বিদ্রোহ শেষে প্রিগোশিন ও তার ওয়াগনার বাহিনী এখন কী করবে?
২৫ জুন ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্যদের বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের ক্ষণস্থায়ী বিদ্রোহ মোকাবেলায় মস্কোতে যেসব জরুরি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল, বিদ্রোহ অবসানের কয়েক ঘণ্টা পরেও রাজধানীতে সেসব ব্যবস্থা বহাল রাখা হয়েছে।
ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের নেতৃত্বে এই বিদ্রোহকে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই গ্রুপের যোদ্ধারা শনিবার ইউক্রেন সীমান্ত পার হয়ে রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে দক্ষিণের বড় একটি শহর রোস্তভ অন ডন দখল করে নেয়ার পর রাজধানীর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে মস্কোতে সন্ত্রাস-বিরোধী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জারি করা হয়।
মস্কোয় কর্মকর্তারা বলছেন বিদ্রোহ অবসানের পরেও লোকজনকে নিরাপত্তা-জনিত কারণে সোমবার কাজে যোগ না দিতে বলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের কড়া হুঁশিয়ারির পর ওয়াগনার নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোশিন তার বাহিনীর মস্কোর অভিমুখে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা করেন। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর সঙ্গে প্রিগোশিনের বৈঠকে কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা শ্বাসরুদ্ধকর এই বিদ্রোহ অবসানের ব্যাপারে সমঝোতা হয়। তবে এই সমঝোতায় অনেক প্রশ্নেরই উত্তর নেই।
এর পরই শনিবার সন্ধ্যায় পিগ্রোশিন তার সৈন্যদের রাশিয়া ছেড়ে ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। সমঝোতা অনুসারে প্রিগোশিন নিজেও চলে যাবেন প্রতিবেশী বেলারুশে। জবাবে ক্রেমলিন বলছে প্রিগোশিন ও তার সৈন্যদের বিরুদ্ধে যেসব আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সেগুলোর কোনো বিচার হবে না।
শনিবার সন্ধ্যায় হওয়া সমঝোতা অনুযায়ী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনের বেলারুশে চলে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখন কোথায় অবস্থান করছেন সেটা পরিষ্কার নয়। প্রিগোশিন যে বেলারুশে চলে যাবেন এই খবর শুধুমাত্র ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভের মুখ থেকেই শোনা গেছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় তাকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। তিনি একটি গাড়িতে ছিলেন। এসময় তিনি উৎফুল্ল কিছু লোকজনের সঙ্গে করমর্দন করছিলেন। এর পর প্রিগোশিনের কাছ থেকে এখনও কিছু শোনা যায়নি। তাকে কোথাও দেখাও যায়নি। তার টেলিগ্রাম চ্যানেলেও এবিষয়ে নতুন কিছু পোস্ট করা হয়নি।
বিবিসির একজন সাংবাদিক বলছেন সমঝোতা যে প্রিগোশিনের পক্ষে গেছে তা বলা যাবে না। কারণ ক্রেমলিনের কথা যদি সত্য হয়, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে- তাকে বেলারুশে নির্বাসনে পাঠানো হচ্ছে। রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বর্তমানে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ। ওই এলাকাটিকে নো-ফ্লাই জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তার মানে রোস্তভ শহরের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হচ্ছে ভলগোগ্রাদ এবং সচি। কিন্তু এই দুটো বিমানবন্দরই প্রায় ২৫০ মাইল দূরে। বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন প্রিগোশিন গাড়িতে কিম্বা ট্রেনে করে বেলারুশে যেতে পারেন। কিন্তু সেই পথ হবে অনেক দীর্ঘ, কারণ তাকে ইউক্রেনের বাইরে দিয়ে যেতে হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই বিদ্রোহের পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন কী করবেন? বিবিসির রুশ বিভাগের সাংবাদিক ওলগা ইভশিনা বলছেন অবশ্যই তিনি তার শক্তি প্রদর্শন করবেন যা তিনি আগেও করেছেন। তিনি বলছেন এই ঘটনার পর রাশিয়ার ভেতরে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে। টেলিগ্রাম চ্যানেলসহ সংবাদমাধ্যমের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ আরোপেরও আশঙ্কা রয়েছে।
ওয়াগনার যোদ্ধারা কী করবে?
সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওয়াগনার যোদ্ধারা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বিদ্রোহের শুরুতে তারা এই শহরের সামরিক ঘাঁটিগুলো দখল করে নিয়েছিল। এক পর্যায়ে তারা রোস্তভ ও মস্কোর মধ্যবর্তী একটি শহর ভরোনেঝও দখল করে নেয়। এখন এই অঞ্চলের গভর্নর জানাচ্ছেন যে ওয়াগনার বাহিনী সেখান থেকেও চলে যাচ্ছে। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটলেই চলাচলের ওপর যেসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল সেগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এই ওয়াগনার যোদ্ধাদের ভবিষ্যৎ কী সেটাও পরিষ্কার নয়। তারা কী ইউক্রেনে ফিরে যাচ্ছে না কি অন্য কোথাও যাচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়।
ওয়ারশ থেকে বিবিসির পূর্ব ইউরোপ বিষয়ক সংবাদদাতা স্যারাহ রেইন্সফোর্ড বলছেন, পুতিন বিশ্বাসঘাতকতা পছন্দ করেন না। বিশ্বাসঘাতকদের তিনি তীব্রভাবে ঘৃণা করেন। ‘ফলে ক্রেমলিন যে বলছে বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত সৈন্যদের বিরুদ্ধে আনা ফৌজদারি অভিযোগ প্রত্যাহার করা হবে সেটা বিশ্বাস করাও কঠিন,’ বলছেন তিনি। একই সাথে ক্রেমলিন এবং রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় চাইছে ভাড়াটে এই সৈন্যদেরকে সামরিক বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করে নিতে। সৈন্যরা রুশ সামরিক বাহিনীতে যোগ দিবে কি না সেটাও পরিষ্কার নয়। তবে যদি সেরকম কিছু হয় তাহলে এই ওয়াগনার বাহিনীরও অবসান ঘটবে।
প্রিগোশিন বেলারুশে কী করবেন তাও স্পষ্ট নয়। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলছেন তিনি যদি বেলারুশে চলে যান, এবং তার বাহিনীও তাকে অনুসরণ করে, তাহলে সেখান থেকেও তিনি ইউক্রেনের জন্য নতুন করে হুমকি হয়ে উঠতে পারে। কারণ বেলারুশ থেকে রাজধানী কিয়েভ সবচেয়ে কাছে এবং সেখান থেকে রাশিয়া রাজধানীর ওপর আক্রমণ শানাতে পারে। এরকম অনিশ্চিত ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যেও রাশিয়া গতরাতে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে নিকোপোল শহরে চালানো এক হামলায় এক বয়স্ক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন