চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিয়ে যেসব নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ পিএম

 

 

 

ভারতের সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিলো সিবিআই। রিপোর্ট পড়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, তিনি বিচলিত।

 

সিবিআইয়ের রিপোর্টে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য আছে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রিপোর্টে কী আছে তা তিনি বলবেন না, তাতে তদন্তের গতি ব্যাহত হতে পারে। তবে তারা আগে যে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেই সব বিষয় রিপোর্টে আছে।

 

বিচারপতিরা আগে প্রশ্ন করেছিলেন, কারা এই ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত, আরজি করে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে কিনা, আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে খুনের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, প্রমাণলোপের চেষ্টা হয়েছিল কিনা? কেন তড়াঘড়ি করে দেহ সৎকারের জন্য চাপ দিলো পুলিশ?

 

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, নিহত চিকিৎসকের বাবা সিবিআইয়ের কাছে চিঠি লিখে কিছু বিষয় তুলে ধরেছিলেন। সিবিআই সেই বিষয়টিগুলিও দেখছে। তিনি নির্দেশ দেন, সিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তারা যেন নিহত চিকিৎসকের বাবার কথাকে গুরুত্ব দেয়, তা তদন্ত করে দেখে এবং প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে।

 

তিনি জানান, তদন্তে যে সূত্র পাওয়া গেছে তাতে মনে হচ্ছে, চিকিৎসকের বাবার উদ্বেগ সত্যি।

 

জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয় সিং এদিন আদালত ও সিবিআইয়ের কাছে একটি বন্ধ করা খামে কিছু নাম ও তথ্যপ্রমাণ তুলে দেন। তিনি বলেন, কয়েকজনকে খুনের জায়গায় দেখা গিয়েছিল, তাদের নাম ও তথ্যপ্রমাণ খামে আছে। গোপনীয় বলে সেই সব নাম তিনি প্রকাশ করছেন না।

 

প্রধান বিচারপতি বলেন, ''সিবিআইয়ের সত্য অনুসন্ধানে আরো কিছুটা সময় লাগবে।''

 

'রাত্রি সাথী' নিয়ে আপত্তি

 

জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, রাজ্য সরকার 'রাত্রি সাথী' নামে একটা কর্মসূচি নিয়েছে। সেখানে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করার কথা। তাদের সাতদিন পুলিশ ট্রেনিং দেবে। তারপর দেড় হাজারেরও বেশি কর্মীকে রাতে নারী কর্মীদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হবে।

 

ইন্দিরা জয়সিং জানতে চান, ''কেন পুলিশ মোতায়েন করা হবে না? ভুলে যাবেন না, আরজি করে মূল অভিযুক্ত একজন সিভিক ভলান্টিয়ার, একজন ঠিকাকর্মী। এদের হাতে কী করে রাতে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে?''

 

জবাবে কপিল সিবাল বলেন, ''এটা সাময়িক ব্যবস্থা। এক বছরের জন্য নিয়োগ করা হবে।''

 

কিন্তু প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ''সিভিক ভলান্টিয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তো? নিরাপত্তার অভাবের জন্যই তো ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সারা হাসপাতাল ঘুরেছেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন? ডাক্তাররা যেখানে ৩৬ ঘণ্টা কাজ করছেন, সেখানে এইভাবে কেন নিরাপত্তা দেয়া হবে?''

 

তিনি বলেন, ''চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দিয়ে নিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি রাজ্য সরকার ভেবে দেখুক। পশ্চিমবঙ্গের সব সরকারি কলেজ ও হাসপাতালে এবং কলকাতায় সরকারি হাসপাতালে পুলিশ দিয়ে নিরাপত্তা দেয়া উচিত। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কম বয়সি নারীরা কাজ করেন। ফলে সেখানে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নয়, পুলিশ রাখা উচিত।''

 

বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা

 

রাজ্য সরকারের আইনজীবী কপিল সিবাল দাবি করেন, ''রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলিতে বাড়তি সিসিটিভি, নারী চিকিৎসকদের জন্য আলাদা রেস্ট রুম ও টয়লেটের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।''

 

তিনি আরো বলেন, ''আরজি করে আরো ৪১৫টি ক্যামেরা লাগানো হবে।''

 

প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, ‘‘প্রতিটি হাসপাতালে চিকিৎসকরা যেখানে থাকবেন, সেখানে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করুন। স্বাস্থ্যসচিবকে বলুন।'' কপিল সিবাল বলেন, তারা এই ব্যবস্থা চালু করবেন।

 

'বিজ্ঞপ্তি মোছার নির্দেশ'

 

রাজ্য সরকারের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, মেয়েদের নাইট ডিউটি দেয়ার কাজ যতটা সম্ভব কম করতে হবে।

 

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ''কী করে রাজ্য সরকার এরকম বিজ্ঞপ্তি জারি করলো? সবার নিরাপত্তার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তারা কী করে এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে? নারীরা তো এই ধরনের কোনো ছাড় চান না। তারা সমান সুযোগ চান। নারী ডাক্তারদের সবধরনের পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়। রাজ্যকে নিরাপত্তা দিতেই হবে।''

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত
ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০
যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক
আরও

আরও পড়ুন

রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত

রূপগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক নিহত

চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা : সেই ইরফান গ্রেপ্তার

চাঁদপুরে জাহাজে সাতজনকে হত্যা : সেই ইরফান গ্রেপ্তার

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় মোজাম্বিকে নিহত ১০৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের দেশের গর্ব : সেনাপ্রধান

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

ব্যারিস্টার ফুয়াদের ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া প্রতিবেদন প্রচার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

সৈয়দপুরে তালাবন্ধ ঘর থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

পাকিস্তান থেকে সরাসরি আসছে জাহাজ, আমদানি বেড়েছে ২১ শতাংশ

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের ও নিজের সর্বনাশ করেছে, বাপকে ডুবিয়েছে, দেশকে ডুবিয়েছে: ফজলুর রহমান

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

স্বৈরশাসক হটানোর পর গণতন্ত্র পুনঃনির্মাণে শিক্ষার্থীরা

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

সার্চ কমিটি করে গ্রহণযোগ্যদের স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ভারতে ১৬ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তথ্য জাতিসংঘকে দিতে নাগরিক কমিটির দাবি

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় অন্তত ৮ ফিলিস্তিনি নিহত, পশ্চিম তীরে সংঘর্ষ অব্যাহত

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

বড়দিনে ভারতকে ‘দুঃসংবাদ’ শোনালো অস্ট্রেলিয়া

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রাণ দিলেন প্রেমিকা

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

ব্রাজিলে সেতু ধস: নিহত ৪, নিখোঁজ ১০

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক

যুদ্ধকালীন ইউক্রেনের ডাকটিকিট, সাহসিকতার ভাষায় দেশপ্রেম ও প্রতিবাদের প্রতীক