পাকিস্তানের মাদ্রাসা নিবন্ধন আইনে দ্বন্দ্ব, সরকারের নতুন চ্যালেঞ্জ
১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম | আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ এএম
পাকিস্তানে ধর্মীয় সেমিনারী বা মাদ্রাসাগুলির নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা এখন দেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানের সরকার এই প্রস্তাবিত বিলটি অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে, যা একদিকে রাজনৈতিক জোটের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।অন্যদিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উদ্বেগেরও কারণ হয়েছে।
চলতি বছর অক্টোবর মাসে, পাকিস্তানের শাসক জোট একটি বিল পাস করে যা ধর্মীয় সেমিনারী নিবন্ধন প্রক্রিয়া সংশোধন করার প্রস্তাব দেয়। এই বিলটি ২৬তম সংশোধনীর সঙ্গে পাস করা হয়েছিল, যা বিচারিক নিয়োগের ওপর সংসদের নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে। তবে রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি এই বিলে "প্রযুক্তিগত আপত্তি" তোলার পর, সরকার এখন এই বিলটি নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। এর ফলে নতুন করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে এবং ধর্মীয় দল জেএইউআইএফ-এর নেতা ফজল-উর-রেহমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
পাকিস্তানে মাদ্রাসাগুলির নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক চলছে। ইতিহাসে মাদ্রাসাগুলি ১৮৬০ সালের সমাজ নিবন্ধন আইনের অধীনে জেলা স্তরে নিবন্ধিত হত, যার ফলে সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিল খুবই সীমিত। কিন্তু ২০০১ সালের ৯/১১ হামলার পর, পাকিস্তান সরকার মাদ্রাসাগুলির উপর আরও কঠোর নজরদারি আরোপ করতে চেয়েছিল। এর কারণ ছিল, অনেক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সদস্য মাদ্রাসাগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে।
২০১৯ সালে, পাকিস্তান সরকার মাদ্রাসাগুলিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসতে শুরু করে। এতে ১৮,০০০ মাদ্রাসা এবং দুই মিলিয়ন ছাত্রের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। কিন্তু পাকিস্তানের ধর্মীয় দল জেএইউআইএফসহ (JUIF)কিছু দল এই ব্যবস্থায় যোগ দিতে অস্বীকার করেছে এবং নিজেদের পুরনো নিবন্ধন পদ্ধতি বজায় রেখেছে।
জেএইউআইএফ দলের প্রস্তাবিত নতুন বিলটি মাদ্রাসাগুলির নিবন্ধন দায়িত্ব জেলা প্রশাসকদের হাতে ফিরিয়ে নিতে চায়,যাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কমানো যায়। এই প্রস্তাবে বলা হচ্ছে যে, একাধিক ক্যাম্পাসযুক্ত মাদ্রাসাগুলি একক প্রতিষ্ঠানের মতো নিবন্ধিত হতে পারে, যা সরকারের হস্তক্ষেপ কমাবে এবং মাদ্রাসাগুলির স্বাধীনতা রক্ষা করবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, মাদ্রাসাগুলির নিবন্ধন প্রক্রিয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা উচিত এবং এর মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সরকারের তথ্য মন্ত্রী বলেছেন, এই বিলে "আইনিক জটিলতা" রয়েছে এবং আরও আলোচনা প্রয়োজন।
ফজল-উর-রেহমানের নেতৃত্বে জেএইউআইএফ দল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে পারে, যা পাকিস্তানের রাজনীতিতে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার যদি তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হয়, তবে তা পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও এই সমস্যায় গভীরভাবে জড়িত। সামরিক বাহিনী চায় যে, মাদ্রাসাগুলির নিবন্ধন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং নিয়ন্ত্রিত হোক, যাতে তাদের তহবিলের উৎস এবং কার্যকলাপের উপর নজর রাখা যায়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের রাজনীতি শুধু সরকারের উদ্বেগের বিষয় নয়, বরং এটি সামরিক বাহিনীর সিদ্ধান্তের উপরও নির্ভরশীল।
পাকিস্তানের ধর্মীয় সেমিনারী নিবন্ধন আইন পরিবর্তন নিয়ে চলমান বিতর্কের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে আরও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ পাকিস্তানের রাজনীতির ভবিষ্যত আরও অস্থির হতে পারে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত
অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে
দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১
নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন
ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস