এবার ভারতে বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে অয্যোধ্যার হিন্দুরা
১২ জুন ২০২৪, ০৯:৩০ এএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ০৯:৩০ এএম
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশের অয্যোধ্যার হিন্দুদের নিয়ে অশ্লীল মন্তব্যের ঢেউ দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। অশ্রাব্য গালাগালি তো দেওয়া হচ্ছেই, যার মধ্যে সবচেয়ে ‘ভদ্র’ শব্দটি সম্ভবত ‘গাদ্দার’ বা বিশ্বাসঘাতক।
অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত, সেই ফৈজাবাদে বিজেপির প্রার্থী, যিনি আবার আগের বার সংসদ সদস্যও ছিলেন, সেই লাল্লু সিং সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী ও দলিত সমাজের প্রতিনিধি অওধেশ প্রসাদের কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই সেখানকার বাসিন্দা হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর পোস্ট, ভিডিও দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। এদের বক্তব্য, যে নতুন রামমন্দির সেখানে বানানো হয়েছে, হিন্দু সমাজের অতি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে, সেখানকার হিন্দু ভোটাররা কেন বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জেতাতে ব্যর্থ হলেন! যারা ওইসব পোস্ট বা ভিডিও বা পোস্টার বানাচ্ছেন, সামাজিক মাধ্যমে তাদের অন্যান্য মন্তব্য বা পোস্ট দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে তারা কট্টর হিন্দুত্ববাদী চিন্তাভাবনায় বিশ্বাস করেন।
ভোটের ফল ঘোষণার পরে অয্যোধ্যার হিন্দুদের গালাগালি দেওয়া একটি ভিডিও বানিয়ে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ ইতোমধ্যেই দুজনকে গ্রেফতার করেছে। অয্যোধ্যার স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ৪ জুন ভোট গণনার পর থেকে অযোধ্যা পুলিশের সাইবার শাখায় বহু অভিযোগ জমা পড়ছে সেই সব কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে, যারা সেখানকার ভোটারদের গালাগালি করছেন, অর্থনৈতিকভাবে বয়কট করার কথা বলছেন। ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রাম– এই তিনটি জনপ্রিয় সামাজিক প্ল্যাটফর্মেই চোখে পড়ছে অযোধ্যা হ্যাশট্যাগ দিয়ে সেখানকার ভোটারদের গালাগালি করা হচ্ছে, বিজেপি প্রার্থীর পরাজয়ের জন্য তাদের দায়ী করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের সম্বন্ধে, সেটা হলো ‘গাদ্দার’ বা বিশ্বাসঘাতক। ‘ইন্ডিয়া২০৪৭’ নাম ধারী একটি এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়েছে, ‘ভগবান রাম যে রাবণের লঙ্কায় ভাল্লুক আর বাঁদরদের সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। অয্যোধ্যার হিন্দুদের যদি সঙ্গে নিয়ে যেতেন, তাহলে এই ***রা সোনার লোভে রাবণের হয়ে লড়াই করত।’ এই পোস্টের সঙ্গে ‘উত্তরপ্রদেশের গাদ্দার’ হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়েছে।
এই ‘এক্স’ হ্যান্ডেল থেকে এরকমই বক্তব্য দেয়া অন্য অনেকের পোস্ট শেয়ারও করা হয়েছে। কপিল পণ্ডিত নামের আরেক ‘এক্স’ ব্যবহারকারী অযোধ্যাবাসীদের প্রতি তার বিষোদ্গার প্রকাশ করে ফেলেছিলেন ভোট গণনা চলাকালীনই। তিনি লিখেছিলেন, ‘যে সরকার অযোধ্যাকে ঝকঝকে করে তুলল, নতুন বিমানবন্দর দিলো, রেল স্টেশন দিলো, ৫০০ বছর পরে রামমন্দির বানিয়ে দিলো, একটা পুরো মন্দির অর্থনীতি গড়ে দিলো, সেই দলকেই অয্যোধ্যার আসনে লড়াই করতে হচ্ছে! অযোধ্যাবাসী, লজ্জাজনক!’
ওই একই ব্যক্তি ভোটের ফল বেরনোর পরের দিন একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন, যেখানে অয্যোধ্যার হিন্দুদের অশ্রাব্য গালাগালি করা হয়েছে। আর সেই ভিডিওর ওপরে লেখা হয়েছে, ‘লজ্জাও করে না অয্যোধ্যার হিন্দু তোমরা তো দেখা যাচ্ছে দেশের সবথেকে বড় ******! দুর্ভাগ্য একেই বলে অয্যোধ্যায় রামকে যারা নিয়ে এল, তারা হেরে গেল আর রামভক্তদের ওপরে গুলি চালিয়েছিল যারা তারা জিতল।’
আবার ‘র্যান্ডমসেনা’ নামের আরেকটি এক্স হ্যান্ডেলে পাশাপাশি দুটি ছবি দেয়া হয়েছে - একটি যে অস্থায়ী তাঁবুতে ১৯৯২ সাল থেকে রামের পুজো হয়- সেটির, আরেকটি নতুন রামমন্দিরের। ছবি দুটির ওপরে লেখা হয়েছে, ‘অয্যোধ্যার হিন্দুরা তো সত্যিই ***।’ ফেসবুকেও এ ধরনের বহু পোস্ট দেখা যাচ্ছে। যেমন প্রমোদ কুমার পণ্ডিত নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলছেন, ‘এই যে হিন্দু ভাইয়েরা, আজ বুঝতে পারছেন তো যে কেন ৫০০ বছর ধরে অয্যোধ্যায় রামমন্দির তৈরি করা যাচ্ছিল না? এর জন্য দায়ী অন্য কেউ নয়– একমাত্র অয্যোধ্যার হিন্দুরাই দায়ী– শুধুমাত্র অয্যোধ্যার হিন্দুরা।’
অর্থনৈতিক বয়কটের ডাক
‘এক্স’ এবং ইনস্টাগ্রামের একাধিক পোস্টে দেখা যাচ্ছে যে অয্যোধ্যার রামমন্দির ঘিরে যে ‘মন্দির অর্থনীতি’ রয়েছে, তা বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়েছে। এক নারীর ভিডিও বক্তব্য রিপোস্ট করেছেন ধর্মেশ নামের এক এক্স ব্যবহারকারী। এখানে বলে দেয়া দরকার ‘ধর্মেশ’ নামে ওই এক্স হ্যান্ডেলটি এ ধরনের বেশ কিছু রি-পোস্ট করেছেন যেখানে অয্যোধ্যার ভোটারদের বিষোদগার করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ওইসব মন্তব্যের বিরোধিতা করার জন্যই সেগুলি রিপোস্ট করেছেন, তা স্পষ্টতই দেখা গেছে।
ধর্মেশ হ্যান্ডেলে যে নারীর ভিডিও রিপোস্ট করা হয়েছে, সেখানে তিনি বলছেন যে এরপরে কেউ যদি অয্যোধ্যার মন্দির দর্শন করতে যান, তাহলে বাড়ি থেকে প্রসাদ নিয়ে যাবেন। অয্যোধ্যার বাসিন্দাদের বানানো প্রসাদ দেয়ার দরকার নেই। আর রাতে সেখানে থাকবেনও না। কারণ রাতে থাকার অর্থ সেখানকার মানুষদের অর্থনৈতিক লাভ হবে।
অয্যোধ্যায় নতুন মন্দির তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই রামচন্দ্রের ছবি, তার পুজোর জন্য ফুল-মালা, মিষ্টি ইত্যাদিকে ঘিরে বড়সড় ‘মন্দির অর্থনীতি’ চলে আসছে। সেখানে আবার একটা বড় অংশীদার অয্যোধ্যার মুসলমানরাও। তাদের তৈরি প্রসাদ, মিষ্টি, ফুল ইত্যাদি নিয়েই বছরের পর বছর পুজো দিয়ে আসছেন হিন্দু ভক্তরা। এখন মন্দির অর্থনীতির ওপরে নির্ভরশীল হিন্দু-মুসলমান সবাইকেই টার্গেট করছেন বাইরে থেকে সেখানে মন্দির দর্শন আর পুজো দিতে যাওয়া কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
হিরের গুঁড়ো দিয়ে পৃথিবীকে ঠান্ডা করার অদ্ভুত পরিকল্পনা !
যশোরে এক গৃহবধূকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
যৌনপল্লীতে ফারুক হত্যার মূল আসামীসহ দুজন গ্রেফতার
কালিয়াকৈরে পুকুরথেকেঅজ্ঞাতনারীসহশিশুর লাশ উদ্ধার
কসবায় পৌণে দুই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ি উদ্ধার
প্রজননকৃত ডিম থেকে ইলিশ উৎপাদন নির্বিঘœ করতে আজ মধ্যরাত থেকে জাটকা আহরনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা
দিন পার করতে পারবে তো বাংলাদেশ
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এক হাজার লেখক ইসরাইলের সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলোকে বয়কটের আহ্বান
অভিযোগ,অনুরাগ, ভালোবাসা অকস্মাৎ কেমন ছিল সেইসব দিন, প্লিজ প্রাক্তনের খবর নিন:
শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সহ- সভাপতি সাংবাদিক শিশিরকে প্রাননাশের হুমকি : থানায় জিডি।
নিমিষেই দূর হবে তেল চিটচিটে রান্না ঘর
দীপাবলি উপলক্ষে বেনাপোল দিয়ে দু-দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ
দ্বিতীয় ইনিংসেও বাংলাদেশের ব্যাটারদের আসা-যাওয়া শুরু
হিব্রু ভাষায় আয়াতুল্লাহ খামেনির এক্স একাউন্ট আবার সচল
টানা ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
আবারও শুরুতেই ফিরলেন সাদমান
তাইওয়ানে আছড়ে পড়েছে সুপার টাইফুন কং-রে
সিভাসুকে নিয়ে সাম্প্রদায়িক ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী
১৫৯ রানে গুটিয়ে ফলো-অনে বাংলাদেশ
ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা