দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভিশংসন, সংকটের গভীরে দেশ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০ এএম

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইয়োলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত সপ্তাহে তাঁর সামরিক আইন( মার্শাল ল’) জারির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর থেকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।ইমপিচমেন্টের মুখোমুখি ইউন এখন দেশ ও তার দলের জন্য এক বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

 

মঙ্গলবার(০৩ডিসেম্বর) রাতে প্রেসিডেন্ট ইউন আকস্মিকভাবে সামরিক (মার্শাল ল’) ঘোষণা করেন, যা তৎক্ষণাৎ ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সংসদ এবং সামরিক বাহিনী উভয়ই তাঁর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে। ইউন দাবি করেন, তিনি দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে সমালোচকরা বলছেন, তাঁর এই পদক্ষেপ ছিল ক্ষমতায় টিকে থাকার একটি চেষ্টা। তাঁর দল পিপল পাওয়ার পার্টি (PPP)-এর মধ্যেই বিভাজন দেখা দিয়েছে।

 

ইউন সুক-ইওলের মার্শাল ল’ জারির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি এক সপ্তাহ আত্মগোপনে ছিলেন। এর মধ্যেই পুলিশ তাঁর অফিসে তল্লাশি চালায়। এ সময় তিনি বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উত্থাপন করে দাবি করেন যে উত্তর কোরিয়া আগের নির্বাচন প্রভাবিত করেছিল এবং সংসদ একটি "দানব"। তিনি নিজেকে দেশের রক্ষক হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন।

 

এই পরিস্থিতিতে তাঁর দল PPP-র নেতারা প্রথমে তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করলেও পরে দলীয় নেতা হান ডং-হুন সংসদ সদস্যদের ইমপিচমেন্টে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান।সংসদে ইমপিচমেন্ট পাস করতে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন, যার মধ্যে শাসক দলের আটজন সদস্যের সমর্থন বাধ্যতামূলক। ইতোমধ্যে কয়েকজন সংসদ সদস্য ইউনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

 

তবে এই সময় শাসক দলের সদস্যদের অনেকেই সাধারণ মানুষের রোষানলে পড়ছেন। এক সংসদ সদস্য কিম সাং-উক জানান, ইউনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তাঁকে মৃত্যুর হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর সমর্থকরা তাঁকে "বিশ্বাসঘাতক" বলছেন।

 

ইউনের কর্মকাণ্ড দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। তবে জনগণ প্রতিদিন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে এবং গণতন্ত্রকে তাদের অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে লড়াই করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংকট দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি বিচ্যুতি, কিন্তু গণতন্ত্রের ব্যর্থতা নয়।

 

ইউন সুক-ইয়োলের অভিশংসন(ইমপিচমেন্ট) নিয়ে জটিলতা এখন দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের জন্য একটি বড় পরীক্ষা। আগামী শনিবার সংসদে অভিশংসন(ইমপিচমেন্ট) ভোটে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা দেশের ভবিষ্যৎ স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউন অভিশংসনের পরও আইনি চ্যালেঞ্জের হুমকি দিয়েছেন, যা সংকটকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে।তথ্যসূত্র : বিবিসি


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস

উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস