ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট সারকোজির সাজা বহাল, বন্দির ট্যাগ পরার নির্দেশ

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৭ মে ২০২৩, ০৭:৪৭ পিএম | আপডেট: ১৮ মে ২০২৩, ১২:০১ এএম

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দুর্নীতির মামলায় তার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করে হেরে গেছেন। ফ্রান্সের আপিল আদালত দুর্নীতি ও প্রভাব খাটানোর দায়ে তার তিন বছরের কারাদণ্ড বহাল রেখেছে। তবে আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, সারকোজিকে হাজত বাস করতে হবে না। তিনি বাসাতেই থাকতে পারবেন কিন্তু এক বছর তাকে সবসময় বন্দিদের ওপর নজরদারির জন্য ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ট্যাগ হাতে পরে থাকতে হবে।

সারকোজিকে ২০২১ সালে তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, এর মধ্যে তাকে দুবছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবার পর একটি আইনি তদন্ত সম্পর্কে গোপনে তথ্য বের করার জন্য তার প্রভাব খাটিয়ে এক বিচারপতির সঙ্গে গোপন টেলিফোন লাইনে যোগোযোগ করেন ২০১৪ সালে এবং ঘুষের বিনিময়ে তাকে উচ্চ পদ পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেন - এই অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।

তাকে ২০২১ সালে তিন বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে বিচারপতি ক্রিস্টিন মী তার রায়ে বলেন, এই রাজনীতিক “জানতেন তিনি যে কাজটা করছেন সেটা অন্যায়।" তিনি আরও বলেন যে সারকোজি এবং তার আইনজ্ঞের কার্যকলাপ ফ্রান্সের জনগণের কাছে “বিচার ব্যবস্থার খুবই ন্যক্কারজনক একটা ভাবমূর্তি” তুলে ধরেছে। প্রভাব-খাটানো এবং পেশাগত গোপনীয়তা লংঘনের অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

ফ্রান্সে ৬৮ বছর বয়সী সারকোজিই প্রথম কোন সাবেক প্রেসিডেন্ট যাকে কারাদণ্ড দেয়া হল। আজ (বুধবার) আদালতের এই রায়ের পর সারকোজির আইনজীবী বলেছেন ফ্রান্সের অন্যতম সর্বোচ্চ আদালতে তারা নতুন করে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করবেন। “নিকোলাস সারকোজি নির্দোষ,” বলেন তার আইনজীবী জাকুলিন লাফঁ। “আমার এই মামলা শেষ পর্যন্ত লড়ব।”

সারকোজির ওপর তিন বছরের জন্য কোনরকম সরকারি পদ গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এটি তার মধ্যে একটি। সারকোজি কোনরকম দুর্নীতি বা নীতিবিরুদ্ধ কাজের কথা অস্বীকার করেছেন। ফ্রান্সে ২০০৭ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সারকোজি লিবিয়া সরকারের কাছে অবৈধভাবে তহবিল চেয়েছিলেন এই অভিযোগে মামলা আনার জন্য কৌঁসুলিরা এ মাসের গোড়ার দিকে অনুরোধ জানান। এক্ষেত্রে তদন্তকারী ম্যাজিস্ট্রেটই একমাত্র চূড়ান্ত রায় দিতে পারেন যে কোন অভিযোগে আদালতে মামলা নেয়া যাবে।

নিকোলাস সারকোজি ২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত এক মেয়াদে ফ্রান্সের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার শাসনামলে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে মধ্য ডানপন্থী এই নেতা ফ্রান্সের অর্থনীতি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং তিনি কড়া অভিবাসন নীতি চালু করেছিলেন। সমালোচকরা তার নাম দিয়েছিলেন “ব্লিং-ব্লিং” কারণ তার নেতৃত্বের স্টাইল ছিল অতিমাত্রায় কঠোর, তারকা প্রভাবিত এবং অতিরিক্ত সক্রিয়।

প্রেসিডেন্ট হবার পর মডেল ও গায়িকা কার্লা ব্রুনির সাথে তার প্রেম ও তাকে ২০০৮ সালে বিয়ে করার মধ্যে দিয়ে নিকোলাস সারকোজির তারকা প্রীতি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হবার লড়াইয়ে তিনি সোসালিস্ট প্রাথী ফ্রসোয়াঁ ওঁলাদের কাছে হেরে যান। এর পর থেকেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় একের পর এক বেশ কিছু অপরাধের অভিযোগে তদন্ত।

২০১৭ সালে তিনি আবার রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার মধ্য ডানপন্থী রাজনৈতিক দল ‘লে রিপাবলিসিয়ঁন্স’ প্রেসিডেন্ট পদে অন্য প্রার্থী নির্বাচিত করায় তার সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে-  উপদেষ্টা শারমীন

ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে- উপদেষ্টা শারমীন

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে  মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক :  শামীম তালুকদার

কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী  গ্রেফতার

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

কসাই থেকে নদীখেকো জাফর

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার