জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উদ্ভিদের ‘দক্ষতা’ বাড়ানোর চেষ্টা
০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:২৯ এএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১০:২৯ এএম
বিজ্ঞানীরা এবার উদ্ভিদের সহজাত ক্ষমতার উন্নতির মাধ্যমে কার্বন-ডাই অক্সাইড ধারণ ও অক্সিজেন সৃষ্টির কাজ আরো দ্রুত ও কার্যকর করতে চাইছেন। এমনকি রাসায়নিক শিল্পের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আনতে পারে সেই প্রযুক্তি।
প্রফেসর টোবিয়াস অ্যার্বের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য রয়েছে। তিনি প্রকৃতির উন্নতি করতে চান। আসলে তিনি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া হিসেবে সালোকসংশ্লেষণের দিকে নজর দিচ্ছেন। পৃথিবীর জীবজগত এই প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে রয়েছে। প্রো. অ্যার্ব বলেন, ‘সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া বিশেষ ভালোভাবে চলে না, মানুষ হিসেবে এমনটা দাবি করা যেতেই পারে। গাছপালা কিন্তু সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্তুষ্ট। কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের চাহিদা একটু বেশি। আমরা আসলে কম উদ্যোগে বেশি কিছু হাসিল করে দক্ষতা বাড়াতে চাই। একদিকে সেই প্রণালী থেকে আরো কিছু বার করার প্রণোদনা রয়েছে। যদিও ৩০০ কোটি বছর ধরে সেটি বিকাশের সময় পেয়েছে। কিন্তু কেন এর উন্নতি হয় নি? এই প্রশ্ন অত্যন্ত মৌলিক। আমি কি একেবারে ভিন্নভাবে ভাবতে পারি?’
সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে আলো, পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে সহজ এক কার্বন যৌগ, গ্লুকোজ ও অক্সিজেন সৃষ্টি হয়। গ্লুকোজ উদ্ভিদের মধ্যেই থেকে যায়, সেটির বৃদ্ধির কাজে সাহায্য করে। অক্সিজেন পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয়।
টোবিয়াস সেই সার্কুলেশন বা চক্র, বিশেষ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ফিক্সেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আগ্রহী। তাঁর মতে, ‘সিওটু কীভাবে ধরে নিয়ে উপকারী যৌগে রূপান্তরিত করা যায়, সেটাই মৌলিক প্রশ্ন। আমি কীভাবে জড় কার্বন কোনো জৈব পদার্থে রূপান্তরিত করতে পারি? সেই মৌলিক প্রক্রিয়া নকল করা, নতুন করে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা বিশাল এই প্রশ্নের দার্শনিক মাত্রার মধ্যে পড়ে।’
এমন কোনো সমাধান-সূত্র পাওয়া গেলে কেমন হয়, যা প্রকৃতি কখনো পরখ করে দেখেনি? মানুষের হাতে আরো উন্নত সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া যদি আরো অক্সিজেন ও আরো কার্বন যৌগ সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে কেমন হয়?
উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে কাজ করে, টোবিয়াসকে সে দিকে আরো ভালোভাবে নজর দিতে হয়েছে। উদ্ভিদের মধ্যে রোবিস্কো নামের একটি এনজাইম কার্বন-ডাই-অক্সাইডের রূপান্তরের জন্য দায়ী। প্রো.অ্যার্ব বলেন, ‘‘সেই এনজাইম সেকেন্ডে প্রায় পাঁটটি সিওটু অণু নিয়ে কাজ করে। সেই গতি কিন্তু যথেষ্ট নয়। উদ্ভিদের ক্ষমতা সত্যি সীমাবদ্ধ থাকে। উদ্ভিদ সেকেন্ডে ১০০ সিওটু অণু গ্রহণ করতে পারলে কেমন হতো?''
ফলে এমন এনজাইমের সন্ধান করা হলো, যা আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে। তথ্যভাণ্ডার ঘেঁটে এমন এনজাইম শনাক্ত করার প্রক্রিয়া চলতে লাগলো। তারপর এক ব্যাকটিরিয়ার মধ্যে উপযুক্ত এনজাইম পাওয়া গেল। সেটি আসলে অ্যাসিটিক অ্যাসিডের চক্রের মধ্যে কাজ করে।
পরীক্ষায় দেখা গেল, ইসিআর নামের সেই এনজাইম রুবিস্কোর তুলনায় অনেক ভালো কাজ করে। সিওটু কমানো এবং কার্বন যৌগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সেটি অনেক বেশি কার্যকর। প্রো. টোবিয়াস অ্যার্ব-এর মতে, ‘‘ফলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যায়। একদিকে আমরা সিওটু কমাচ্ছি। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় এক পণ্য সৃষ্টি করতে পারছি, যা প্রকৃতির হস্তক্ষেপের তুলনায় অনেক জটিল।''
প্রোটোটাইপ সৃষ্টি হয়ে গেছে। সেই সব এনজাইম যেন স্যুপের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। এবার সেই অপারেটিং সিস্টেম জীবন্ত উদ্ভিদের মধ্যে ঢোকানোর পালা। অ্যালজি বা সামুদ্রিক উদ্ভিদকে যদি সিওটু ধারণ করার এই উন্নত ক্ষমতা দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে অ্যালজির কারখানা বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে বড় আকারে অক্সিজেন ও মূল্যবান কার্বন যৌগ সৃষ্টি করতে পারবে। প্রো. টোবিয়াস অ্যার্ব বলেন, ‘এভাবে এমনকি রাসায়নিক শিল্পেও বিপ্লব আনা যাবে, কারণ সে ক্ষেত্রে রাসায়নিক সংশ্লেষণের জন্য আর খনিজ তেলের প্রয়োজন হবে না। আলোর মাধ্যমে ইচ্ছামতো সব পণ্যই সিওটু থেকে সৃষ্টি করা যাবে। সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই আমরা চলেছি।’ ল্যাবের প্রাথমিক ফলাফল অনেক আশার আলো দেখাচ্ছে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নিষিদ্ধ পল্লীতে কেমন অভিজ্ঞতা ছিল অভিনেত্রী রুনা খানের
ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারকে গতিশীল করতে হবে- উপদেষ্টা শারমীন
এইচএমপিভি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৭ নির্দেশনা
পাংশায় মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে
শফিক রেহমান-রহমান মুরুব্বী এক্সপোজড
রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া রুটে বাস চলাচল বন্ধ, চরম ভোগান্তিতে যাত্রীরা
মেহেরপুর জেলা বিএনপির নেতাদের বাগোয়ান বাসীর সংবর্ধনা
জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন
কৃষির সাথে যেমন কৃষকের সম্পর্ক তেমনি দেশের জনগনের সাথে বিএনপির সম্পর্ক : শামীম তালুকদার
৪২ চার ও ১৬ ছক্কায় অপরাজিত ৩৪৬!
কুমারখালীতে টিসিবির পণ্য বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ
দেশের ৬০ ভাগ মানুষ কৃষির সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও কৃষকের স্বার্থে কোনো সংগঠন গড়ে ওঠেনি'
নিজের বিয়ে নিয়ে কি বললেন পড়শী
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সীমান্ত হত্যায় ব্যবহৃত চাকুসহ আরো এক আসামী গ্রেফতার
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়লো
৪২ মিনিটেই নেইমারের আয় ১০১ মিলিয়ন ইউরো
ফেব্রুয়ারিতে পার্স-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে ইরান
মাগুরায় পিলখানা হত্যাকান্ডে হত্যাকারী ও পরকল্পনাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
কসাই থেকে নদীখেকো জাফর
পাঁচ দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঁচ কর্মকর্তা প্রত্যাহার