ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

খুন করলে কেমন লাগে? স্রেফ কৌতূহলেই গৃহশিক্ষিকাকে হত্যা মহিলার

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯ এএম | আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫৯ এএম

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ হত্যা করে হিংসার বশবর্তী হয়ে। কখনও সেই হিংসার জন্ম দেয় টাকা-পয়সা সংক্রান্ত বিবাদ, কখনও প্রণয়-ঘটিত বিষয়, কখনও পুরোনো শত্রুতা। আবার কেউ কেউ হয় সিরিয়াল কিলার। খুন না করে তারা থাকতে পারে না। কিন্তু, কোনও মানুষকে খুন করলে কেমন লাগে, সেই কৌতূহল থেকে কেউ কাউকে হত্যা করছেন, এমনটা সচরাচর দেখা যায় না। এই বিরলতম ঘটনাই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। শুধুমাত্র কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে এক মহিলাকে হত্যা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে এক মহিলা। সরকারের পক্ষ থেকে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছিল। তবে শুক্রবার, সেখানকার আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। তবে, এই ঘটনা তীব্র শোরগোল ফেলে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয় সমাজে।

 

অপরাধ বিষয়ক উপল্যাস, সিনেমা, ওটিটি সিরিজের পোকা ছিল ২৩ বছর বয়সী জুং ইয়ু-জং। দাদার সঙ্গে থাকত, কারও সঙ্গে সম্পর্কও ছিল না। রহস্য এবং অপরাধ সংক্রান্ত উপন্যাস, টেলিভিশন শো নিয়েই তার দিন কাটত। দীর্ঘদিন ধরে এই কাল্পনিক অপরাধের জগতে ঘোরাঘুরি করতে করতে তার বাস্তবে অপরাধ করার ইচ্ছে জেগেছিল। বস্তু, হত্যা করার স্বাদ পেতে চেয়েছিল সে। আর শিকার খোঁজার জন্য সে বেছে নিয়েছিল এক টিউটরিং অ্যাপ। এই অ্যাপের মাধ্যমে গৃহশিক্ষকদের সন্ধান পাওয়া যায়। গৃহশিক্ষকদের মধ্যেই বা বলা ভাল, শিক্ষিকাদের মধ্যেই সে তার শিকার খুঁজেছিল। চলতি বছরের মে মাসে, সে প্রথম অ্যাপটিতে যোগ দিয়েছিল। ৫০ জনেরও বেশি মহিলা গৃহশিক্ষিকাকে যাচাই করার পর, এক ২৬ বছর বয়সী ইংরেজি-ভাষার শিক্ষিকাকে বেছে নিয়েছিল সে।

 

নিজের পরিচয় দিয়েছিল এক শিশুর মা হিসেবে। শিক্ষিকাকে সে জানিয়েছিল, তার সন্তান উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। এরপর, বুসানে সেই শিক্ষিকার বাড়িতেই তার সঙ্গে দেখা করেছিল সে। পুলিশ জানিয়েছে, নিজেকে ছাত্রীর মা হিসেবে পরিচয় দিলেও, গৃহশিক্ষিকার বাড়িতে নিজেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে গিয়েছিল জু ইউ-জং। তার বাড়িতে ঢুকেই সে একটি ছুরি দিয়ে গৃহশিক্ষিকাকে কোপাতে শুরু করেছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শিক্ষিকাকে সে ১০০ বারেরও বেশি আঘাত করেছিল। এমনকি, শিক্ষিকার মৃত্যু হওয়ার পরও সে ছুরি দিয়ে কোপানো বন্ধ করেনি। এরপর তাঁর দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে দেহাংশগুলিকে একটি স্যুটকেসে ভরেছিল সে। স্কুলের ইউনফর্ম ছেড়ে নিহত শিক্ষিকার পোশাকটি পরে নিয়েছিল সে। তারপর, একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে সুটকেসটি বুসানের এক নদীর ধারে একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। শরীরের কিছু অংশ অবশ্য সে নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছিল।

 

তবে, অপরাধের নেশায় সে কোনওরকম সতর্কতা অবলম্বন করেনি। আর সেই কারণেই দ্রুত ধরাও পড়ে গিয়েছিল জু ইউ-জং। যে ট্যাক্সিতে করে, সে দেহ লোপাট করতে গিয়েছিল, সেই ট্যাক্সির চালক দেখেছিলেন, ইউ-জং-এর পোশাকে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। এরপর, স্যুটকেসটি নির্জন জায়গায় ফেলে আসতে দেখে তার সন্দেহ হয়েছিল। তিনি পুলিশে খবর দিয়েছিলেন। দেহাংশগুলি উদ্ধারের পর এই বিষয়ে তদন্তে নেমেছিল পুলিশ। জং-এর অনলাইন ব্রাউজিং-এর ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছিল, কাউকে কীভাবে হত্যা করতে হয়, সেই বিষয়ে কয়েক মাস ধরে গবেষণা করেছিল সে। শিক্ষিকার বুসানের বাড়ির কাছে সিসিটিভি ক্যামেরাও লাগানো ছিল। সেই ক্যামেরায় গৃহশিক্ষিকার বাড়ি থেকে তার স্যুটকেস নিয়ে বের হওয়ার ছবি বন্দি হয়েছিল।

 

ধরা পড়ার পর, পুলিশি জেরার মুখে প্রাথমিকভাবে অপরাধ অস্বীকার করেছিল ইউ-জং। পুলিশ কর্তাদের বেশ কয়েকবার ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করে সে। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত গত জুন মাসে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিল সে। শুক্রবার, বুসান জেলা আদালতের বিচারক, রায় ঘোষণার সময় বলেন, “কোনও কারণ ছাড়াই কারও হত্যা হতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডে সমাজে এই ভয় তৈরি হয়েছে। জনসাধারণের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।” আদালতে ইউ-জং দাবি করে, সে সেই সময়ে ‘হ্যালুসিনেশন’ এবং অন্যান্য মানসিক ব্যাধিতে ভুগছিল। তাই, তার সাজা কমানো হোক। আদালত কিন্তু তার যুক্তি মানেনি। বিচারক সাফ জানান, পরিকল্পনা করে, সতর্কতার সঙ্গেই এই অপরাধ করেছিল ইউ-জং। তাই তার মানসিক ও শারীরিক ব্যাধির দাবি মেনে নেয়া যায় না।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী