ঢাকা   সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪ | ২৭ কার্তিক ১৪৩১

মানবেতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে গাজার খান ইউনিসে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:১৯ পিএম

 

 

 

গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের ওপর দিয়ে যেন মানবেতর পরিস্থিতির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। শত সহস্র মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে যে যা কিছু বহন করতে পেরেছে, তা নিয়ে এখানে পালিয়ে এসেছে। যাদের জ্বালানি আছে তারা গাড়ি করে এসেছে, যারা ঘোড়ার গাড়ি পেয়েছে সেটায় চড়ে এসেছে। আর যারা কিছুই পায়নি তারা নিরুপায় হয়ে পায়ে হেঁটে এসেছে।

 

এখানে এসে তারা যা দেখতে পেয়েছে তা হল, ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা একটি শহর। যে শহর রাতারাতি দ্বিগুণ পরিমাণ মানুষের ভার নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি রাস্তা নারী-পুরুষ আর শিশুদের ভিড়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। ইসরাইল গাজা সিটির বাসিন্দাদের তাদের শহর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলে লাখ লাখ মানুষ দক্ষিণের ওই শহরে পা বাড়ায়। হামাস বলছে, যে ১১ লাখ মানুষ গাজার উত্তরাঞ্চলকে নিজেদের আবাসস্থল বলে এতোদিন ধরে জেনে আসছে, তাদের মধ্যে চার লাখ মানুষ গত ৪৮ ঘণ্টায় সালাহ আল-দিন রোড হয়ে দক্ষিণের দিকে গিয়েছে।

 

ইসরাইলে হামাসের বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে ১৩শ মানুষকে হত্যার পর গাজায় ইসরাইল পাল্টা বোমাবর্ষণ শুরু করে। ইসরাইলের এই চলমান হামলা ও সম্ভাব্য অভিযান সত্ত্বেও হামাস গাজাবাসীকে তাদের অবস্থানে থাকার নির্দেশ দেয়। যা অনেক মানুষ গ্রহণ করেনি। কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের এই সংকীর্ণ উপত্যকা এলাকার চারদিক অবরুদ্ধ এবং বাকি বিশ্বের থেকে বিচ্ছিন্ন, যেখানে সুযোগ-সুবিধা ও বিকল্প অনেক সীমিত, যেখানে নিশ্চিত নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।

 

তাই এই বিপুল সংখ্যক গাজাবাসী এক জায়গায় জড়ো হয়েছেন। যাদের অনেকে ইতিমধ্যেই বোমা হামলায় তাদের বাড়িঘর হারিয়েছেন, নিঃস্ব হয়েছেন, প্রতিনিয়ত আতঙ্কের সাথে বসবাস করছেন, সামনে কী হতে পারে কেউ কিছুই জানে না। খান ইউনিস শহরটিতে মূলত চার লাখের মতো মানুষ বসবাস করেন। এখন রাতারাতি এই শহরের লোকসংখ্যা বেড়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। উত্তরাঞ্চলের পাশাপাশি, গাজার পূর্ব দিক থেকেও এসেছেন অনেকে, যারা ২০১৪ সালের যুদ্ধে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাদের প্রত্যেকেরই আশ্রয় এবং খাবারের প্রয়োজন, এবং সেটা কতদিন ধরে দরকার হবে কেউ জানে না।

 

পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে

গাজার সীমিত যে সম্পদ রয়েছে সেটাও দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক শহর যা ইতিমধ্যেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। আর এখন জনস্রোত এতোটাই বড় আকার নিয়েছে যে সবকিছু ভেঙে পড়তে শুরু হয়েছে। এখানকার প্রধান হাসপাতালটি আগে থেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে ভুগছিল। এখন এখানে শুধু অসুস্থ ও আহতরাই আসছেন না-বরং হাসপাতালটি উত্তরাঞ্চল থেকে আসা এই মানুষগুলোর আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

 

বাস্তুচ্যুত এই মানুষেরা হাসপাতালের করিডোরে লাইন ধরে অপেক্ষা করছেন। আর চিকিৎসকরা ইসরাইলি বোমার আঘাতে আহত নতুন এই মানুষদের সেবায় কাজ করছেন। তাদের আহাজারি আর প্রার্থনার স্বরে ভারী হয়ে পড়েছে আশেপাশের বাতাস। এখানে আসার জন্য আপনি কোন মানুষকে দোষ দিতে পারবেন না। কারণ যুদ্ধের সময়ে হাসপাতালগুলো আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা সুরক্ষিত সবচেয়ে নিরাপদ স্থানগুলোর মধ্যে একটি।

 

এমন কিছু ব্যবস্থার কারণে হাসপাতালের এই আহত মানুষগুলো সম্ভবত ভাগ্যবান, অন্তত এখনকার মতো ভাগ্যবান বলাই যায়। চিকিৎসকরা বলছেন যে, নতুন হতাহতের স্রোত সামাল দেয়ার মতো তাদের কাছে প্রায় কিছুই নেই। রোগীদের জন্য দিনে জনপ্রতি তিনশ মিলিলিটার পানি সরবরাহ করা হয়। শরণার্থীরা তার কিছুই পায় না। তবে খান ইউনিসের বাসিন্দারা নতুন আসা এই মানুষদের সাদরে গ্রহণ করেছে। খান ইউনিস আগে থেকেই বেশ ঘনবসতি এলাকা অর্থাৎ অনেক মানুষ অল্প জায়গায় বসবাস করতেন। এখন নতুনরা আসায় তারা রীতিমতো ঠাসাঠাসি করে থাকছেন।

