ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১

আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৪৫ পিএম

মামলা, আদালতে ছোটাছুটির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের পেসিডেন্ট পদে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন দৌঁড়ে অনেকটাই এগিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ সাউথ ক্যারোলাইনায় দলের প্রাইমারিতে বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হেইলিকে।

 

নানা অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দলীয় মনোনয়নের দৌড়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেই তিনি নিজের জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।

 

"বাইডেন, ইউ আর ফায়ারড্! গেট আউট, গেট আউট!"

 

আসছে নভেম্বরে জো বাইডেনের চোখে চোখ রেখে এই কথাটা বলবেন, ফেব্রুয়ারিতেই সেই ঘোষণা দিয়ে রাখছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

 

সাউথ ক্যারোলাইনায় দলের প্রাইমারিতে নিকি হেইলির বিরুদ্ধে বড় জয়ের পর রিপাবলিকানদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন তিনি।

 

দ্বিতীয়বার তার প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ ছিল খোদ রিপাবলিকান দলের মধ্যেই। কিন্তু এখন মনোনয়নের দৌড়ে তার সাথে রয়েছেন মাত্র একজন প্রার্থী, তাও ট্রাম্প থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে।

 

সাউথ ক্যারোলাইনা হেইলির নিজের রাজ্য হওয়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতির জয়টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদিও নিকি হেইলি এখনই লড়াই ছাড়ছেন না।

 

তিনি অন্ততঃ ‘সুপার টুইসডে’ পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। মার্চের পাঁচ তারিখ সেই মঙ্গলবার। সেদিন ১৬ টি রাজ্যের রিপাবলিকানরা তাদের রায় জানাবেন।

 

সাউথ ক্যারোলাইনার জয় উদযাপন করার সময় মি. ট্রাম্প মিজ হেইলির কথা একবারও উল্লেখ করেননি। তার নজর নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে।

 

হোয়াইট হাউসে তারই উত্তরসূরি বাইডেনের সাথে একটি ‘রি-ম্যাচ’ বা পুনঃ লড়াইয়ের সম্ভাবনা এখন প্রবল।

 

শনিবারের ফলাফলের পরে দলের "ঐক্যের" প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। বলেছেন, "এমন মনোভাব আগে কখনও ছিল না। আমি রিপাবলিকান পার্টিকে এতটা ঐক্যবদ্ধ কখনও দেখিনি।"

 

মামলার জাল

এই দৌঁড়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে প্রতিবন্ধকতাও নেহায়েত কম নয়।

 

সপ্তাহ খানেক আগেই তাকে প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি ডলার জরিমানা করেছেন দেশটির একজন বিচারক। তবে সুদসহ এই অংক দাঁড়াতে পারে ৪৫ কোটি ডলার।

 

সম্পত্তির মূল্য সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের তহবিলে এই জরিমানা দিতে হবে তাকে।

 

নিউ ইয়র্কের কোনো ব্যাংক থেকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য ঋণ নেয়ার বিষয়ে তার ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন বিচারক আর্থার এনগোরন। পাশাপাশি মি. ট্রাম্প তার কোম্পানির পরিচালকও থাকতে পারবেন না বলে আদেশ দেয়া হয়েছে।

 

এই রায়কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

 

মি. ট্রাম্পের পাশাপাশি তার দুই পুত্র ডোনাল্ড জুনিয়র আর এরিককেও – ৪০ লাখ ডলার করে জরিমানা দিতে হবে।।

 

দুই বছরের জন্য তাদের নিউ ইয়র্কে ব্যবসা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে রায়ে।

 

এই জরিমানা বাদেও একটি মানহানির মামলায় লেখক ই জন ক্যারলকে প্রায় সাড়ে আট কোটি ডলার জরিমানা দেয়ার কথা রয়েছে মি. ট্রাম্পের।

 

পর্যন্ত মোট পাঁচটি মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে।

 

এর মধ্যে সরকারি গোপন নথি নিজের কাছে রাখা এবং ক্যাপিটল হিল দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে মামলা চলছে তার বিরুদ্ধে।

 

তবুও ট্রাম্পের এত জনপ্রিয়তা কেন?

