ঢাকা   শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ: এক বিধবার কষ্টের গল্প

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ এএম | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৮ এএম

২০২১ সালে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।এর মধ্যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে,সামরিক জান্তা বাধ্যতামূলকভাবে সেনা নিয়োগের ঘোষণা দেয়,যার ফলে সারা দেশ থেকে লাখ লাখ পুরুষ ও নারীকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।এর মধ্যে চাও সু নামে এক বিধবা তাঁর স্বামীকে হারিয়েছেন।তার স্বামী সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর সম্মুখযুদ্ধে নিহত হন। তাঁর হৃদয়বিদারক গল্পটি মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে।

 

চাও সু, ২৫ বছর বয়সী এক বিধবা,মার্চ মাসে তাঁর স্বামীকে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার পর শেষবারের মতো তাদের দেখা হয়েছিল।তিনি জানান তার স্বামীকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল, এবং পরে তিনি কেরেন রাজ্যে যুদ্ধের সম্মুখভাগে গিয়ে নিহত হন।চাও সু আরও বলেন, "আমরা সবসময় দরিদ্র ছিলাম এবং সংগ্রাম করতাম, কিন্তু তিনি ছিলেন আমার জীবনের শক্তি,।” তাঁর স্বামীকে হারানোর পর,এখন তিনটি ছোট শিশুকে নিয়ে একা অসহায় অবস্থান দিন যাপন করছেন। তাঁর স্বামীর যুদ্ধে নিহত হওয়ার খবর পাওয়ার পর তাঁর জীবন পুরোপুরি বদলে যায়।

 

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগ শুরু করে,যেখানে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী নারীদের দুই বছর পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে বলা হয়।সামরিক জান্তা ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং দেশজুড়ে প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে একদিকে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে এবং অন্যদিকে সেনা নিয়োগ প্রক্রিয়া জোরদার করেছে।এপ্রিল মাসে প্রথম প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়, এবং এরপর থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করা নাগরিকদের যুদ্ধের অগ্রভাগে পাঠানো হয়।

 

চাও সু জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী যখন সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান,তখন তাঁরা প্রথমে কিছু টাকা পান,তবে পরে কোনো সাহায্য কিংবা বেতন আর পাননি।জান্তা কর্তৃপক্ষ দাবি করে যে, নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাদের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও,বাস্তবে প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে আছেন আরো অনেক পরিবার,যারা তাদের প্রিয়জনদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পান না।সোসো আয়ে নামক এক বিধবা বলেন,তিনি তাঁর ছেলে সম্পর্কে ৬ মাস ধরে কোনো খবর পাননি,যে কিনা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছিল।

 

এদিকে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পাওয়ার পর যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই সেনাবাহিনীর প্রতি ঘৃণা বেড়ে গেছে।ক্যান হতো লুইন নামে এক তরুণ সেনা বাহিনীতে যোগ দিয়ে পরে পালিয়ে যান।তিনি বলেন, "প্রশিক্ষণ ছিল অত্যন্ত কঠিন, এবং আমাদের বলা হয়েছিল যে, কেউ যদি পালিয়ে যায়, তাদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।" কিন্তু তিনি সুযোগ পেলেই পালিয়ে যান এবং পরে প্রতিবিপ্লবী গ্রুপে যোগ দেন। তার মতে,অনেক তরুণ বিক্ষোভের অংশ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন,কারণ তারা জান্তা শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

 

মিয়ানমারের মহিলারাও এই পরিস্থিতিতে প্রভাবিত হচ্ছেন। যুউযুউ নামক এক তরুণী, যিনি চীনা ভাষায় অনুবাদক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন,সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন।তিনি বলেন, "আমার লক্ষ্য এখন একটাই, সামরিক শাসনের অবসান ঘটানো,।”

 

একদিকে মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডে পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমারের নাগরিকরা সেখানে অল্প মজুরিতে শ্রমের কাজ করছেন।মিন মিন নামক এক প্রকৌশলী, যিনি থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন,তিনি জানান, "আমার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমি অবৈধভাবে থাকতে হবে,আর তখন আমি কোথাও কাজ পাবো কিনা জানি না।"

 

চাও সু বর্তমানে গ্রামে নানা কাজ করে কোনোরকমে তিনটি শিশুকে লালন-পালন করছেন,তবে তাঁর আয় তা-ও পর্যাপ্ত নয়।তিনি বলেন,"যতটা কষ্ট আমি অনুভব করছি, সেটা অন্যদের বোঝানো কঠিন,।”

 

মিয়ানমারের এই দুঃখজনক পরিস্থিতি শুধুমাত্র একটি পরিবারের কষ্ট নয়, এটি মিয়ানমারের পুরো দেশের পরিস্থিতি এবং সাধারণ মানুষের সংগ্রামের স্পষ্ট প্রতিফলন। তথ্যসূত্র : বিবিসি

 

 

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
আরও

আরও পড়ুন

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ

১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