 

শহর জুড়ে থাকা স্কুলগুলো, যুদ্ধ থেকে "নিরাপদ" স্থান বলে বিবেচিত। এই স্কুলগুলো অসংখ্য পরিবারে পরিপূর্ণ – এসব মানুষের সংখ্যা হাজার হাজার, নিশ্চিতভাবে কে জানে? আপনি হয়তো গুনেও শেষ করতে পারবেন না। জাতিসংঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ দ্বারা পরিচালিত একটি স্কুলের, প্রতিটি শ্রেণীকক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ, প্রতিটি বারান্দার জায়গা লাইন ধরে মানুষের কাপড় ঝোলানো। মা এবং দাদিরা উঠোনে না হলে পার্কের বেঞ্চে রান্না করছেন কারণ তাদের ক্ষুধার্ত শিশুরা অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছে।

 

কিন্তু যখন আর কোন জায়গা থাকে না – এবং আসলেই কোন জায়গা থাকে না – তখন এই মানুষগুলো অনিবার্যভাবে রাস্তায় ছিটকে পড়ে। গাজার এই শহরের অলিগলি এবং আন্ডারপাসগুলো মানুষে মানুষে ছেয়ে গিয়েছে। ধুলা, ময়লা, এবং ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এই মানুষগুলো জীবনযাপন করছে, ঘুমাচ্ছে। তারা অপেক্ষা করছে আরও ভাল কিছুর জন্য, যে অপেক্ষার প্রহর হয়তো কখনোই ফুরাবে না। এখানে খাদ্য সীমিত, জ্বালানী সীমিত, দোকানপাটে কোথাও কোন পানি নেই। পানির স্টেশনগুলোই একমাত্র ভরসা, সব মিলিয়ে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

৬.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কিউবা
গাজা-লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ৯৪
পুতিনকে ফোন ট্রাম্পের, ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর আবেদন
বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন
গরিব দেশে নিম্নমানের জিনিস বিক্রি করে নেসলে, পেপসিকো!
আরও

আরও পড়ুন

৬.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কিউবা

৬.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল কিউবা

গাজা-লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ৯৪

গাজা-লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ৯৪

পুতিনকে ফোন ট্রাম্পের, ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর আবেদন

পুতিনকে ফোন ট্রাম্পের, ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর আবেদন

বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন

বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন

পাঁচদিন পর জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার হলো ১৯ জেলে

পাঁচদিন পর জলদস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার হলো ১৯ জেলে

গরিব দেশে নিম্নমানের জিনিস বিক্রি করে নেসলে, পেপসিকো!

গরিব দেশে নিম্নমানের জিনিস বিক্রি করে নেসলে, পেপসিকো!

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সিওয়াইবির নতুন নেতৃত্বে ওয়াসিফ-মুনিম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সিওয়াইবির নতুন নেতৃত্বে ওয়াসিফ-মুনিম

খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছেন : সারজিস আলম

খুনি হাসিনার তেলবাজরাও উপদেষ্টা হচ্ছেন : সারজিস আলম

এখনই সময় ইসরাইলকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের : কাজেম গারিবাবাদি

এখনই সময় ইসরাইলকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কারের : কাজেম গারিবাবাদি

প্রতিরক্ষা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরান সফরে সউদী সেনাপ্রধান

প্রতিরক্ষা নিয়ে আলোচনার জন্য ইরান সফরে সউদী সেনাপ্রধান

বাটলার ঝড়ে ২-০তে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড

বাটলার ঝড়ে ২-০তে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড

মাদারীপুরের শিবচরে প্রতিবেশীর কিল-ঘুষির আঘাতে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ

মাদারীপুরের শিবচরে প্রতিবেশীর কিল-ঘুষির আঘাতে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ

বার্সালোনার জয়রথ থামাল সোসিয়াদাদ

বার্সালোনার জয়রথ থামাল সোসিয়াদাদ

প্রিমিয়ার লীগে ফের ইউনাইটেডের জয়

প্রিমিয়ার লীগে ফের ইউনাইটেডের জয়

সমতায় শেষ লন্ডন ডার্বি

সমতায় শেষ লন্ডন ডার্বি

স্টাবস-কোয়েটজির ব্যাটে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা

স্টাবস-কোয়েটজির ব্যাটে সিরিজে সমতা ফেরাল দক্ষিণ আফ্রিকা

শেষ ওভারের থ্রিলারে কিউইদের   নাটকীয় জয়

শেষ ওভারের থ্রিলারে কিউইদের   নাটকীয় জয়

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

দফতর পুনর্বণ্টনের পর কে পেলেন কোনটি

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা বন্ধ করেছে কাতার

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভ