ঢাকা   রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪ | ১২ কার্তিক ১৪৩১

পরিবারের ১০৩ সদস্যকে হারিয়েছেন গাজার যে ব্যক্তি

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম | আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:০৮ পিএম

 

 

যে বোমাটির হাত থেকে আহমাদ আল-ঘুফেরি বেঁচে গেছেন, সেটি তার পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজা শহরে তার বাড়িতে হওয়া এই বোমা হামলায় তার পরিবারের মোট ১০৩ জন সদস্য নিহত হন। এই হামলার সময় তিনি গাজা শহর থেকে ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরের দখলকৃত জেরিকো’র পশ্চিম তীর শহরে আটকা পড়েছিলেন।

 

গত সাত অক্টোবর হামাস যখন ইসরাইলের ওপর আক্রমণ করে, তখন তেল আবিবের একটি কন্সট্রাকশন সাইটে কাজ করছিলেন। হামাসের ঐ হামলার পর যুদ্ধ বেধে যাওয়াতে এবং ইসরাইলের সামরিক অবরোধের কারণে তিনি তার স্ত্রী ও তিন শিশু কন্যার কাছে ফিরতে পারছিলেন না। তিনি প্রতিদিন একই সময়ে তাদের সাথে কথা বলছিলেন, যখন ফোন সংযোগের অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং 8 ডিসেম্বর সন্ধ্যায় হামলার সময় তার স্ত্রী শিরিনের সাথে ফোনে কথা বলছিলেন।

 

তবে যতদিন পর্যন্ত ফোনে পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার অনুমতি ছিলো, ততদিন পর্যন্ত তিনি তাদের সাথে নিয়মিত কথা বলতেন। গত ৪ ডিসেম্বর যখন তার বাড়িতে হামলাটি ঘটে, সেদিনও তিনি তার স্ত্রী শিরিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। “ও (শিরিন) জানতো, ও মারা যাবে,” আহমাদ বলেন। “ও আমায় বলেছিলো, আমার সাথে ও যদি কখনও খারাপ কিছু করে থাকে, তাহলে আমি যেন ওকে ক্ষমা করে দেই। আমি ওকে বলেছিলাম যে এটা বলার কোনও দরকার নেই। এটাই ছিলো আমাদের দু’জনের মাঝে শেষ কথোপকথন।”

 

সেই সন্ধ্যায় আহমাদের চাচার বাড়িতে একটি বড়সড় বোমা হামলা হয় এবং তাতে তার স্ত্রী এবং তিন কন্যা– তালা, লানা এবং নাজলা নিহত হয়। এতে আহমাদের মা, তার চার ভাই ও ভাইদের পরিবার, সেই সাথে কয়েক ডজন ফুফু, চাচা ও চাচাতো ভাই-বোনও নিহত হন। সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা শতাধিক। হামলার পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও কিছু লাশ আটকে আছে।

 

গত সপ্তাহে ছিলো তার ছোট মেয়ে নাজলা’র জন্মদিন। বেঁচে থাকলে নাজলা দুই বছরে পা রাখতো। আহমাদ এখনও এই অপূরণীয় ক্ষতিতে ধাতস্থ হতে চেষ্টা করছে। তার কন্যাদের মৃতদেহ তিনি ধরতে পারেননি। এমনকি তাড়াহুড়ো করে যখন তাদের মৃতদেহ দাফন করা হয়, তখনও তিনি সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি তার মেয়েদের বিষয়ে এখনও এমনভাবে কথা বলেন, যেন মনে হয় যে তারা বেঁচে আছে। যদিও কথা বলার সময় তার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে।

 

তিনি বলেন, “আমার মেয়েরা আমার কাছে ছোট্ট পাখি। আমার মনে হয়, আমি কোনও স্বপ্নের মাঝে আছি। আমাদের সাথে যা হয়েছে, সেটিকে আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না।” তিনি তার মোবাইল এবং ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে মেয়েদের ছবি সরিয়ে নিয়েছেন, যাতে এটা নিয়ে আবার তারা অতর্কিতে হামলা না করে। তার যে ক’জন আত্মীয় এবং প্রতিবেশী বেঁচে আছেন, তাদের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন যে হামলার দিন ঠিক কী কী হয়েছিলো। সেটা শুনে তিনি মনে মনে ঐদিনের একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছেন।

 

তারা তাকে বলেছেন যে একটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে সর্বপ্রথম আঘাত তার পারিবারিক বাড়ির প্রবেশদ্বারে। "তারা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে ঠিক পাশেই আমার চাচার বাড়িতে যায়," তিনি বলেন। "তার ঠিক পনের মিনিট পরে একটি যুদ্ধবিমান ওই বাড়িতে আঘাত হানে।"

 

গাজা শহরের জেইতুন পাড়ার সাহাবা মেডিকেল সেন্টারের কোণে অবিস্থিত ঐ চারতলা বাড়িতে এই পরিবারটিকে হত্যা করা হয়েছিলো। এই বাড়িটি এখন শুধুই কংক্রিটের একটি ঢিবিতে পরিণত হয়েছে। এই ধ্বংসস্তূপের ওপর উজ্জ্বল রঙ্গের পাথর, সবুজ প্লাটিকের কাপ এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন ধুলাময় কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

 

আহমাদের একজন আত্মীয় হামিদ আল-গুফেরি বিবিসিকে বলেন যে হামলা শুরু হওয়ার পর যারা পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো, তারা বেঁচে গেছেন। কিন্তু বাড়িতে আশ্রয় নেয়াদের সবাই নিহত হয়েছেন। “এটি ছিলো একটি ফায়ার বেল্ট (একটি স্থানে যখন অনেকগুলো ক্ষেপণাস্ত্র ফেলা হয়),” তিনি বলেন।

 

“আমাদের পাশের আরও চারটি বাড়িতে হামলা হয়েছে। প্রতি দশ মিনিটে একেকটি বাড়তে হামলা হয়।” “ঘুফেরি পরিবারের ১১০ জন সদস্য এই বাড়িগুলোয় ছিলো–এরা আমাদের সন্তান এবং স্বজন। কিন্তু গুটিকয়েক বাদে এদের সবাইকে হত্যা করা হয়,” তিনি বলেন।

 

যারা বেঁচে গিয়েছেন, তারা বলেন যে এই হামলার সবচেয়ে বয়স্ক শিলার ৯৮ বছর বয়সী একজন দাদী এবং সবচেয়ে কনিষ্ঠ ভুক্তভোগী হলো একজন শিশু; মাত্র নয়দিন আগে যার জন্ম হয়েছিলো। আহমাদের একজন চাচাতো ভাই, যার নামও আহমাদ; তিনি একটি বিমান হামলা থেকে দু’টি বড় বিস্ফোরণ হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন। “কোনও আগাম সতর্কবার্তা ছিলো না,” তিনি বলেন।

 

"কিছু মানুষ যদি আগেই এই এলাকা ছেড়ে চলে না যেত, তাহলে শত শত মানুষ মারা যেত বলে আমি মনে করি। এলাকাটি এখন একেবারেই অন্যরকম দেখাচ্ছে। এখানে একটি গাড়ি পার্ক করার জায়গা ছিলো, পানি রাখার জায়গা ছিলো এবং তিনটি বাড়ি ছিলো, বাড়িগুলোর মাঝে একটি বাড়ি বেশ বড় ছিলো। কিন্তু এই পুরো আবাসিক এলাকাটি এখন ধ্বংস হয়ে গেছে।”

 

"বিমানগুলি আকাশে ঘুরছিল এবং আমরা বাড়ি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করায় কোয়াড কপ্টারগুলি (একধরনের হেলিকপ্টার, যার চারটি টার্বাইন থাকে) আমাদের দিকে গুলি ছুঁড়ছিল," চাচাতো ভাই আহমাদ বলেছিলেন।

 

উম্ম আহমাদ আল-ঘুফেরি বিবিসিকে বলেন, "আমরা ঘরে বসে ছিলাম এবং আমরা নিজেদেরকে ধ্বংসস্তূপের নীচে আবিষ্কার করলাম। আমাকে একপাশ থেকে অন্য পাশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিলো। আমি জানি না, কিভাবে তারা আমাকে বের করে এনেছে। আমরা আমাদের চোখের সামনে মৃত্যু দেখেছি।"

 

হামলার পর আড়াই মাস হয়ে গেলেও তারা এখনও ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে থাকা কিছু লাশের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। কিছু টাকা জোগাড় করে তারা একটি ছোট খনন মেশিন ভাড়া করেছে, ধ্বংসস্তূপ সরানোর জন্য।

 

আহমাদ বিবিসিকে বলেন, "আমরা [আজ] চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছি; যার মধ্যে আমার ভাইয়ের স্ত্রী এবং আমার ভাগ্নে মোহাম্মদ ছিলো, যাদেরকে টুকরো টুকরো করে বের করা হয়েছিলো। তারা ৭৫ দিন ধরে ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিলো।"

 

কাছাকাছি একটি খালি জমিতে তাদেরকে কবর দেওয়া হয়েছে। সেগুলো লাঠি এবং প্লাস্টিকের চাদর দ্বারা চিহ্নিত। জেরিকোতে আটকে পড়া আহমাদ তাদেরকে দেখতে যাননি।

