ইসরাইলে যুদ্ধবিরতি জন্য চাপ বাড়ছে

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

 

 

 

ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীরা বুধবার জেরুজালেমের দিকে লংমার্চ শুরু করেছে। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলের উৎসবের স্থান নোভায় হামাসের বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এই উৎসবের স্থানটি কিববুতজ রেইমের কাছে যেখানে শত শত ইসরাইলি নিহত হয় এবং আরও শতাধিককে গাজায় বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

 

পদযাত্রাকারীরা নিখোঁজদের ছবি বহন করছে এবং বাকি ১৩৪ জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তাদের সরকারকে আরো বেশি কিছু করার দাবি জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতির আলোচনা তাদের আশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘প্রিয়জনদের জন্য আমাদের ১৪৫ দিন ও রাতের অধীর আকুলতা,’ রনেন নেত্রা বলছিলেন উপস্থিত জনতার উদ্দেশে। রনেনের ২২ বছর বয়সী ছেলে, ওমের, গাজার কোথাও রয়েছেন। ‘আমরা তাদের শক্তি রাখতে বলবো, বলবো আর অল্প একটু অপেক্ষা করতে হবে,’ বলেন রনেন, ‘ওমের আর অল্প সময়ের অপেক্ষা। একটা চুক্তি সম্ভব।’

 

ইসরাইলের হামলার মুখে জীবন বাঁচাতে রাফাহ ছেড়ে যাওয়ার আগে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই নারী। গত সপ্তাহের শেষে প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র, মিশরীয় এবং কাতারীয় মধ্যস্থতাকারীদের বৈঠকের পর ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো যুদ্ধ বন্ধে চুক্তির বিষয়ে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ প্রস্তাবগুলোর রূপরেখার কোনো নথি জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, সোমবারের মধ্যে একটা চুক্তি হতে পারে। এরপরে জল্পনা-কল্পনা আরো বেড়ে গেছে।

 

কিন্তু কেমন হতে পারে এই চুক্তি? মনে করা হচ্ছে, ছয় সপ্তাহের একটা যুদ্ধবিরতি হতে পারে, এই সময়ের মধ্যে ৪০ ইসরাইলি জিম্মিকে ধাপে ধাপে ছেড়ে দেয়া হবে। নারী বেসামরিক এবং সৈনিকদের প্রথমে মুক্তি দেয়া হবে। বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে বন্দি চারশত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়া হবে। যাদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর সন্ত্রাসী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। ইসরাইলি সৈন্যরা গাজার সবচেয়ে জনবহুল এলাকা থেকে সরে যেতে পারে। এবং যুদ্ধের কারণে অক্টোবর থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া এক দশমিক আট মিলিয়ন ফিলিস্তিনি তাদের উত্তরাঞ্চলের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে।

 

কিন্তু এই সপ্তাহে কাতারে এখনও কথাবার্তা চলছে যেখানে মিশরীয় এবং কাতারি মধ্যস্থতাকারী এবং ইসরাইলি ও হামাসের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এখনও দেনদরবার চলছে। এতে এটা পরিষ্কার যে, বেশিরভাগ ইস্যুই এখনো ঝুলন্ত রয়েছে। প্রতিবেদনগুলিতে বলা হচ্ছে যে, প্রতি ইসরাইলি জিম্মির বিপরীতে ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তির সংখ্যা নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।

 

ইসরাইলি সৈন্যদের পুনরায় মোতায়েন বা ফিলিস্তিনিদের তাদের ঘরে ফেরার বিষয়ে এখনো চুক্তির কথা ভাবা হয়নি। কিন্তু মোসাদের সাবেক বিভাগীয় প্রধান হাইম টমার তার অতীত অভিজ্ঞতায় বলেছেন, এ বিষয়ে তিনি আশাবাদী। ‘আমি মনে করি, আমরা বেশ কাছাকাছিই আছি,’ বলেন তিনি, ‘আমি নিশ্চিতভাবে বলছি না যে আমরা জিম্মি এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেখতে পাব। তবে আমি মনে করি যে আলোচনা এগিয়ে যাচ্ছে ‘

 

তিনি হামাসের কাতারভিত্তিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। যিনি বুধবার প্রথম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, গ্রুপটি একটি চুক্তিতে তার অবস্থান নরম করতে পারে। "আমাদের আলোচনায় আমরা যে নমনীয়তা দেখাচ্ছি, তা হলো আমাদের জনগণের রক্তকে রক্ষা করা এবং নির্মম যুদ্ধে তাদের বিশাল যন্ত্রণা ও ত্যাগের অবসান ঘটানো।" একটা টেলিভিশনের ভাষণে বলেন তিনি।

 

হানিয়াহ বলেছিলেন যে প্রয়োজনে হামাস যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। তিনি মুসলিমদের পবিত্র রমজান মাসে পশ্চিম তীর এবং জেরুজালেমের ফিলিস্তিনিদের ইসরাইলি বিধিনিষেধ অমান্য করে আল-আকসা মসজিদে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান। "নমনীয়তা" শব্দটির উল্লেখ এই ইঙ্গিত দেয় যে যুদ্ধের সম্পূর্ণ অবসান এবং গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার বিষয়ে হামাস তাদের দাবিগুলি পুনর্বিবেচনা করতে পারে। যে দাবিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন "ভ্রমপূর্ণ"।

 

তবে, প্যারিসে উত্থাপিত প্রশ্নে হামাস এখনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। গাজায় হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার এই চুক্তি নিয়ে কী ভাবছেন সেটিও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। খান ইউনিস বা রাফার নিচে কোনো একটি ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গে তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিলো। তার গেরিলা বাহিনী ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে এবং ইসরাইলি সরকার তাকে বন্দি করার শপথ নিয়েছে।

 

ইসরাইলি কর্মকর্তারা বলছেন, সাড়ে পাঁচ মাসের বোমাবর্ষণ এবং তার দশ হাজার লোকের মৃত্যুতে মি. সিনওয়ারের কর্তৃত্ব দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ধরনের প্রতিবেদন যাচাই করা কঠিন। কিন্তু একটা বিষয় নিশ্চিত যে, সাতই অক্টোবরের হামলা যে ব্যক্তিটি শুরু করেছিলেন তার সাথে যোগাযোগ করা কঠিনেরও কঠিন।

 

এদিকে, বাকি জিম্মিদের পরিবার এবং বন্ধুরা রাস্তায় নেমেছে। তারা বলেছে, শনিবারের মধ্যে তারা জেরুজালেম পৌঁছাবে। তারা যখন সেখানে পৌঁছাবে আদৌ ভালো কোনো খবর কি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে? সূত্র: বিবিসি।

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন

চুয়াডাঙ্গায় মাদরাসাছাত্র হত্যা মামলায় আসামির যাবজ্জীবন

সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না

সাভারে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী কেউ ছাত্র ছিল না