ঢাকা   রোববার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪ | ১৯ কার্তিক ১৪৩১

গাজায় বন্দিদের ‘অস্ত্র সমর্পণের’ দাবি করা ছবি ভুয়া!

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১১ পিএম | আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:১১ পিএম

গাজায় আটক উলঙ্গ ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরাইলি বাহিনীর কাছে ‘অস্ত্র সমর্পণ’ করার কিছু ছবি নিয়ে নানা ধরণের জল্পনা আর প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ওই ঘটনার সময়কার সার্বিক পরিস্থিতি এবং তার ছবি তোলার বিষয়টি নিয়ে নানা ধরণের সন্দেহ দানা বাধছে।

 

প্রাথমিকভাবে একই দৃশ্যের দুটি ভিডিও দেখা যাচ্ছে, যেখানে অন্তর্বাস পরিহিত এক ব্যক্তি অস্ত্র জমা দেয়ার নির্দেশ মেনে মাটিতে অস্ত্র রাখছেন। কিন্তু দুটি ভিডিওর মধ্যে সামান্য পার্থক্য থাকার কারণে মনে করা হচ্ছে যে, হয়তো কয়েকটি ‘ধাপে’ এটি একাধিকবার ধারণ করা হয়েছে। বিবিসি ভেরিফাই এই ফুটেজ যাচাই করে দেখেছে এবং তারা বলছে যে, দুটি ভিডিও ক্লিপই একটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে মোট তিনটি বন্দুক সমর্পণ করা হয়েছে।

 

কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি এবং ভিডিও প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। দুটি আলাদা ভিডিওতে কিছুটা ভিন্ন বৈশিষ্ট্য সমৃদ্ধ একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে এবং এগুলো গত নয়ই ডিসেম্বর শনিবার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এখন অভিযোগ উঠেছে, কয়েক বারের প্রচেষ্টায় এই ভিডিওগুলো ধারণ করা হয়েছে। অনেকেই কীভাবে একই ব্যক্তি দুটি ভিডিওতে ভিন্ন হাতে বন্দুক ধরেছে তার দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করছেন।

 

বিবিসি ভেরিফাই বলছে, এই ফুটেজগুলো আসলে একটি চলমান ঘটনারই আলাদা দুটি দৃশ্য। তবে, কয়েকবারের প্রচেষ্টায় ধারণ করা ভিডিও নয়, এবং একই ব্যক্তি বারবার যাওয়া-আসা করে আলাদা বন্দুক এবং খুলে রাখা গুলি এনে পায়ে হাঁটা রাস্তার উপর জড়ো করছেন। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার পাশে আরো কয়েক ডজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দেখছেন। তারাও অন্তর্বাস পরিহিত এবং তাদের অনেকেই অস্ত্র ও পরিচয়পত্র উপরে তুলে ধরে আছেন।

 

বিবিসি ভেরিফাই জানতে পেরেছে যে তারা জাবালিয়ার উত্তরে বেইত লাহিয়া শহরে জাতিসংঘের একটি স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। সূর্যের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে যে, একটি ভিডিও প্রথমে ধারণ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি তার ডান হাত দিয়ে একটি বন্দুক ফুটপাতে রাখা আরেকটি বন্দুকের উপর রাখছেন। পরের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সূর্য নিচে নেমে গেছে, একজন ব্যক্তি আরেকটি বন্দুক এনে বাম হাত দিয়ে অন্যগুলোর উপর রাখছে।

 

স্থির চিত্রের কারণেই এরই অনুমানগুলো পোক্ত হয়েছে, যেখানে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বন্দুক রাখা হয়েছে এবং অন্যটিতে দেখা যাচ্ছে রাস্তার উপর তিনটি বন্দুক ও ম্যাগাজিন রাখা রয়েছে। এই ফুটেজ আরো কিছু প্রশ্ন সামনে এনেছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, আর তা হচ্ছে ওই ব্যক্তিদের অস্ত্রের মুখে রাখা হয়েছিল এবং তাদেরকে ক্যামেরার পেছন থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল। তাই এটা স্পষ্ট নয় যে তারা কি আসলে অস্ত্র ‘সমর্পণ’ করছিল নাকি তারা শুধু নির্দেশ মোতাবেক অস্ত্রগুলো সরিয়ে রাখছিল। কারণ ওই ব্যক্তিকে এরইমধ্যে শুধু অন্তর্বাস পড়ে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে, এবং তার সেগুলো নিজে লুকিয়ে রাখার মতো অবস্থাও ছিল না।

 

ইসরাইলি সেনাবাহিনী এসব অস্ত্র সম্পর্কে জানতো না- এমন সম্ভাবনাও খুবই কম। তার মানে হচ্ছে, বাস্তবিকপক্ষে সমর্পণের পরিবর্তে শুধুমাত্র ক্যামেরায় ধারণ করার জন্যই এমনটা করা হয়েছে। আমরা জানি না যে, ওই ব্যক্তি বা ভিডিওতে দেখানো আর কোন ব্যক্তি হামাস বা গত সাত অক্টোবরের হামলার সাথে জড়িত কিনা। একটি ভিডিওতে শেষের দিকে একটি ডিএসএলআর এর জুম লেন্স খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর পাশাপাশি ছবিও প্রকাশিত হচ্ছে যেগুলো একটু ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা হয়েছে। এর থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে, এ ঘটনা একাধিক ব্যক্তি এবং একাধিক ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ধারণা করা হয়েছে।

 

গত কয়েক সপ্তাহে গাজায় ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছবি প্রকাশিত হওয়ার পর কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকেই। বন্দিদের সাথে হওয়া আচরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। রেড ক্রস ইতোমধ্যে বলেছে যে, আন্তর্জাতিক আইন মেনেই বন্দিদের সাথে আচরণ করা উচিত। কিন্তু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে অগ্রগতি অর্জন করছে তার প্রমাণ দেখাতে আগ্রহী দেশটি।

 

রবিবার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘সম্প্রতি কয়েক দিনে, হামাসের কয়েক ডজন যোদ্ধা আমাদের বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। তারা তাদের অস্ত্র জমা দিচ্ছে এবং নিজেরা আমাদের বীরোচিত যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। আরো সময় লাগবে, যুদ্ধ পুরোদমে চলছে, কিন্তু এটা হামাসের সমাপ্তির শুরু।’ ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই ভিডিও নিয়ে ওঠা প্রশ্ন বা সন্দেহের ব্যাপারে সরাসরি কোন প্রশ্নের উত্তর বা প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল গাজা, ইউক্রেন ও সুদান যুদ্ধ প্রভাবিত করবে?

মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল গাজা, ইউক্রেন ও সুদান যুদ্ধ প্রভাবিত করবে?

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট

নাজমা মোবারেক ইতিহাসে প্রথম নারী সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে

নাজমা মোবারেক ইতিহাসে প্রথম নারী সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে

ফুলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আ'লীগ নেতা শশধর সেন গ্রেফতার

ফুলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আ'লীগ নেতা শশধর সেন গ্রেফতার

আখাউড়ায় সংঘর্ষে আহত নয়জন, পাল্টাপাল্টি মামলা

আখাউড়ায় সংঘর্ষে আহত নয়জন, পাল্টাপাল্টি মামলা

ভারতে হলে কিভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতেন ট্রাম্প-কমলা

ভারতে হলে কিভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতেন ট্রাম্প-কমলা

রংপুরে হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যু দন্ড, ১ জনের যাবজ্জীবন

রংপুরে হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যু দন্ড, ১ জনের যাবজ্জীবন

ইবিতে ছাত্র আন্দোলন দমাতে আওয়ামীপন্থীদের যত তৎপরতা

ইবিতে ছাত্র আন্দোলন দমাতে আওয়ামীপন্থীদের যত তৎপরতা

পঞ্চগড়ে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক আটক

পঞ্চগড়ে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে শিক্ষক আটক

লাইসেন্স ফি কমানোর দাবিতে ফরিদপুরে অটো চালকদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন

লাইসেন্স ফি কমানোর দাবিতে ফরিদপুরে অটো চালকদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন

আটঘরিয়ার হস্তালিত তাঁতের তৈরি চাচকিয়ার লুঙ্গি এখন একটি ব্রান্ড

আটঘরিয়ার হস্তালিত তাঁতের তৈরি চাচকিয়ার লুঙ্গি এখন একটি ব্রান্ড

রংপুর মেডিকেল নতুন অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতি

রংপুর মেডিকেল নতুন অধ্যক্ষকে অপসারণের দাবিতে কর্মবিরতি

পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেল দেশের আরেকটি প্রতিষ্ঠান

পরিবেশবান্ধব কারখানার স্বীকৃতি পেল দেশের আরেকটি প্রতিষ্ঠান

শ্যামপুরে গ্যাস লিকেজে বিস্ফোরণ : দগ্ধ একজনের মৃত্যু

শ্যামপুরে গ্যাস লিকেজে বিস্ফোরণ : দগ্ধ একজনের মৃত্যু

টিউবওয়েলের পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে চুরি

টিউবওয়েলের পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে চুরি

রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী, অক্টোবরে প্রবাসী আয় ২.৩০ বিলিয়ন ডলার

রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী, অক্টোবরে প্রবাসী আয় ২.৩০ বিলিয়ন ডলার

নিরাপদ প্রজননের পরে ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল

নিরাপদ প্রজননের পরে ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল

সঠিক আরওপি ব্যবস্থাপনা না হলে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়বে বাংলাদেশে

সঠিক আরওপি ব্যবস্থাপনা না হলে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়বে বাংলাদেশে

ইসি সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক, কমিশন গঠনে সৎ-নির্ভীক ও দক্ষ লোক নিয়োগ হবে’

ইসি সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠক, কমিশন গঠনে সৎ-নির্ভীক ও দক্ষ লোক নিয়োগ হবে’

সোনালী ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে চুক্তি

সোনালী ব্যাংক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মধ্যে চুক্তি