ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

হজের প্রস্তুতি

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান

২৭ মে ২০২৩, ১১:১৭ পিএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

হজ একটি দৈহিক, আর্থিক ও আত্মিক ইবাদত। এতে যেমন আছে দীর্ঘ সফর ও বিশেষ স্থানে বিশেষ আমলের অপরিহার্যতা তেমনি আছে গভীর রূহানিয়াত ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের বিষয়। আল্লাহর ঘরে হাজিরি মুমিন জীবনের পরম সৌভাগ্য। ওই পুণ্য ভূমিতে পৌঁছে বান্দা তার রবের উদ্দেশ্যে নিজের আবদিয়ত ও দাসত্বের এবং ইশ্ক ও মহব্বতের প্রমাণ দিবে। আল্লাহর শিআর ও নিদর্শনাবলীর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করবে। নিজের জাহের ও বাতেনকে ইবরাহীম খলীলুল্লাহর রঙে রঙিন করার অনুপ্রেরণা অর্জন করবে এবং ওই পবিত্র ভূমির নূর ও নূরানিয়াত দ্বারা নিজেকে আলোকিত করবে, এটাই তো হজের দর্শন ও তত্ত্বকথা।

বায়তুল্লাহ অভিমুখে হজের সফর তো ইবাদতের সফর। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের সফর। তাই আল্লাহর যে বান্দা হজের নিয়ত করে তার অবশ্যইকর্তব্য এই ইবাদতের জন্য পস্তুতি গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে জাগতিক প্রস্তুতির চেয়ে বেশি প্রয়োজন রূহানী প্রস্তুতি। কারণ যে ইবাদত ইখলাস ও তাকওয়ার সাথে এবং সুন্নাহসম্মত পন্থায় আদায় করা হয় তা কবুলিয়তের অতি নিকটবর্তী হয়ে যায়। তাই শুধু হজ নয়, নামাজ-রোযা, জাকাত-সদকাসহ সকল ইবাদতকে জাহের-বাতেন উভয় দিক থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাতের অনুরূপ করার চেষ্টায় নিয়োজিত হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

কিন্তু ধরুন, হজ উপলক্ষে যদি শুধু বৈষয়িক প্রস্তুতির চিন্তা করা হয়, রূহানী বা আত্মিক পস্তুতির কোনো প্রয়োজনই বোধ করা না হয় তাহলে তো প্রচুর অর্থ ও দীর্ঘ সময় ব্যয় করে যেভাবে যাওয়া হয় সেভাবেই ফিরে আসতে হবে। বাস্তব জীবনে হজের কোনো প্রভাব প্রতিক্রিয়াই পরিলক্ষিত হবে না।

এটা ঠিক যে, হজের জন্য পাথেয় সংগ্রহ করা, বৈষয়িক প্রস্তুতি নেয়া সম্পূর্ণ জায়েজ বরং প্রয়োজনীয় পরিমাণ প্রস্তুতি তো আবশ্যক এবং শরীয়তের নির্দেশ। উপরন্তু শরীয়তে ওইসব লোকের নিন্দা করা হয়েছে, যারা তাওয়াক্কুল ও তাকওয়ার নামে হজের সফরে প্রয়োজনীয় পাথেয় না নিয়েই চলে যেত এবং সেখানে মানুষের নিকট ভিক্ষার হাত প্রসারিত করত। তবে বৈষয়িক প্রস্তুতির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভালোভাবে হজের আহকাম ও মাসায়েল শেখা এবং নিজের হৃদয় ও অন্তরকে হজের কল্যাণ ধারণের উপযোগী করা।

কুরআনে কারীমে তাকওয়ার পাথেয় অর্জনের প্রতি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : হজের সফরে তোমরা পাথেয়র ব্যবস্থা কর, বস্তুত তাকওয়াই উৎকৃষ্ট পাথেয়। হে জ্ঞানী লোকেরা তোমরা আমাকে ভয় করে চল। (সূরা বাকারা : ১৯৭)।

স্মরণ রাখা উচিত, হজ হলো পুরো জীবনের আমল। পুরো জীবনে একবারই হজ করা ফরজ। তাহলে যে হজ পুরো জীবনব্যাপী পরিব্যপ্ত তার প্রভাব তো জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকতে হবে। তাহলে হজকে প্রথাগত হজের চেয়ে জীবন্ত হজে পরিণত করার চেষ্টা করা কি অবশ্য কর্তব্য নয়? এই প্রচেষ্টা ও সাধনায় আত্মনিয়োগ করতে পারাটাই তো হজ কবুল হওয়ার অন্যতম বড় আলামত। আর আল্লাহ তায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাতের ওয়াদা তো মকবুল হজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সকল ইবাদতের মতো এই ইবাদতেরও প্রাণ হচ্ছে ইখলাস। অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে হজ করা। লৌকিকতা, সুনাম-সুখ্যাতি, হাজী উপাধী লাভ ইত্যাদি যে কোনো দুনিয়াবী স্বার্থ ও উদ্দেশ্য থেকে এই আমলকে মুক্ত রাখা অতি জরুরি। ইখলাস ছাড়া কোনো আমলই আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন : তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর ইবাদত করতে তার আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্টভাবে। (সূরা বায়্যিনাহ : ৫)।

হজ ও উমরা সম্পর্কে তো আল্লাহ তায়ালা আরো বিশেষ ঘোষণা দিয়েছেন : আর তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ ও উমরা পরিপূর্ণরূপে পালন কর। (সূরা বাকারা : ১৯৬)। জুনদুব আল-আলাকী (রাহ.) হতে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে ব্যক্তি লোকসমাজে প্রচারের উদ্দেশ্যে নেক আমল করে, আল্লাহ তায়ালা তার কর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে কোনো সৎকাজ করে, আল্লাহ তায়ালাও তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা লোকদের মাঝে প্রকাশ করে দিবেন। (সহিহ বুখারী : ৬৪৯৯)।

এজন্য হজের সৌভাগ্যলাভকারীদের উচিত, আল্লাহ তায়ালার নিকট রিয়ামুক্ত হজের জন্য দুয়া করতে থাকা। এ তো স্বয়ং আল্লাহর প্রিয় হাবিব (সা.)-এর আদর্শ ও শিক্ষা। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি পুরাতন বাহন এবং চার দিরহাম বা তার চেয়ে কম মূল্যের একটি পশমী বস্ত্রে হজ করলেন, তখন তিনি এই দুয়া করলেন : হে আল্লাহ! আমার হজকে রিয়া ও খ্যাতির আকাক্সক্ষামুক্ত হজরূপে কবুল করেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯০)। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রাসূলের সুন্নত ও আদর্শ মোতাবেক হজ করার তাওফিক দান করুন।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জালেমের সহযোগী-সমর্থকও জালেম
আল কুরআনে মানব হত্যার শাস্তি-২
আল-কুরআনে মানবহত্যার শাস্তি-১
মুমিন কখনো বেপরোয়া হয় না-২
মুমিন কখনো বেপরোয়া হয় না-১
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত