ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে সশস্ত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা
১৯ মে ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মিজোরাম, মনিপুর আর নাগাল্যান্ডের বিভিন্ন এলাকায় মিয়ানমার আর ভারতের সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কেন্দ্র সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জো জনজাতির মানুষরা বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন ।
একই সঙ্গে মিয়ানমার আর ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই অন্য দেশের ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়ার যে নিয়ম ছিল, তা তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন জো জনজাতির সদস্যরা। জো-রিইউনিফিকেশান অর্গানাইজেশন বা জোরো বলছে, তাদের জনজাতির মানুষ তো ভারত-মিয়ানমার আর বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেনই, পরিবারের নানা সদস্যও একেক দেশে থাকেন। জোরো দাবি করে থাকে যে কুকি-চিন-মিজো এবং জোমি জনজাতির মানুষদের একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসতে হবে।
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দিলে অথবা পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া অন্য দেশে যাওয়ার জন্য যে ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’ বা এফএমআর ছিল, তা তুলে দেওয়া হলে পরিবার থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন তারা, এমনটাই বলছেন জোরো নেতারা। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মিজোরামের অনেক এলাকায়, মনিপুরের তেঙ্গনৌপাল জেলায় আর নাগাল্যান্ডের জনজাতি গোষ্ঠীগুলি পরপর বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। জমায়েত হয়েছে মিজোরাম আর মিয়ানমারের সীমান্ত দ্বারেও। সেখানে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে বহু জো জনজাতির মানুষ জড়ো হয়েছিলেন সভার বক্তব্য শুনতে। সভার শেষে দুই দেশের জো জনজাতির মানুষদের হাত মেলাতেও দেখা যায় বন্ধ সীমান্ত-দ্বারের ভেতর থেকেই।
অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়া হতে পারে?
জোরো আয়োজিত এরকমই একটা সভায় সংগঠনের মহাসচিব এল রামদিনলিয়ানা রেন্থলেই ঘোষণা করেন যে কেন্দ্রীয় সরকার যদি মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার আর এফএমআর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে এমন পরিস্থিতি আসতেই পারে যখন মিজোরামের যুবকরা গোপন ডেরায় চলে গিয়ে অস্ত্র তুলে নিতে পারে।
তবে জোরো সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট আর সাঙ্গকাওয়াইয়া বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “কেউ সশস্ত্র পথে যাওয়ার কথা বলে থাকতেই পারেন, তবে আমরা প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই অহিংসার পথে থাকব এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনও কারণ নেই।
“মিয়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ, কিছু আবার ত্রিপুরায় যেখানে যত জো জনজাতির মানুষ আছেন, তাদের এক করার কথা বলি। এর মধ্যে হিংসার কোনও জায়গা নেই,” মন্তব্য জোরো-র প্রেসিডেন্ট আর সাঙ্গকাওয়াইয়া।
জোরো আরও বলছে যে তাদের আন্দোলনের একটা ভিত্তি হল ভারতের সংবিধানের ৩৬(১) ধারা। ওই ধারা অনুযায়ী জনজাতির মানুষদের অধিকার আছে সীমান্তের বাইরেও ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য পালন করার। রাজ্যগুলিকেই এই অধিকার সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব দিয়েছে সংবিধান।
ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেওয়ার পরিকল্পনার কথা এ বছরের জানুয়ারি মাসে ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তবে মনিপুর আর মিয়ানমার সীমান্তে তার আগে থেকেই বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে মনিপুরের ১০ কিলোমিটার সীমান্তে, পরে আরও ৭০ কিলোমিটার সীমান্তে বেড়া দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে মনিপুরের সরকারি সূত্রগুলি।
মনিপুরের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৩৯৮ কিলোমিটার, অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে ৫২০ কিলোমিটার, নাগাল্যান্ডে-মিয়ানমার সীমান্ত ২১৫ কিলোমিটার আর মিজোরামের সঙ্গে ৫১০ কিলোমিটার। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার পরে কুকি-চিন-মিজো-জো জনজাতি যেমন ক্ষোভ জানাচ্ছে, তেমনই মিজোরামের প্রবল প্রভাবশালী ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশনও ওই সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ।
সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট লালমাছুয়ানা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “আমাদের আত্মীয় স্বজনরা তো ভারত, মিয়ানমার আর বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তিনটি দেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন তো আমাদের মতামত নেওয়া হয় নি। তাই পরিবারের যে যেখানে ছিলেন সেখানেই থেকে গেছেন।
“কিন্তু আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে বাধা দেওয়া হয়, সেটা কীভাবে মানা যাবে?প্রশ্ন মি. লালমাছুয়ানার।
জোরো-র প্রেসিডেন্ট আর সাঙ্গকাওয়াইয়া বলছিলেন মিজোরামের বিক্ষোভগুলো সরাসরি তারাই সংগঠিত করছেন, আর মনিপুর এবং নাগাল্যান্ডের বিক্ষোভ সমাবেশগুলো করছেন সেখানকার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। সম্মিলিত ভাবে একটা বড় সমাবেশ করার ব্যাপারে ঐকমত্যও হয়েছে।
মনিপুরে সহিংসতার পরেই কাঁটাতারের সিদ্ধান্ত
মনিপুরে গত বছর থেকে সহিংসতা শুরু হওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার উভয়ই বারবার ইঙ্গিত দিয়েছে যে মিয়ানমার থেকে দুষ্কৃতিরা এসে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে জনজাতি গোষ্ঠীগুলির হাতে। অন্যদিকে মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গেরিলাদের সশস্ত্র অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে মিজোরামে চলে এসেছেন।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩৪,১৪১ জন মিয়ানমারের বাসিন্দা এখন মিজোরামে আশ্রয় নিয়েছেন। সীমান্ত থেকে অনুপ্রবেশ আটকাতেই কাঁটাতারের বেড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে সরকার। আবার মিয়ানমার আর ভারতের মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের বিনাবাধায় চলাচলের যে নিয়ম ছিল, তাও স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।
ফলে অনেকের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, মনিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেয়া নানা পদক্ষেপে উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জো জনজাতির মানুষদের বিক্ষোভ হয়তো তারই ইঙ্গিত। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন