি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠার পর তা নিয়ে শুরু হয়েছে হৈচৈ।
ঘটনার সূত্রপাত এখানকার একজন নাচের শিক্ষকের বিরুদ্ধে একজন সাবেক শিক্ষার্থীর আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ থেকে – যা ওই শিক্ষক অস্বীকার করছেন। পুলিশ ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তার আগে কয়েকদিন ধরেই এই ইনস্টিটিউটের কয়েক শ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করছিলেন। তাদের অভিযোগ- এই ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর ধরে যৌন হয়রানি চলছিল কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপই নেয়নি। এখন এই বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের কেলেংকারির খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর শুরু হয়েছে এর তদন্ত। তামিল নাডু প্রদেশের নারী বিষয়ক কমিশনও এসব অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে। কলাক্ষেত্রের কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, তাদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্যই এসব ছড়ানো হচ্ছে।
তামিল নাডু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ে অবস্থিত কলাক্ষেত্রের ভরতনাট্যম নাচ শেখার প্রতিষ্ঠানটির নাম রুকমিণী দেবী কলেজ অব ফাইন আর্টস। যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে তার নাম হরি পদমন। তিনি এ কলেজের একজন সহকারী অধ্যাপক এবং কৃতী নৃত্যশিল্পী। পদমনের বিরুদ্ধে প্রথম যৌন হয়রানির অভিযোগটি তুলেছিলেন ভারতের বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী লীলা স্যামসন ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে – ফেসবুকে তার এক পোস্টে, জানান আইনজীবী বি এস অজিতা। তিনি কারো নাম উল্লেখ না করে লেখেন যে কলেজের একজন শিক্ষক “শিক্ষার্ধীদের যৌন নিপীড়ন” করছেন, এবং অভিযোগ করেন যে “তিনি একজন ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। লীলা স্যামসন তার পোস্টে অভিভাবকদের সতর্ক করে দেন যেন তারা তাদের মেয়েদের ওই ইনস্টিটিউটে না পাঠান – যেখানে তার ভাষায় ‘যৌন শিকারিরা’ বিচরণ করছে।
লীলা স্যামসন তার ফেসবুক পোস্টে কারো নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু পোস্টের নিচে করা মন্তব্যগুলোতে হরি পদমন এবং সেই ছাত্রীটির নাম উল্লেখ করা হয়। তারা দুজনেই তাদের মধ্যে কোন অন্যায় সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। এই ইনস্টিটিউটে যৌন হয়রানির ব্যাপারে একটি অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (আইসিসি) রয়েছে। আইনজীবী বি এস অজিতা ২০১৮ সাল থেকে ওই কমিটির একজন সদস্য থাকার পর সম্প্রতি পদ ছেড়ে দেন। আইসিসি যখন হরি পদমন ও এই ছাত্রীটির ঘটনা তদন্ত করে তখন এর অংশ ছিলেন মিজ অজিতা।
এই আইনজীবী বলেন, “ছাত্রীটি তার নাম যেভাবে এ বিতর্কে টেনে আনা হয়েছে তার নিন্দা করেন, এবং বলেন হরি পদমনের সাথে তার সম্পর্ক শিক্ষক ও ছাত্রের মতই। যেহেতু নারী শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাই এই কেসটি ক্লোজ করা হয়।“
কিন্তু এ ঘটনার পর হরি পদমন এবং আরো তিনজন নৃত্যশিল্পী-শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরো গুরুতর সব অভিযোগ আনতে থাকেন ইনস্টিটিউটের অন্য আরো শিক্ষার্থীরা। এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে ইনস্টিটিউটের ২০০-রও বেশি শিক্ষার্থী কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন এই ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর ধরে যৌন হয়রানি ঘটছে কিন্তু প্রশাসন তাদের অভিযোগকে উপেক্ষা করেছে। এই নাচের স্কুলের কর্তৃপক্ষ হচ্ছে কলাক্ষেত্র ফাউন্ডেশন – যা ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। এই ফাউন্ডেশন তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে কিছু ‘কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী’ এ প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে।
কিন্তু এই কেলেংকারির ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হলে ফাউন্ডেশনটি এই অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের প্যানেল গঠন করে – যার প্রধান করা হয় হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে। এ ছাড়া হরি পদমন এবং অন্য তিনজন শিল্পী-শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। বিবিসি এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের মন্তব্য চাইলে তারা এক ইমেইলে জানায় “তদন্ত চলাকালীন সময়ে এ নিয়ে কোন মন্তব্য করা উচিত হবে না।“
