ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

জার্মানিতে নাগরিকত্ব পেতে হলে ইসরাইলকে সমর্থন দিতে হবে!

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

 

 

 

জার্মানির পূর্বের রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্ট বিদেশিদের নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত যুক্ত করেছে৷ আবেদনকারীকে এখন লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি ‘ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইলের অস্তিত্বের বিপক্ষে যে কোন প্রচেষ্টার নিন্দা জানান'৷ সাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেছেন৷ বাকি ১৫টি রাজ্যের প্রতিও একই নিয়ম আরোপের জন্য বুধবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি৷

 

জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও এর বাস্তবায়ন ১৬টি রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে৷ নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরাইল সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগেও৷ সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে সারা জার্মানিতেই তখন নিয়মটি কার্যকর হবে৷ জিশাং ডয়চে ভেলেকে জানান, ইসরাইলের উপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয় বরং ‘ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার' তুলে ধরার প্রচেষ্টা৷

 

সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি এবং ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা, দুই ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে সামনে এনেছে মধ্য-ডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ৷ ক্ষমতাসীনেরাসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে৷ তবে অ্যান্টি সেমিটিজম বা ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তিন দলীয় জোট সরকার৷ বরং সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদম্যান অস্থির পরিস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের৷

 

তবে জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, এটি তার রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের ‘বিকাশের জন্য আরও সুযোগ করে দেয়ার' একটি উপায়৷ বিদেশিদের লক্ষ্য করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ইহুদিসহ জার্মানির অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বড় হুমকি মোকাবিলায় তা কাজে আসবে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ কেননা অপরাধের নিয়মিত পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিদেশিদের চেয়ে অনেক বেশি৷

 

সাক্সনি-আনহাল্টেই ২০১৯ সালে সিনাগগে হামলায় দুইজন নিহত হন৷ হামলাকারী ছিলেন একজন উগ্র ডানপন্থি জার্মান৷ ২০২০ সালে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়৷ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়৷ সাক্সনি-আনহাল্টে এরইমধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে৷ রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা তারও বেশি লাগে৷ অবশ্য এমন দেরির ঘটনা এখন গোটা জার্মানিতে স্বাভাবিক৷

 

জার্মানির জাতীয় স্বার্থ

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হলোকাস্টে জার্মানির তৎকালীন নাৎসি সরকার ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করে৷ তার প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেয়া ভাষণে জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ইসরাইলের নিরাপত্তাকে জার্মানির জাতীয় স্বার্থ বলে ঘোষণা দেন৷ জিশাং মনে করেন, নাগরিকত্বের শর্তের বিষয়ে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত জার্মানির সেই অবস্থানেরই বহিঃপ্রকাশ৷

 

জার্মানির সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বরাবরই ইসরাইল প্রতি জার্মানির ঘোষিত দায়িত্বের সমর্থন করে৷ ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১২০০ জন নিহতের ঘটনার পর বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আরো জোরালোভাবে একাধিকবার এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন৷

 

তবে এ বিষয়ে জার্মানির জনগণের মধ্যে এখনও বিভক্তি রয়ে গেছে৷ নভেম্বরের শেষে আলেন্সবাখ নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক-তৃতীয়াংশ ইসরাইলের প্রতি জার্মানির ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ হামাসকে ধ্বংসে ইসরাইলের বর্তমান অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৫ শতাংশ, অন্যদিকে ইসরাইলের সংযম প্রদর্শনের পক্ষে মত ৩৮ শতাংশের৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা