মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই করছে অধিকৃত কাশ্মীর
০৬ জুন ২০২৩, ১২:৪২ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১২:৪২ পিএম
মে মাসের এক বৃষ্টি-মুখর সকালে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে একটি মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাইরে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে বহু তরুণ। তাদের মধ্যে অনেকেই কিশোর যারা তাদের পিতামাতার সঙ্গে এখানে এসেছেন। ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওষুধ নেয়ার জন্য তারা অপেক্ষা করছেন।
এ প্রতিষ্ঠানটিই কাশ্মীরের একমাত্র সরকার-পরিচালিত মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্র। হঠাৎ করেই মাদক নেয়া বন্ধ করে দিলে একজন মানুষের দেহে ও মনে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় এসব ওষুধ তা কমাতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করে থাকে। ‘আপনি কি আবার হেরোইন নিয়েছেন?’ এক তরুণের চোখের মণি পরীক্ষা করে ডাক্তার জানতে চাইলেন। ‘হ্যাঁ, আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি,’ তরুণ জবাব দিলেন।
হিমালয় অঞ্চল কাশ্মীরে সংঘাত ও অশান্তির কারণে গত কয়েক বছর ধরেই এখনকার মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশী দুটো দেশ ভারত ও পাকিস্তান এই অঞ্চল তাদের বলে দাবি করছে। কিন্তু এই দুটো দেশই কাশ্মীরের দুটো অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অঞ্চলকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দু’বার যুদ্ধও হয়েছে। ১৯৮৯ সালের পর থেকে কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে যাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্র-শাসিত দুটো রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে সেখানে উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
এখন এই অঞ্চলে নতুন এক সমস্যা দেখা দিয়েছে: কর্মকর্তারা বলছেন কাশ্মীরে মাদক সমস্যা সত্যিকার অর্থেই বড় ধরনের উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এর ফলে তরুণদের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। কর্মকর্তারা বলছেন, কাশ্মীরে হেরোইনের মতো হার্ড ড্রাগের আসক্তিও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে। ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের একজন মন্ত্রী পার্লামেন্টে বলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের ড্রাগে আসক্ত যা ওই অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৮%। এসব ড্রাগের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, আফিম অথবা স্নায়বিক উত্তেজনা ও মানসিক অস্থিরতা প্রশমিত করে এমন ওষুধ।
অতীতের সঙ্গে তুলনা করার জন্য তথ্য পরিসংখ্যান না থাকলেও ডাক্তাররা বলছেন মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা বর্তমানে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘এক দশক আগেও আমরা হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন মাদকাসক্ত রোগী পেতাম। কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ থেকে ২০০। এটা খুবই উদ্বেগজনক,’ বলেন ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেসের একজন মানসিক রোগ চিকিৎসক ড. ইয়াসির রাথার। মাদকাসক্তি বেড়ে যাওয়ার পেছনে বিশেষজ্ঞরা নানা কারণকে দায়ী করছেন যার মধ্যে রয়েছে চাকরির অভাব এবং সংঘাতময় এলাকায় বাস-জনিত মানসিক অস্থিরতা।
পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সম্প্রতি যে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য জব্দ করেছেন সংবাদ সম্মেলনে সেসব তুলে ধরে বলেছেন যে এসবের সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত। তাদের অভিযোগ এই মাদক পাচার থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় সেটা কাশ্মীরে জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহার করা হয়। এই অভিযোগের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী এই প্রতিবেদককে বলেছেন যে তারা ভারতীয় রাজ্য পাঞ্জাব ও রাজধানী দিল্লি থেকেও মাদকের যোগান পেয়ে থাকেন।
এই অঞ্চলে মাদক নতুন কোনো সমস্যা নয়। “কিন্তু আগে লোকজন গাঁজা অথবা চিকিৎসায় যেসব ব্যথানাশক ওপিয়ড ব্যবহার করা হয় সেগুলো গ্রহণ করতো। এখনকার মতো হেরোইন আগে ছিল না,” বলেন ড. ইয়াসির রাথার। জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন (২০১৮ সালের পর থেকে সেখানে নির্বাচিত কোনো সরকার নেই) গত বছর মাদকসংক্রান্ত একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। তাতে দেখা গেছে কাশ্মীরে ৫২ হাজারেরও বেশি মানুষকে হেরোইন আসক্তির কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে মাদকাসক্ত এক ব্যক্তি গড়ে মাদকের পেছনে প্রতি মাসে ৮৮ হাজার রুপি ব্যয় করে থাকে।
তবে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হয় কারণ অনেক লোকই তাদের আসক্তির কথা স্বীকার করে না। মাদকাসক্তি থেকে মুক্তি লাভের জন্য সামাজিক লাজ লজ্জার ভয়ে তারা কারো কাছে সাহায্যও চায় না। কাশ্মীরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের একজন পরিচালক ড. মুশতাক আহমাদ রাথার বলছেন এই সমস্যা কতোটা গুরুতর সরকার তা বুঝতে পারছে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তারা বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন কাশ্মীরে জরুরি ভিত্তিতে আরো কিছু পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা প্রয়োজন যেখানে মাদকাসক্ত লোকজন ভর্তি হয়ে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে পারবে।
মাদকাসক্তির চিকিৎসার জন্য কাশ্মীরে আছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্র আছে মাত্র দুটো। এবং দুটোই শ্রীনগরে- একটি ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেস এবং অন্যটি পুলিশ বাহিনী পরিচালনা করে। ড. মুশতাক রাথার বলছেন সরকার প্রত্যেকটি জেলায় মাদকাসক্তি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। কিন্তু পুনর্বাসন কেন্দ্রের মতো এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগীরা ভর্তি হতে পারে না। এগুলোতে ছোট ছোট কিছু ক্লিনিক আছে যেখানে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আছেন একজন ডাক্তার, একজন কাউন্সেলর এবং একজন নার্স। ‘এসব কেন্দ্র থেকে রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং ওষুধ দেওয়া হয়,’ বলেন ড. মুশতাক রাথার।
ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেসে সারা কাশ্মীর থেকে এতো রোগী ভর্তি হয় যে তাদের চিকিৎসা দিতে ডাক্তারদের হিমসিম খেতে হয়। কেউ কেউ নিজেরা স্বেচ্ছায় এসে ভর্তি হয় আবার কাউকে কাউকে তাদের পরিবারের সদস্যরা এখানে নিয়ে আসেন। রোগীদের বেশিরভাগই পুরুষ, যদিও তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক নারীও রয়েছে। ‘এটা হচ্ছে মধুর একটা বিষ যা আপনাকে ধ্বংস করে দিবে,’ বলেন ২৩ বছর বয়সী একজন রোগী দানিশ নাজির (আসল নাম নয়), যিনি ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেসে তিন সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
৮ ডিগ্রিতে নামলো তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, বাড়ছে জনদুর্ভোগ
আরিচা-কাজিরহাট ফেরি ৬ ঘণ্টা পর আবার চলাচল শুরু
আজিমপুর কবরস্থানে চাঁদাবাজি, বিএনপি নেতা বহিষ্কার
দ.কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তার অভিযানের প্রস্তুতি, বিক্ষোভে উত্তাল দেশ
ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে ঢাবিতে বিক্ষোভ
গাজায় চিকিৎসা সংকট সমাধানে ডব্লিউএইচও প্রধানের আহ্বান
ঢাবি শিবিরের নতুন সভাপতি ফরহাদ, সেক্রেটারি মহিউদ্দিন
ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি
ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম
সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০