হরি পদমনকে গত সপ্তাহে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের আগে পদমন কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে এক বৈঠকে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন। একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, তিনি ন্যায়বিচার পাবার জন্য সবরকম চেষ্টাই করবেন। নিউজ এইটিন নামে একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, “কলাক্ষেত্রে শত শত শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের জিজ্ঞেস করুন আমি কখনো তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি কি না বা খারাপ কথা বলেছি কি না।”
তিনি কখনো কাউকে যৌন নির্যাতন করেননি বলে জানিয়ে পদমন বলেন “আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার এবং আমি জানি যে তাদের হাতে কোন প্রমাণ নেই।” তিনি আরো বলেন তিনি তার নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য সিসিটিভি ফুটেজের ওপর নির্ভর করছেন। পদমনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন তার স্ত্রী-ও। তিনি তার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে বলেছেন – কলাক্ষেত্রের দু’জন শিক্ষকসহ অভিযোগকারীরা ঈর্ষা ও পেশাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা বলছে। তিনি বলেন, হরি পদমন কিছু শিক্ষার্থীকে অসদাচরণের জন্য ‘তিরস্কার’ করেছিলেন বলে তার ওপর প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে এবং দুজন শিক্ষক এতে ‘উস্কানি দিয়েছেন’।
যৌন হয়রানির অভিযোগ নিযে বিবিসি কলাক্ষেত্রের বেশ কিছু শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাবেক শিক্ষার্থী ও অন্যান্য কর্মচারীর সাথে কথা বলেছে। সেসব কথোপকথনে তরুণ নৃত্যশিল্পীরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। এরা সবাই তাদের নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কথা বলেছেন। কারণ তারা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা বিখ্যাত এবং প্রতিষ্ঠিত নৃত্যশিল্পী। অভিযোগকারীদের অনেকেই অভিযোগ করেন, কলাক্ষেত্রে স্বাধীনতার অভাব আছে, এবং সেখানে মুখ খারাপ করা হয়, ‘বডি শেমিং’ বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য লজ্জা দেয়া হয়, জাতপাতের জন্য বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়।
কিছু শিক্ষার্ধী বলেছেন, তাদের ওজন কমাতে বলা হয়েছে। অন্য কয়েকজন বলেন, তাদেরকে অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা দেয়া হয়নি, এবং গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত কালো বলে বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে যৌন হয়রানির অভিযোগ। এর শিকার হয়েছেন নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থী উভয়েই। তারা অভিযোগ করেছেন যে তাদের দেহে অশোভনভাবে স্পর্শ করা হয়েছে, তাদের কামুক টেক্সট মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আরো দাবি করেন, কর্তৃপক্ষ এসব অভিযোগ গুরুত্বে সাথে নিতে অস্বীকার করেছে। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
টুইটার থেকে এক্স ,ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ
বিপুল পরিমাণ গাঁজা, ট্রাক ও ধানসহ নকলার মাদক কারবারিকে ফুলপুরে আটক
বিপিএলে অনিশ্চিত সাকিব নাম লেখালেন পিএসএলে
আলফাডাঙ্গায় চলছে হালি পেঁয়াজ লাগানোর মহোৎসব, শ্রমিকের অভাবে বাড়ছে চাষির খরচ
শ্রীনগরে পুকুর থেকে ভাসমান বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
কলকাতায় দেশদ্রোহী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা চিন্ময়ের আইনজীবী এবার জাতিসংঘে যাওয়ার হুমকি দিলেন
রোববার হারিছ চৌধুরীর পুনর্দাফন
চলছে বিক্ষোভ, তারেক রহমানকে স্মারকলিপি, জবির অন্যান্য সংগঠনের প্রতিবাদ
চীনে তৈরি হবে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ
কোহলির আরও বড় শাস্তি প্রাপ্য ছিল: পন্টিং
বান্দরবানে আগুন দিয়ে ১৭ ঘর পুড়ে দেয়ার সাথে জড়িত দের ছাড় দেয়া হবে না- পার্বত্য উপদেষ্টা
জাহাজ সেভেন মার্ডারের খুনি ধর্মান্তরিত ইরফানের অজানা কাহিনী
খুলনার তাবলীগ মসজিদ এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল
দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? জামায়াত আমীরের প্রশ্ন
ভারতে ইসকন মন্দিরে চিন্ময়ের আইনজীবীর বৈঠক
নির্বাচনে অংশ নিতে খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের আইনগত কোনো বাধা নেই : অ্যাটর্নি জেনারেল
শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট, বন্ধ রয়েছে পায়রা বন্দরের পণ্য খালাস কার্যক্রম
বিএনপির সংস্কার চায় না, এ কথাটি সঠিক নয়: মির্জা ফখরুল
ইসরাইলের বিমানবন্দরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুতিদের
ভর শীতে ও গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের বিলে-ঝিলে দেখা মিলছে না অতিথি পাখির!