 

"আমার মা, আমার স্ত্রী, আমার সন্তান এবং আমার ভাইদের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো কী করেছি আমি?" তিনি জানতে চান। "তারা সবাই বেসামরিক ছিলো।"

 

ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে ঘুফেরি পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে জানিয়েছে বিবিসি। জবাবে সেনাবাহিনী বলেছে যে এই হামলা সম্পর্কে সচেতন ছিল না এবং ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামাসের সাথে তার যুদ্ধে 'বেসামরিক ক্ষতি কমানোর জন্য সম্ভাব্য সতর্কতা' নিয়েছে।

 

আহমাদের পরিবারের ওপর হামলার আগের ও পরের দিনগুলোতে আল-ঘুফেরি বাড়ির দক্ষিণে শেজাইয়া এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী এবং হামাসের বন্দুকধারীদের মধ্যে তীব্র লড়াই হয়েছিলো।

 

নয়ই ডিসেম্বর একটি দৈনিক আপডেটে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলে যে তারা "অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইলে (ট্যাঙ্ক-বিরোধী ক্ষেপণাস্ত্র) সজ্জিত বেশ কিছু সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করেছিলো", যারা শেজাইয়াতে সৈন্যদের দিকে আসছিলো। সেজন্যই তারা তাদের উপর একটি হেলিকপ্টার হামলার ডাক দিয়েছিলো।

 

এটি আরও বলেছে যে যেহেতু স্থল অভিযান চলমান রয়েছে, তাই যুদ্ধবিমানগুলো গাজা উপত্যকায় সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। জেইতুন এর এই এলাকা, যেখানে একসময় একটি পারিবারিক বাড়ি ছিলো, সেটি এখন আইডিএফ-এর অভিযানের নতুন কেন্দ্রবিন্দু।

 

জেরিকোতে থাকা আহমাদ এখনও মাঝে মাঝে গাজায় বেঁচে থাকা তার আত্মীয়দের কাছে ফোন করেন। কয়েক মাস ধরে প্রিয় বাড়ি ছেড়ে দূরে আটকা পড়া আহমাদ তার বাড়িতে ফিরে আসার জন্য মরীয়া আছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত নন যে তিনি আর কখনও ঐ বাড়িতে ফিরবেন কি-না।

 

"গাজায় আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে," তিনি বলেন, "আমি কার জন্য ফিরে যাবো? কে আমাকে বাবা বলে ডাকবে? কে আমায় প্রিয়তম বলে ডাকবে? আমার স্ত্রী আমায় বলতো, তার গোটা জীবন জুড়ে শুধুই আমি। এখন কে আমায় এ কথা বলবে?" সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিশ্ব সংগীত আসরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সংগীত শিল্পী সুমি

বিশ্ব সংগীত আসরে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সংগীত শিল্পী সুমি

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

চার্টার্ড বিমানে করে অবৈধ ভারতীয়দের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

লেবানন থেকে মঙ্গলবার ফিরবেন আরও ৩০ বাংলাদেশি

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

মেক্সিকোতে বাস দুর্ঘটনা, নিহত ১৯ আহত ৬

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

লুইসের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল শ্রীলঙ্কা

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সুদানে মানবিক সংকট, ক্ষুধার জ্বলায় দেশ ত্যাগ

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

সউদী আরবের কোচ হয়ে ফিরছেন রেনার্ড

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার আনুষ্ঠানিক চিঠি পাইনি: ফাহিম

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

আজ থেকে মোহাম্মদপুরে হাউজিংগুলোতে বসবে সেনা ক্যাম্প

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনায় আটক ৪৫

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

বার্নাব্যুতেই রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ধরাছোঁয়ার বাইরে বার্সালোনা

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

ভিনিসিয়ুসের হাতে উঠছে ব্যালন ডি'অর?

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

হল্যান্ডের গোলে জিতে সবার উপরে সিটি

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

বেনাপোলে গৃহবধূকে বালিশ চাপায় শ্বাসরোধ করে হত্যা, আটক -৪

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এত সংস্কারের কথা হচ্ছে, কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

সিটি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্টে দেয়া যাবে মেটলাইফের প্রিমিয়াম

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

বাজার পরিদর্শনে উপদেষ্টা আসিফ

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

সুন্দরগঞ্জে গৃহবধূর একসঙ্গে তিন ছেলের জন্ম, দর্শকের উপচে পড়া ভীর

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত

গৌরনদীতে শিক্ষকের চড়থাপ্পরে পরীক্ষাথীর্র কানের পর্দা ফেটে গুরুতর আহত