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনি ঝামেলা দিন দিন যতই বাড়তে থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান প্রার্থীদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা একটুও কমেনি।

 

গত এপ্রিলে যখন প্রথমবারের মতো অভিযুক্ত হলেন - তারপর থেকে বস্তুত তার পক্ষে সমর্থন বেড়েছে। যদিও মি. ট্রাম্পই হলেন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হওয়া প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।

 

প্রথমবার গ্রেফতার হওয়া ও আদালতে হাজিরা দেবার পর থেকে মি. ট্রাম্পই পরিণত হয়েছেন রিপাবলিকান ভোটারদের প্রথম পছন্দে।

 

"ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার সমর্থকদের মধ্যে যে একাত্মতাবোধ - তা ভাঙা কঠিন হবে" - মনে করেন ক্লিফোর্ড ইয়ং, যুক্তরাষ্ট্রে ইপসসের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা।

 

রিপাবলিকান ভোটারদের ৪০ থেকে ৪৫%-ই ট্রাম্প সমর্থক, এবং মি. ইয়ং বলছেন, তারা ট্রাম্পের চোখ দিয়েই দুনিয়াকে দেখে।

 

"তারা বিশ্বাস করে মি. ট্রাম্পের প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।"

 

গোপন দলিলপত্র নিজের কাছে রাখার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে মামলা - তা নিয়ে বিবিসি কিছু রিপাবলিকান ভোটারের সাথে কথা বলেছে, এবং একই রকম মতামত পেয়েছে।

 

এ বছরের শুরু থেকেই মি. ট্রাম্পকে একদিকে প্রচারাভিযানের সময়সূচি এবং আরেকদিকে আদালতে হাজিরা দেয়া - এ দুটিই সামাল দিতে হচ্ছে।

 

দোষী সাব্যস্ত হলেও বা দণ্ডিত হলেও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা আগেই দিয়ে রেখেছেন দিয়েছেন এই রিপাবলিকান।

 

আপাতত যা দেখা যাচ্ছে তা হলো, মি. ট্রাম্প জনসমর্থনের দিক থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চেয়ে কিছুটা এগিয়েই আছেন।

 

দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন ৪৬ শতাংশ জনমত ট্রাম্পের পক্ষে। আর বাইডেনকে চান ৪৪ শতাংশ মার্কিনি।

 

জরিপের গ্রাফে দেখা যাচ্ছে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে জনপ্রিয়তায় বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন ট্রাম্প।

 

জো বাইডেনের চ্যালেঞ্জ

সাম্প্রতিক সময়ে মি. বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা গড়িয়েছে অনেক। সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা বিমান উঠতে গিয়ে হোঁচটা খাওয়ার ঘটনাগুলো খুব একটা ভালো ধারণা দেয় না তার শারীরিক সক্ষমতার ব্যাপারে।

 

বিপাকে আছেন স্মৃতি বিভ্রমের ঘটনায়। কয়েকবার গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় ভুলে গেছেন বা ভুল বলেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে।

 

নিজের স্মৃতিশক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সপ্তাহ দুয়েক আগে। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছেন, “আমার স্মৃতিশক্তি ঠিক আছে।”

 

স্পেশাল কাউন্সেল রবার্ট হার অতি গোপনীয় নথি রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে মি. বাইডেনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

 

কিন্তু তার তদন্ত প্রতিবেদনে বেশ কিছু কঠোর সমালোচনাও রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে প্রেসিডেন্টের স্মৃতিশক্তিতে “উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা” রয়েছে।

 

এতে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে নথিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করার অভিযোগ আনাটা মুশকিল কারণ, “বিচারের সময় মি. বাইডেন বিচারকের সামনে নিজেকে একজন সহানুভূতিশীল, সদালাপী এবং দুর্বল স্মৃতিশক্তি সম্পন্ন বয়স্ক মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করবেন, আমাদের সামনেও তিনি যেটি করেছেন।”

 

এর প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেছেন, বয়স সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি।

 

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ৭৭ বছর বয়সী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারবেন সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি

প্রেসিডেন্টের অপসারণ ইস্যুতে সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএনপি