জাকাত কাদের দেব কখন দেব
১৫ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৭ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম
আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তাদের সম্পদ থেকে সদকা গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদেরকে পবিত্র করবেন এবং পরিশোধিত করবেন এবং আপনি তাদের জন্য দুয়া করবেন। আপনার দুয়া তো তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ’। (সূরা তাওবা : ১০৩)। এই আয়াতে আল্লাহপাক সম্পদ পরিশোধিত হওয়ার কথা বলেছেন। আর হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় যে, জাকাতের মাধ্যমে সম্পদ পরিশোধিত হয়। ধনীদের যে সম্পদ, তার মালিক সে একা নয়। এই সম্পদে গরিবের হক রয়েছে।
আয়হীন গরিব মানুষ, ঋণে জর্জরিত লোক, কারাগারে বন্দির পরিবার, আকস্মিক রোগব্যধিতে আক্রান্ত দুঃখী মানুষ, সন্তানহীন বৃদ্ধ ও অথর্ব বয়স্ক নারী-পুরুষ আপনার দানের অপেক্ষায়। এদের মধ্যে যারা জাকাত পাওয়ার মতো তাদের জাকাত দিন। যারা সাধারণ দান পেলে বিপদমুক্ত হয় তাদের দান-সাদকাহ করুন। পবিত্র রমজানে নফল দান; ফরজের সমান সওয়াব নিয়ে আসবে। আর জাকাতের সওয়াব হবে অন্য সময়ের চেয়ে সত্তর গুণ। নবী করিম (সা.) বলেছেন, এতিম ও বিধবার জন্য যে কষ্ট করে জীবিকা অর্জন করে তার মর্যাদা সারাদিন রোজা রাখা ও সারা রাত নামাজে দাঁড়িয়ে কাটানো লোকের সমান। Ñআল হাদিস।
মহানবী (সা.) আরো বলেছেন, আমি মোহাম্মদ (সা.) ও এতিমের লালনকারী জান্নাতে পাশাপাশি থাকব। (তিনি (সা.) তখন হাতের দু’টি একসাথে মিলিয়ে দেখান, এভাবে একসাথে থাকব।) Ñআল হাদিস। রমজানের দিনগুলো দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। মুমিনদের মনে এখন রমজান বিদায়ের কষ্ট। এসময় নিজের সম্পদের জাকাত হিসেব করে প্রার্থীদের দিয়ে দেয়া উত্তম। যদি দেয়া শেষ না হয়, পরেও তা সারা বছর দেয়া যাবে। কিন্তু রমজানে হিসেব করে নিয়ত করে নিলে পরেও সত্তর গুণ সওয়াব আশা থেকে যায়। অনেকে জাকাতের নামে শাড়ি, লুঙ্গি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। যা কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে জাকাত দিলে, জাকাতের যে উদ্দেশ্য তা কখনোই পূরণ হয় না।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ তারা তাদের জাকাতযোগ্য মালের শতকরা আড়াই ভাগ দ্রুত গরিবদের হস্তান্তর করলে তারা তাদের প্রয়োজন মিটাতে পারে। জাকাতের নিয়ম হলো আরবি মাসের হিসেবে বছরের যে কোনো একটি দিন আপনি নিজের জাকাত হিসেব দিবস হিসেবে নির্ধারণ করবেন। সেদিন আপনার নিজের নগদ টাকা, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বন্ড, শেয়ার ডিবেঞ্চার, স্বর্ণ-রূপা, ব্যবসা পণ্য, বিক্রয়ের উদ্দেশে রাখা জমি-ফ্ল্যাট ইত্যাদি সবকিছুর সেদিনকার বাজার মূল্য হিসেব করে যত হয় তার ৪০ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ ২.৫% জাকাত দিতে হবে। যেমন এক লাখ টাকায় আড়াই হাজার টাকা। ৪০ লাখ টাকার জাকাত এক লাখ টাকা। জাকাতের সর্বনিম্ন নেসাব সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ, সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর যে কোনোটির সমান মূল্যের টাকা অথবা ব্যবসা পণ্য।
নিজের ব্যবহারের বাড়ি, আসবাবপত্র, গাড়ির ওপর জাকাত নেই। উপার্জনের মাধ্যম, শিল্প কারখানার জমি, মেশিনপত্র, অপচয় হয় এমন ইকুইপমেন্ট ইত্যাদিতে জাকাত আসে না। ভাড়া দেয়া বাড়ি, দোকান, ট্রান্সপোর্ট এসবের আয়ের ওপর জাকাত আসবে, কিন্তু মূল সম্পত্তির ওপর জাকাত নেই। যদি ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বাস, ট্রাক, কার ইত্যাদি বিক্রির জন্য রাখে তাহলে ব্যবসা পণ্য হিসেবে এসবের ওপরও জাকাত আসবে। ঋণ, পাওনা টাকা, ফসলি জমি, বাগানবাড়ি ইত্যাদি বিষয়ক মাসয়ালা নিকটস্থ বড় মাদরাসার ফতোয়া বিভাগ বা প্রাজ্ঞ মুফতির নিকট থেকে জেনে নেয়া ওয়াজিব।
জাকাত কেবল নিজের পিতা-মাতা ও স্ত্রী-সন্তানদের দেয়া যায় না। এছাড়া জাকাত নেয়ার উপযুক্ত চাচা-মামা, ভাই-বোন ইত্যাদি সকল আত্মীয়কে দেয়া যায়। জাকাত দেয়ার সময় গ্রাহককে বলে দেয়া মোটেও জরুরি নয়। বরং জাকাত না বলে গিফট, ঈদ উপহার, সৌজন্য বা সহায়তা ইত্যাদি যে কোনো শোভনীয় কথা বলে দিয়ে দেয়াই উত্তম। জাকাত-ফিতরা ছাড়াও সাধারণ অর্থ থেকে আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম, ভদ্র দরিদ্র পরিবার, চেনা-জানা মানুষ, প্রতিবেশি, সহকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারী, কাজের লোক, ড্রাইভার-দারোয়ান প্রভৃতি সার্কেলে ঈদের বাজার খাদ্য ও পোশাক উপহার হিসেবে দেয়া খুবই উত্তম। এতে প্রচুর সওয়াবের পাশাপাশি সামাজিক মিল-মহব্বত দৃঢ় হয়। শারীরিক-মানসিক সুস্থতা, চেহারায় নূর, সুখী জীবন, দীর্ঘায়ু ও অপরিসীম আধ্যাত্মিক তৃপ্তি লাভ করা যায়।
একটি কথা জেনে রাখা দরকার যে, গুনাহের কাজে দান-সহায়তা করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। জাকাত বা সাদকা নিজে বিতরণ করুন কিংবা বিশ্বাসী আস্থাভাজন আলেমগণের মাধ্যমে প্রদান করুন। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থাকে জাকাত-সাদকা দিলে তা আদায় হবে না। মনে রাখবেন, জাকাত দেওয়া যেমন ফরজ, এটি শরীয়ত নির্ধারিত খাতে দেওয়াও ফরজ। পাশাপাশি গ্রাহক যে জাকাতের হকদার সেটি নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে জাকাত দেওয়া ফরজ। ইচ্ছে মতো যার তার হাতে জাকাত তুলে দিলে জাকাতের ফরজ আদায় হবে না।
সুতরাং বিধর্মী লোককে বা ধর্মহীন সংস্থাকে জাকাত সাদকা বণ্টনের দায়িত্ব দিলে, আদায় তো হবেই না বরং ইবাদতের মধ্যে মারাত্মক অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে শক্ত গুনাহ হবে। শির্ক, কুফর বা কবিরা গুনাহের কাজে অর্থ সাহায্য করা হারাম। অতএব, সতর্কতার সাথে জাকাত ও সাধারণ দানের এ সময়টি কাজে লাগান। সময় কিন্তু খুব দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। জানা নেই আরেকটি রমজান আমরা ক’জন পাব।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
মানসিক সুস্থতায় কর্মবিরতি